নজরে: সুপ্রিম কোর্টে তখন চলছে আর জি কর সংক্রান্ত মামলার শুনানি। তাতেই চোখ ওই হাসপাতালের ডাক্তারদের। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
আন্দোলনের চাপেই কি অবশেষে টনক নড়ল কর্তৃপক্ষের?
দিন তিনেক আগে রোগী-মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ডের মধ্যে ঢুকে চিকিৎসক ও নার্সদের মারধরের প্রতিবাদে পূর্ণ কর্মবিরতি চালু করেছেন কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তার পর থেকেই নিরাপত্তার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ করতে শুরু করেছেন ওই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিভাগে প্রবেশে কড়াকড়ি থেকে শুরু করে হাসপাতাল চত্বরে গাড়ির প্রবেশে নির্দিষ্ট নিয়ম, প্রতিটি বিভাগ ও হস্টেলে ঢুকতে রেজিস্টারে নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করা, পুলিশকর্মীদের টহলদারি-সহ একাধিক বিষয়ে সোমবার সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তৃপক্ষ। তার আগে হাসপাতালের সুপার সুজয় মিস্ত্রি সেখানে সম্প্রতি চালু হওয়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গোটা চত্বর ও সমস্ত বিভাগ ঘুরে দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।
কিন্তু কোনও মৌখিক আশ্বাস মানতে নারাজ জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সাগর দত্ত মেডিক্যালের আবাসিক চিকিৎসকদের সংগঠনের সভাপতি মনোজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখে বলা কোনও কথা মানতে পারছি না। নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে, তা লিখিত ভাবে আমাদের জানাতে হবে। কারণ, সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে এবং তার দীর্ঘসূত্রতা কতটা, সেটাও আমরা জানতে চাই।’’ একই সুর অন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের গলাতেও। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলি লিখিত ভাবে না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণ কর্মবিরতিতে তাঁরা অনড় থাকবেন বলে জানান। এ দিকে, সাগর দত্তে জুনিয়র চিকিৎসক ও নার্সদের মারধরের ঘটনায় রোগীর আরও দুই পরিজনকে ধরেছে পুলিশ। ঘটনায় মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করা হল।
সোমবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অবস্থান-মঞ্চ থেকে আচমকা আটটি পাখা গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন ডেকরেটর্সের কর্মীরা। যার প্রতিবাদে ওই গাড়ির সামনে ও পিছনে রাস্তায় বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কিছু পরে সেখানে আসেন ওই পাখাগুলির মালিক সাদ্দাম হোসেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ পাখা নিয়ে যেতে চাপ দেয়নি। অন্য জায়গায় ভাড়া ছিল বলে আমার ভাই পাখা নিতে এসেছিল। তবে, কাউকে না জানিয়ে খুলে নেওয়ায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’’ পরে চারটি পাখা অবস্থান-মঞ্চে রেখে যান তিনি।
অন্য দিকে, হাসপাতালের কোন কোন জায়গায় বিশেষ নজর দিতে হবে ফাঁড়ির পুলিশকর্মীদের, এ দিন যৌথ পরিদর্শনের সময়ে তা স্পষ্ট করেছেন সুপার। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ছাড়া জরুরি বিভাগে কোনও কর্মীও প্রবেশ করতে পারবেন না। ভর্তি হতে আসা রোগীর সঙ্গে এক জন জরুরি বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন। রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে দু’জন ঢুকতে পারবেন।
অভিযোগ ছিল, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে যেখানে-সেখানে বহিরাগতদের গাড়ি রাখা থাকে। এমনকি, রাতে সেখানে বাইক ও গাড়ি চালানোর তালিম নেন বহিরাগতেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, পুলিশকে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট পার্কিং স্টিকার ছাড়া কোনও গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে রাখা যাবে না। চিকিৎসকদের গাড়ির জন্য আলাদা পার্কিং স্টিকার দেওয়া হবে। ময়না তদন্তের পরে দেহ নিতে আসা কত জন লোক মর্গের সামনে যেতে পারবেন, তা-ও নির্দিষ্ট করার পরিকল্পনা হচ্ছে। আরও অভিযোগ ছিল, সন্ধ্যা নামলেই গোটা চত্বর অরক্ষিত হয়ে পড়ে। বি টি রোডের উপরে মূল দরজা দিয়ে ঢুকে জলাশয়ের দু’পাশ দিয়ে হাসপাতালের ভবনের সামনে আসা যায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার থেকে বিকেল ৫টার পরে ওই ভবনের সামনে গার্ডরেল দিয়ে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করবে পুলিশ। যে কোনও গাড়ি ও লোকজনের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে তবেই ঢুকতে দেওয়া হবে। ক্যান্টিনেও ঢোকার সময়ে রেজিস্টারে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। খাবার সরবরাহকারী সংস্থার কোনও কর্মী সরাসরি সেখানে ঢুকতে পারবেন না।
প্রতিটি হস্টেলের প্রবেশপথে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি রেজিস্টার খাতা চালু করতে হবে। চিকিৎসক থেকে কর্মীদের জন্য পরিচয়পত্র তৈরির কথাও জানান কর্তৃপক্ষ। নার্সিং হস্টেলের সামনে পুলিশি টহলদারি, হাসপাতাল চত্বরে আরও আলো লাগানো, সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৪০টি সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। আরও ৩২০টি ক্যামেরা লাগানো হবে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। ১০ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy