Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
JU Student Death

রাজভবনে যাদবপুর-বৈঠক নিয়েও বিতর্ক, লালবাজারে রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসাবাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলল অশান্তি

বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে মামলা করে তৃণমূল। বিকেলে লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে। রাজভবনে অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন আচার্য বোস।

Graphical representation

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৩ ২২:৫৮
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বুধবার আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বাকিরা, অর্থাৎ জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) , পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি (চতুর্থ বর্ষ, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) এখনও পড়াশোনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর আগে এই ঘটনায় আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সৌরভ চৌধুরী প্রাক্তনী। কিন্তু মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া। মনোতোষ, দীপশেখর এবং সৌরভকে ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। বুধবার ধৃত ছ’জনকে আদালত ২৮ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবী শুভাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, প্রথম তিন জনকে জেরার মাধ্যমেই এই ধৃতদের নাম উঠে এসেছে। তাঁরা যে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তার প্রমাণও মিলেছে বলে দাবি ওই আইনজীবীর। পুলিশ তাঁদের ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছিল। কিন্তু আদালত ১২ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছে।

বুধবার সকালে কলকাতা হাই কোর্টে যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে মামলা করে তৃণমূল। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত আলো এবং সিসি ক্যামেরার আবেদন জানানো হয়েছে ওই মামলায়। এ ছাড়া, তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার বগুলায় মৃত ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিল। মৃতের পরিবারের সঙ্গে ওই দলের সদস্যেরা কথা বলেন। দোষীদের শাস্তির আশ্বাসও দেন। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং ডিন অফ স্টুডেন্টসকে তলব করেছিল লালবাজার। ডিন হাজিরা দেননি। তাঁর যুক্তি, পড়ুয়াদের একাংশের ঘেরাওয়ের কারণে হাজিরা দিতে পারেননি তিনি। তবে রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ ছাড়া, বিকেলে রাজভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল।

প্রাথমিক তদন্তের পর যাদবপুরের ঘটনার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ঘটনার দিন রাত ৯টা থেকে ১১টা ৪৫-এর মধ্যে যা ঘটার ঘটেছিল। তদন্তে উঠে এসেছে, ওই দিন রাত ৯টার পর হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই পড়ুয়াকে। সেখানে চিঠি লেখার কাজ হয়। তার পর শুরু হয় ঘরে ঘরে গিয়ে ‘ইন্ট্রো’ বা আলাপচারিতা। ওই সময়েই পড়ুয়াকে বিবস্ত্র করানো হয় বলে দাবি পুলিশের। তবে তিনি নিজেই পোশাক খুলেছিলেন কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, পড়ে যাওয়ার মিনিট ১৫ আগে বিবস্ত্র হয়েছিলেন ওই ছাত্র। ঘটনার দিন রাতে ডিনের ফোন পেয়ে হস্টেলের সুপার এসেছিলেন। তবে তিনি নাকি নীচ থেকে ঘুরে চলে যান।

মৃত ছাত্রের বাড়িতে তৃণমূল

নদিয়ার বগুলায় মৃত ছাত্রের বাড়িতে বুধবার গিয়েছিল তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। ওই দলে ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। তাঁরা ওই ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দেখছেন। দোষীরা কেউ ছাড় পাবেন না। পাশাপাশি, ওই পরিবারের ছোট ছেলের পড়াশোনার বিষয়টিও তাঁরা দেখবেন বলেও আশ্বাস দেন ব্রাত্য।

হাই কোর্টে তৃণমূল

যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছে তৃণমূল। ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি সুদীপ রাহার করা ওই মামলা নিয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলায় মূলত তিনটি আবেদন জানানো হয়েছে। এক, ইউজিসির নিয়ম মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। দুই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র তৈরি করতে হবে, বাইরে থেকে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে নাম নথিভুক্ত করে ঢুকতে হবে। আগামী সোমবার এই মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা।

হস্টেলের নিরাপত্তারক্ষীর বক্তব্য

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এক নিরাপত্তারক্ষী বুধবার সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, ওই ছাত্র তিন তলা থেকে পড়ে যাওয়ার পর একদল আবাসিক তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর ছাত্রদের পাশাপাশি হস্টেল সুপার দ্বৈপায়ন দত্ত তাঁকে হস্টেলের গেট বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, বাইরে থেকে কেউ যেন হস্টেলে ঢুকতে না পারে। তাঁর আরও দাবি, পড়ে যাওয়া ওই ছাত্রকে নিয়ে ট্যাক্সি বেরিয়ে যাওয়ার পর কলকাতা পুলিশের দু’জন এসেছিলেন। তাঁরা গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার পর বেরিয়েও যান। ঘটনাস্থলে যাননি। পুলিশের আরও কয়েক জন পরে হস্টেলের সামনে আসেন। কিন্তু তাঁরা ভিতরে ঢুকতে চাননি।

লালবাজারে প্রশ্নের মুখে রেজিস্ট্রার

ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বুধবার বিকেলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং হস্টেল সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁকে ২০টিরও বেশি প্রশ্ন করা হয়। বেশির ভাগ প্রশ্নেরই জবাব দিতে গিয়ে স্নেহমঞ্জু জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়ই সে সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন। স্নেহমঞ্জুর সঙ্গে রজতকেও বুধবার ডেকেছিল পুলিশ। কিন্তু তিনি লালবাজারে যাননি। ডিনের তরফে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের একাংশ তাঁকে ‘ঘেরাও’ করে রেখেছেন বলেই তিনি তলবে সাড়া দিতে পারলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়কেও লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি

যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে বুধবারও দিনভর অশান্তি চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। ছাত্রমৃত্যুর বিচার চেয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন পড়ুয়াদের একাংশ। অধ্যাপকদের একাংশকেও মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। প্রতিবাদে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে সারাদিনই উত্তপ্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।

যাদবপুরে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন

যাদবপুরে এক পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছয় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল। কমিশনের এসপি শান্তি দাস কথা বলেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা সম্পর্কে ওঁদের বক্তব্য শুনেছি। এ বার আমরা নিজেদের মতো করে কাজ করব। আরও বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলার পর রিপোর্ট তৈরি করব।’’ একই সঙ্গে শান্তি জানিয়েছেন, তাঁরা যে যে তথ্য চেয়েছিলেন, তার সবগুলি পাওয়া যায়নি।

রাজভবনে আচার্যের বৈঠক

রাজভবনে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ওই বৈঠক শুরু হয়। বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরা আচার্যের ওই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন সহ-উপাচার্য। বেশ কিছু ক্ষণ তাঁদের সঙ্গে কথা হয় রাজ্যপালের।

বৈঠকে ‘ব্রাত্য’ ইংরেজি বিভাগের প্রধান

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মনোজিৎ মণ্ডলকে আচার্যের বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। রাজভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে মনোজিৎ অভিযোগ করেন, ‘তৃণমূলপন্থী’ হওয়ায় তাঁকে বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যপাল তাঁকে ভয় পাচ্ছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy