চুরির খবরে মন্দিরের সামনে ভিড় স্থানীয়দের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
তিনশো বছরের পুরনো মন্দির থেকে গয়না চুরির ঘটনায় উত্তেজনা ছ়়ড়াল খিদিরপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, খিদিরপুর মোড়ে কবিতীর্থ সরণিতে পঞ্চানন মন্দিরে শনিবার রাতে বিগ্রহের গলা থেকে ১৯টি রুপো ও দু’টি সোনার চেন চুরি হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার সকাল ছ’টা নাগাদ মন্দিরের দরজা খুলে সেবায়েত অশোক চক্রবর্তী দেখেন, বিগ্রহের বস্ত্র পাশে পড়ে। উধাও সোনা ও রুপোর হার। মন্দির থেকে চুরির খবর চাউর হতেই এলাকায় ভিড়় জমে যায়। এলাকায় বারবার চুরির ঘটনা ঘটতে থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মন্দিরের ছাদ ফুটো করে যে কায়দায় চুরি করতে এসেছিল দুষ্কৃতীরা, তাতে হতবাক তদন্তকারীরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, একই কায়দায় মাস পাঁচেক আগে মন্দিরের উল্টো দিকে খিদিরপুর বাজারের একাধিক দোকানের ছাদ ফুটো করে চুরি হয়েছিল। গত জুলাই মাসে দোকানের ছাদ ফুটো করে পরপর চুরির ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা বাজার বন্ধ রাখা হয়েছিল ব্যবসায়ী সমিতির তরফে। কিন্তু সেই সব চুরির ঘটনার কিনারা হয়নি। ফের পাঁচ মাসের মধ্যে একই পদ্ধতিতে ওই এলাকারই প্রাচীন মন্দিরে চুরির ঘটনায় শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা।
রবিবার মন্দিরের ছাদে উঠে দেখা যায়, প্রায় চল্লিশ ইঞ্চি পুরু ওই ছাদের এক কোণে তিরিশ ইঞ্চি গর্ত। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা ছাদ ফুটো করে মন্দিরে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে দেরি হয়ে যাবে ভেবে ঘুলঘুলি দিয়ে লম্বা আঁকশি ঢুকিয়ে বিগ্রহের সোনার হার চুরি করে পালায়। রবিবার সকালে দেখা গেল, মন্দিরের ছাদের এক পাশে পড়ে রয়েছে লম্বা আঁকশিটি।
তবে এ দিন মন্দিরের পুরোহিত, নিরাপত্তরক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছুটা ধন্ধে পুলিশ। শনিবার রাতে ওই মন্দিরের সামনের চাতালেই ঘুমিয়েছিলেন পাঁচুগোপাল দাস। পাঁচুবাবুর কথায়, ‘‘শনিবার রাত বারোটা নাগাদ ঘুমোতে যাই। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ উঠে মন্দিরের দরজার তালা খুলে পুজো করি।’’ যদিও সেবাইত অশোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘রবিবার সকাল ছ’টা নাগাদ মন্দিরে ঢুকেই দেখি, বিগ্রহের গলা থেকে উধাও একাধিক গয়না। তখনই পুলিশকে খবর দিই।’’ সে ক্ষেত্রে কখন এবং কী ভাবে এই চুরি হল, তা নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিন ডি সি (বন্দর) ওয়াকার রেজা, ওয়াটগঞ্জ থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দারা মন্দিরের ছাদে উঠে দীর্ঘক্ষণ ছাদের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। পুলিশের অনুমান, মন্দিরের পিছনে রয়্যাল মার্কেট দিয়ে ঢুকে মন্দিরের ছাদে উঠেছিল দুষ্কৃতীরা। ‘খিদিরপুর বাবা পঞ্চানন্দ টেম্পল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র কার্যকরী সম্পাদক অরুণকুমার সিংহের দাবি, ‘‘এই ঘটনায় মন্দিরেরই কেউ জড়িত কি না, পুলিশ তার তদন্ত করুক।’’ অরফ্যানগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌর সাহার অভিযোগ, ‘‘গত জুলাই মাসে দোকানের ছাদ ফুটো করে পরপর চুরি হয়েছিল। সেই সব ঘটনার কিনারা আজ পর্যন্ত হয়নি। ফের মন্দিরের চুরি হল। চুরির কিনারা না হলে আমরা শীঘ্রই বাজার বন্ধের ডাক দেব।’’ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য প্রদীপ রায়ের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চানন মন্দিরে এই প্রথম চুরি হল। আমরা বেশ আতঙ্কে রয়েছি।’’ ডি সি (বন্দর) ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy