তড়িঘড়ি: ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরের দিন রাস্তার গর্ত বোজানোর কাজ চলছে। রবিবার, ডক ইস্টার্ন বাউন্ডারি রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
গোটা রাস্তা জুড়ে বিশাল বিশাল গর্ত। সেই গর্তে আবার জমে রয়েছে জল। এমনকি, এলাকায় নেই পর্যাপ্ত আলোও। রাস্তার এমন বিপজ্জনক অবস্থার জন্য ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তার পরে সেই পুরনো দায় ঠেলাঠেলিরই সাক্ষী রইল শহর। অন্য দিকে, এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এই দায় ঠেলাঠেলি নতুন নয়। কোনও দুর্ঘটনার পরে কিছু দিন রাস্তার এমন হাল নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু যা হয় না, তা হল সমস্যার সমাধান। তাই ঘটতে থাকে দুর্ঘটনাও। বেঘোরে চলে যায় মানুষের প্রাণ।
শনিবার রাতে খিদিরপুরের ডক ইস্টার্ন বাউন্ডারি রোডে সার বোঝাই একটি লরি চাপা পড়ে মৃত্যু হয় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ রামপিয়ারি রামের ছেলের। ওই রাস্তার দেখভালের দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের। রাতেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার সংস্থার ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অতীতে একাধিক বার ওই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটলেও কেন রাস্তা সংস্কারের কাজে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি? স্থানীয়দের দাবি, রাস্তার অবস্থা ভাল থাকলে লরিটি উল্টে যেত না।
শনিবার রাতেই কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষর (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বন্দর এলাকার রাস্তাগুলি দ্রুত সংস্কারের বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিয়মিত বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু বন্দর রাস্তা না সারালে আমরা কী করব?’’ যদিও বন্দরের তরফে দাবি করা হয়েছে, শনিবার রাতে যে রাস্তাটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি ২০১৮ সালে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ওই জায়গায় পুরসভার তরফে পানীয় জলের পাইপ বসানো হয়েছিল। সেই খোঁড়াখুড়ির জেরে রাস্তার অবস্থা ফের খারাপ হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, ওই রাস্তার দু’পাশে বেআইনি পার্কিং থাকায় গাড়ির চাপে রাস্তা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
যদিও পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক রবিবার পাল্টা বলেন, ‘‘শনিবার রাতে ডক ইস্টার্ন বাউন্ডারি রোডের মাঝখানে বড় গর্তে ভারী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ওই রাস্তার মাঝখানে পুরসভার জলের পাইপ বসানো হয়নি। বছর দুয়েক আগে রাস্তার একেবারে ধারে, মাটির নীচ দিয়ে ছ’ইঞ্চি ব্যাসের জলের পাইপলাইন বসানো হয়েছিল। কিন্তু ওই জলের পাইপ বসানোর সঙ্গে রাস্তা খারাপ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
শনিবার রাতে খিদিরপুরের বাবুবাজার এলাকার ডক ইস্টার্ন বাউন্ডারি রোডে গর্তে পড়ে একটি সার বোঝাই বড় লরি উল্টে যায় কাউন্সিলর রামপিয়ারি রামের ছেলে, রামকিঙ্কর রামের গাড়ির উপরে। ভারী লরির চাপে পিষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ওই যুবক। স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে ভূকৈলাস মন্দির এলাকার বাসিন্দা বিজয় রায় নামে এক যুবক ডক ইস্টার্ন বাউন্ডারি রোডে স্কুটার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনিও রাস্তার মাঝখানে গর্তে পড়ে স্কুটার-সহ উল্টে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে পিছন থেকে এসে একটি গাড়ি চাপা দেওয়ায় মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবলু করিমের অভিযোগ, ‘‘রাস্তা সারাই হওয়ার কাজ শেষ হতে না হতেই ফের রাস্তার বেআব্রু দশা প্রকট হয়ে পড়েছে। বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। তবুও বন্দর কর্তৃপক্ষ উদাসীন।’’ বন্দরের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় রবিবার বলেন, ‘‘ডক ইস্টার্ন বাউন্ডারি রোডের পুরোটাই উন্নত মানের পেভার ব্লক দিয়ে সংস্কার করা হবে। রাস্তার দু’পাশে বাতিস্তম্ভও বসানো হবে। বন্দরের চেয়ারম্যানের নির্দেশে এ দিনই ডেপুটি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির আধিকারিকেরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওই কমিটি শীঘ্রই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। রাস্তা সারাইয়ের পরেও দ্রুত খারাপ হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সঞ্জয়ের অভিযোগ, ‘‘ডক ইস্টার্ন বাউন্ডারি রোডের বেশির ভাগ অংশ বেআইনি পার্কিংয়ে ভরে গিয়েছে। ভারী ভারী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় রাস্তার দু’পাশের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এর জেরেই রাস্তা সারাই করার পরেও দ্রুত খারাপ হচ্ছে। ডেপুটি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি পুরো বিষয়ের তদন্ত করছে।’’ অভিযোগ, বন্দর এলাকার অন্য অনেক রাস্তার অবস্থাও বেহাল। হাইড রোড, কোল ডক রোড, সোনাপুর রোডের একাংশের অবস্থাও খানাখন্দময়। যদিও বন্দরের তরফে জানানো হয়েছে, সব রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy