পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এ বার প্রকাশ্যে আসা একটি চিঠি ঘিরে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এ বার প্রকাশ্যে আসা একটি চিঠি ঘিরে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সেটির সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। অভিযোগ, ওই পড়ুয়াকে দিয়ে সেই চিঠিটি জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই চিঠির হাতের লেখা এবং নীচের সইটি মৃত পড়ুয়ার করা কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।
শনিবার তদন্তকারীদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের যে ঘরে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ‘অতিথি’ হিসাবে থাকছিলেন, সেই ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। প্রকাশ্যে আসা চিঠিটি সেই ডায়েরির পাতায় লেখা হয়েছে বলে দাবি। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছে। সেটি জোর করে লেখানো হয়েছিল।’’ পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী গ্রেফতার হন। এর পর রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁদের। সরকারি আইনজীবীর দাবি, চিঠিটি মৃত পড়ুয়াকে দিয়ে জোর করে লিখিয়ে নেওয়ার নেপথ্যে মনোতোষ এবং দীপশেখরের ভূমিকা থাকতে পারে।
চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, সেটি বিভাগীয় সিনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিন অফ স্টুডেন্টস’কে লেখা হয়েছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, বিভাগীয় সিনিয়রেরা হস্টেলের পরিবেশ নিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। চিঠিতে এক জনের নামও নেওয়া হয়েছে। তিনিই প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে ‘ভয় দেখানোর’ চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। ডিনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার আর্জিও চিঠিতে জানানো হয়েছে।
যদিও মৃত পড়ুয়ার পরিবারের দাবি, এই চিঠির হাতের লেখা তার নয়। মৃত পড়ুয়ার মামা স্বরূপ কুণ্ডু আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘চিঠিটা আমি দেখেছি। ওই হাতের লেখা যে ওর (মৃত পড়ুয়ার) নয়, এ ব্যাপারে আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। আমাদের দাবি, হস্টেলে যারা থাকে, সকলের হাতের লেখা পরীক্ষা করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, চিঠিটা কে বা কারা লিখেছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের মনে হয়, তদন্তকে প্রভাবিত করার জন্যই এই চিঠি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে চিঠি ঘিরে। চিঠিতে তারিখ রয়েছে ১০ অগস্ট অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার। ঘটনাচক্রে, ৯ অগস্ট রাতে হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া। এর পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পর বৃহস্পতিবার হাসপাতালেই মারা যান তিনি। তা হলে চিঠি কবে লেখা হল, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। চিঠিটির শেষে মৃত পড়ুয়ার নামে দু’টি সই কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। শুধু তা-ই নয়, চিঠিটি যে হেতু ডিনের উদ্দেশে লেখা, তা হলে সেটি ডায়েরির পাতায় কেন লেখা হল? কেন সাদা এ৪ কাগজে লেখা হল না? এই প্রশ্নেরও উত্তরের খোঁজে তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেল থেকে ডায়েরি উদ্ধার হওয়ার পর শনিবার নদিয়ার রানাঘাটে মৃত পড়ুয়ার মামাবাড়ি গিয়েছিল যাদবপুর থানা এবং কলকাতা পুলিশের চার সদস্যের একটি দল। পরিবার সূত্রে খবর, প্রায় ঘণ্টাখানেক পড়ুয়ার মামার সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাঁর বয়ানও রেকর্ড করা হয়। পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, মামার বাড়ি থেকে এমন দু’টি খাতাও তদন্তকারীরা সংগ্রহ করেছেন, যে খাতায় পড়ুয়ার হাতের লেখা রয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় চিঠির পাশাপাশি প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার একাধিক সইও মিলেছে। পড়ুয়ার হাতের লেখা এবং সই রয়েছে, এমন বেশ কিছু খাতা, ডায়েরি এবং নথি ভাল করে খতিয়ে দেখে জানার চেষ্টা চলছে, চিঠিটির হাতের লেখা এবং সই কার? হাতের লেখা বিশারদকে দিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। যদি তা পড়ুয়ারই হয়ে থাকে, তা হলে তাঁকে ওই চিঠি লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না, তা-ও ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে। যদি সত্যিই তাকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানো হয়ে থাকে, তা হলে তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? এই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy