জেরি জুডাহ্
কলকাতা থেকে তাঁকে টেনে বার করা যেতে পারে, কিন্তু কলকাতাকে তাঁর ভিতর থেকে বার করা মুশকিল।
হাসতে হাসতে এ কথা বলছিলেন বহু বছর বাদে এ শহরে ফিরে আসা এক ভূমিপুত্র। কলকাতার বিলুপ্তপ্রায় ইহুদি সমাজের সন্তান জেরি জুডাহ্। অধুনা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই ইনস্টলেশন শিল্পীর সৌজন্যে কলকাতা পেতে পারে নতুন একটি ভাস্কর্য। যার মধ্যে কেউ হয়তো খুঁজে পাবেন সাবেক ‘সিটি অব প্যালেস’-এর গরিমার ছোঁয়াচ।
কয়েক শতক ধরে কলকাতাবাসী বাগদাদি ইহুদি পরিবারের সন্তান জেরির জীবনের প্রথম দশ বছর কেটেছিল এ শহরেই। গত শতকের ৬০-এর দশকে কলকাতা ছেড়ে বিলেতে থিতু হলেও তাঁর শিল্পী সত্তায় মিশে এ শহরের মন্দির-প্রাসাদ-সিনাগগের স্থাপত্যের ছোঁয়াচ। বড়বাজার এলাকার পুরনো সিনাগগ থেকে শুরু করে এ শহরের বহু প্রাচীন স্মারকেই মিশে আছে ইহুদি স্থপতিশিল্পীদের হাতযশ। জেরির সাধ মিটলে সেই ইতিহাসেই জুড়বে একটি উজ্জ্বল সংযোজন।
কলকাতার সৌন্দর্যায়নে বিশেষ ভাবে উৎসুক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনার সঙ্গে খাপ খেয়ে যাচ্ছে এই স্থাপত্যের পরিকল্পনা। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স-এর মধ্যস্থতায় ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে। নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব তথা হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বেঙ্গল চেম্বারের সভাপতি সুতনু ঘোষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। জেরির সঙ্গে দেখা হলেই সব ঠিক হবে।’’ এ শহরের সঙ্গে যুক্ত দেশবিদেশের কৃতী ইহুদিদেরও এই উদ্যোগটির পৃষ্ঠপোষকতায় আগ্রহ রয়েছে। কাল, বৃহস্পতিবার দেবাশিসবাবুর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা জেরির।
তার আগে মঙ্গলবারই আগরপাড়ার চটকল এলাকায় তাঁর শৈশবের স্মৃতিজড়িত অঞ্চল ঘুরে দেখেন সস্ত্রীক জেরি। জেরির বাবা ও কাকা সেখানেই কাজ করতেন। তিনি পড়তে যেতেন পার্ক স্ট্রিটের জিউয়িশ গার্লস স্কুলে। বিশ্বের তাবড় মিউজিয়াম, প্রথম সারির সব গাড়ি কোম্পানি বা নামজাদা হলিউডি তারকাদের জন্য বিভিন্ন ইনস্টলেশন শিল্পের প্রকল্পে জড়িত জেরির ভাবনায় মাঝেমধ্যেই হানা দিয়েছে কলকাতার অভিঘাত। ৬৭ ছুঁই ছুঁই সৌম্য প্রবীণ বলছিলেন, ‘‘তিন বছর এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ডাকে কলকাতায় আসার সুযোগ হয়েছিল। তখন দুর্গাপুজোর মণ্ডপ দেখে মুগ্ধ হই।’’ পুজোমণ্ডপ, রিকশা নিয়ে জেরির ইনস্টলেশনের একটি কাজ রয়েছে জার্মানির কোলনে।
নতুন প্রকল্পটিতে অবশ্য কলকাতার মুছে আসা ইহুদি সমাজের স্মৃতি জিইয়ে রাখতে চান তিনি। জনা কুড়ি বুড়োবুড়ি ছাড়া ইহুদিদের কেউ আর এখানে নেই বললেই চলে। তবে কিছু পুরনো স্থাপত্য বা নিউ মার্কেটের কেকের দোকান নাহুমে অটুট কলকাতার ইহুদি সৌধ। জেরি বলছেন, ‘‘যা জায়গা পাব, সেই মতো গড়ে তুলব আমার ভাস্কর্য। আমার ছোটবেলার কলকাতার কসমোপলিটান মেজাজটার কথা তা হয়তো মনে করিয়ে দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy