ফাইল চিত্র।
কাজের বান আসত কালীপুজোর সময় থেকেই। আর এ বছর উৎসবের মরসুমে সেই কাজই নেই, তো বান! ফলে পেশা বদলে কেউ আনাজ বেচছেন, তো কেউ অনলাইনে খাবার সরবরাহের কাজ নিয়েছেন। করোনা আবহে, সরকারি নির্দেশে জলসায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই কার্যত এখন বেকার জলসার শিল্পীরা।
প্রায় সর্বত্র এ বছর পুজো হচ্ছে নিয়মরক্ষার। মণ্ডপের কাজ কার্যত নেই। যে জন্য ডেকরেটর্স সংস্থার কর্মীরাও বলতে গেলে কর্মহীন। অথচ সারা বছরের বেশির ভাগ টাকাটা উৎসবের এই মরসুমেই আয় করতেন তাঁরা। উৎসবের মরসুম শেষ প্রায়, তবু চড়া বাজারে ভাতের সঙ্গে আনাজ জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন ওঁরা।
শহরের উত্তর প্রান্তের দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় কালীপুজোর জাঁক খুব বেশি। এক সপ্তাহ আগে থেকেই আলোয় ভাসে দমদমের বড় রাস্তা, অলিগলি। ওই এলাকায় ২৭টি বড় পুজো হয়। গত কয়েক বছর ধরে তার কয়েকটি থিম নির্ভর হচ্ছে। আবার কয়েকটি পুজোর বিশেষত্ব ঢাউস মণ্ডপ ও অতিকায় প্রতিমা। কিন্তু এ বছর সব পুজোই হচ্ছে খুব ছোট করে। বাতিল হয়েছে জলসা।
আরও পডুন: আলোর মধ্যেই বসেছে ফুলঝুরি-তুবড়ির পসরা
ছোট করে পুজো সেরে বাজেটের অতিরিক্ত টাকা নিয়ে জলসার যন্ত্রশিল্পী ও ডেকরেটর্স কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ওই এলাকার পুজো কমিটিগুলি। দমদম কালীপুজো সমন্বয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুজোর খরচ বাঁচিয়ে করোনায় কর্মহীনদের পাশে দাঁড়াবে তারা। মোট ৮৭টি কালীপুজো রয়েছে এই কমিটিতে। কোনও কোনও বড় পুজোর বাজেট গত বছর ৫০ লক্ষও ছিল। সমন্বয় কমিটির সভাপতি, দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য প্রবীর পাল বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশের অনেক আগেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্থানীয় বিধায়ক ব্রাত্য বসু পুজো কমিটিগুলির কাছে এমন আবেদন করেছিলেন। সিদ্ধান্ত হয় চাঁদা তোলা হবে না। কেউ স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে চাইলে, তা নেওয়া হবে। যেহেতু মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার থাকছে না, তাই বিজ্ঞাপনী ব্যানার-হোর্ডিংও থাকছে না।”
আরও পডুন: ‘বাজি ফাটানোর সুযোগ থাকবে, এমন অবকাশ দেওয়াই যাবে না’
তা হলে কর্মহীনদের পাশে দাঁড়ানোর টাকা কোথা থেকে আসছে? প্রবীর বলেন, “সব কমিটিরই নিজস্ব তহবিল রয়েছে। তা ছাড়া কিছু সংস্থা পুজোর জন্য অর্থ সাহায্য করছে। আমাদের উদ্যোগের কথা শুনে অনেকেই আর্থিক সাহায্য করেছেন।” পুজো কমিটির সদস্যেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বারই পুজোর সময়ে বা পর পরই জলসা হয়। সেই সূত্রেই কমিটিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন দমদম এলাকার কয়েক জন কণ্ঠ এবং যন্ত্রশিল্পী। পুজো কমিটিগুলি জানাচ্ছে, পরিস্থিতির শিকার হয়ে পরিচিত এক মহিলা কণ্ঠশিল্পী এখন রাস্তায় বসে আনাজ, দুধ আর বিস্কুট বিক্রি করছেন। বাকিরাও বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। আর মণ্ডপ কর্মীদের সমস্যার কথা তো সকলেই জানেন। এঁদের সকলের কথা ভেবেই পুজোর আগে সকলকে অর্থ সাহায্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও একটি বিষয় স্থির হয়েছে, যাঁদের সাহায্য করা হবে, তাঁদের সম্মানার্থে পরিচয় প্রকাশ করা হবে না।
জলসার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনও প্রশ্ন না থাকলেও সেই মহিলা শিল্পীর অবশ্য একটি প্রশ্ন রয়েছে। মঞ্চ বেঁধে জলসা হলে ভিড় হবে নিশ্চয়ই। তা হলে রাজনৈতিক সভা মঞ্চ বেঁধে হচ্ছে কেন? ভিড় তো সেখানেও হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy