যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
৯ অগস্ট, বুধবার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে নীচে পড়ে যান বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের (স্নাতক) এক ছাত্র। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। কী ভাবে বারান্দা থেকে পড়ে গেলেন ওই ছাত্র? কেনই বা তাঁর শরীরে কোনও পোশাক ছিল না? তিনি কী ধরনের র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন? ঘটনার পর থেকে নানা প্রশ্নে উত্তাল যাদবপুর। সে দিন রাত ৯টা থেকে ১১টা ৪৫-এর মধ্যে কী কী ঘটেছিল, প্রাথমিক তদন্তের পর তার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেলের এ২ ব্লকের ১০৪ নম্বর ঘরে ঘটনার সূত্রপাত। রাত ৯টার পর প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে চার তলায় ১০৪ নম্বর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী এবং সপ্তক কামিল্যাও। দু’জনই বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে। পুলিশের দাবি, এই সময়েই চিঠি লেখানোর কাজটি সম্পন্ন হয়। চিঠি লেখানোর পরিকল্পনাটি ছিল সৌরভ এবং সপ্তকের।
চিঠি লেখা হয়ে গেলে ওই ছাত্রকে আবার নীচে নামানো হয়। এর পর শুরু হয় ‘ইন্ট্রো’ বা পরিচয় পর্ব। হস্টেলের ঘরে ঘরে গিয়ে নবাগতদের ‘ইন্ট্রো’ নেওয়ার রীতি চালু আছে যাদবপুরে। সেই প্রক্রিয়াই চলছিল বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের প্রাথমিক অনুমান, এই সময়েই ছাত্রটিকে বিবস্ত্র করানো হয়েছিল। ছাত্র নিজেই পোশাক খুলেছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাত ১০টা ৫ নাগাদ ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে হস্টেলের এক পড়ুয়া ফোন করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। রজত দাবি করেছেন, তিনি ওই ফোন পাওয়ার পর হস্টেলের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সুপার হস্টেলের নীচ থেকে ঘুরে চলে যান। এই সময়ের মধ্যে আর এক ধৃত পড়ুয়া মহম্মদ আরিফের ফোন থেকে ওই ছাত্রের বাড়িতে ফোন করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। রাত ১১টা ৪৫ নাগাদ বারান্দা থেকে নীচে পড়েন ওই ছাত্র।
এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে যা যা উঠে এসেছে, ধৃত এবং অন্য পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ যা জানতে পেরেছে, সে সব কিছুর যোগসূত্র মিলিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে আগামী দিনে তদন্ত আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
যাদবপুরকাণ্ডে প্রথমে সৌরভকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর আরও দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার এই ঘটনায় আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সপ্তক, আরিফ ছাড়াও ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন আসিফ আফজল আনসারি, অঙ্কন সরকার, অসিত সর্দার এবং সুমন নস্কর। এই ছ’জনকে আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy