বন্ধুর হাত ধরে মিিছলে অশোক নস্কর (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
‘‘কিছু শুনে আপনারা বলেন, কানে বাজছে ব্যাপারটা। আমাদের মনে হয়, যেন বজ্রপাত হচ্ছে। আমাদের তো কানটাই সব!’’ সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনো মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো বললেন অশোক নস্কর। ছ’মাস বয়সেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারানো ওই যুবক এর পরে বলেন, ‘‘ঐশীদের চিৎকার শুনছিলাম টিভিতে। দেখতে না পেলেও হামলাকারীরা কতটা হিংস্র ছিল তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি। আমার মতো এক দৃষ্টিহীন ছাত্রকেও তো ওরা মেরেছে।’’
গত রবিবার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) হস্টেলে ঢুকে হামলার ঘটনা নিয়ে এখন উত্তাল দেশ। এর মধ্যেই সামনে এসেছে যে, হামলাকারীরা ছাড়েনি সেখানকার এক দৃষ্টিহীন পড়ুয়াকেও। সূর্য প্রকাশ নামে সেই ছাত্র জেএনইউ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে এখন গবেষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অশোক বললেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় নিজের হস্টেলের ঘরেই বসে পড়াশোনা করছিলেন ওই ছাত্র। শুনলাম, হঠাৎ ঘরে ঢুকে তাঁকে ধরে বেধড়ক মারতে শুরু করে কয়েক জন। দৃষ্টিহীনতার কথা বলে তিনি বারবার ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও কথা শোনেনি হামলাকারীরা। প্রথমে নাকি তারা ভাবছিল, ওই ছাত্র মিথ্যে বলছেন। পরে সত্যিই দৃষ্টিহীন বুঝতে পেরে ছেড়েছে। এর পরে আমার সঙ্গেও কি এমন হতে পারে? এ সব ভেবেই আর বাড়িতে বসে থাকা গেল না!’’
দুর্গাপুরের বাসিন্দা অশোকের বাবা শঙ্কর নস্কর দিনমজুরের কাজ করেন। মা গৃহবধূ। ছ’মাস বয়সে পোলিয়োর টিকা নেওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে ডান চোখের দৃষ্টি কমে আসতে শুরু করে অশোকের। কয়েক দিনের মধ্যেই একই অবস্থা হয় বাঁ চোখেরও। এর পরে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন তিনি। তবে দুই দিদি এবং এক বোনের সংসারে শত টানাটানির মধ্যেও পড়াশোনা ছেড়ে দেননি অশোক। এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করছেন তিনি। তবে হস্টেলের ঘর পেয়ে তা রাখতে পারেননি। অশোক বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকতে টাকা লাগে না ঠিকই, কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার খরচ আছে। যেটুকু বৃত্তি পাই, তা দিয়ে পড়ার খরচ চালিয়ে মাসে অন্তত ১৫০০ টাকা করে খাওয়ার জন্য খরচ করার উপায় থাকে না।’’
তাই হস্টেল ছেড়ে বাড়ি থেকেই রোজ যাতায়াতের পথ বেছে নিয়েছেন অশোক। সকালের ডায়মন্ড হারবার লোকালে কলকাতায় আসেন। ক্লাস শেষে ফেরেন ট্রেনেই। বছর আঠাশের ওই যুবক বলেন, ‘‘মিছিলে আসার আরও একটা কারণ এটা। চাকরির খুব দরকার বুঝলেন। পেটে ভাত জুটবে কী করে তা নিয়ে ওদের কোনও কথা নেই, শুধু জাত নিয়ে আলোচনা করছে!’’ তবে এত সবের মধ্যেই সর্বক্ষণ তাঁর পাশে থাকেন বন্ধুরা। কোনও দিন শহরে থেকে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে অশোকের জায়গা হয়ে যায় বন্ধুদের হস্টেলের ঘরেই।
মিছিলেও যেমন গোটাটাই অশোকের হাত ধরে হাঁটলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পড়ুয়া রজত হালদার। স্লোগানে গলা মেলালেন দু’জনে এক সঙ্গে। অশোক এক সময়ে বললেন, ‘‘জোরে গলা মেলাক সকলে। আরও জোরে। দরকার পড়লে আজ আমি স্লোগানও দিতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy