Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

নারাজ বিমা সংস্থা, রোগীর ঘাড়েই করোনা-সরঞ্জামের খরচ

অতিমারি পরিস্থিতিতে এই অতিরিক্ত খরচের বোঝা কেন শুধু রোগীর উপরেই বর্তাবে, এখন সেই প্রশ্ন তুলছেন ক্ষুব্ধ ওই ব্যক্তি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

কোভিড পরিস্থিতিতেই গলব্লাডারের অস্ত্রোপচারের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কালিকাপুরের এক বাসিন্দা। দিন তিনেক পরে তিনি জানতে পারেন, কয়েক লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা করানো থাকলেও হাসপাতাল-বাসের মোট খরচের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তাঁকেই দিতে হবে! কারণ, অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ‘নন-মেডিক্যাল’ সামগ্রীর সঙ্গে পিপিই-সহ একাধিক করোনা-সরঞ্জামের দাম মেটাবে না সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা।

অতিমারি পরিস্থিতিতে এই অতিরিক্ত খরচের বোঝা কেন শুধু রোগীর উপরেই বর্তাবে, এখন সেই প্রশ্ন তুলছেন ক্ষুব্ধ ওই ব্যক্তি।

শ্বাসকষ্টে ভোগা বৃদ্ধা মাকে মে মাসে দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়েছিলেন মডেল মাধবীলতা মিত্র। নিশ্চিন্ত ছিলেন, বিমা থাকায় ‘ক্যাশলেস’ পরিষেবা পাবেন। দিন দুই পরে মাঝরাতে মাধবীলতাকে জানানো হয়, তাঁর মা কোভিড পজ়িটিভ। অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে। অত রাতে বিমা সংস্থার কাউকে না-পেয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচের পুরোটা মেটাতে হয় মাধবীলতাকেই। তিনি বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্য বিমা করিয়েও যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হতে পারে, সেই রাতে হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম।’’

কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিমার চাহিদা বাড়লেও বা বড় অঙ্কের বিমা করানো থাকলেও আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে এমন বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন অনেকেই। প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান প্রিমিয়াম মেটালেও বিপদের সময়ে রোগী আর্থিক ভাবে আদৌ কতটা সুরক্ষিত— সেই প্রশ্ন উঠছে। পরিজনেদের আরও প্রশ্ন, অতিমারি সংক্রান্ত সুরক্ষার নামে হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত পিপিই, পেশেন্ট সেফটি কিট, ফেস শিল্ড, মাস্ক, গ্লাভসের মতো করোনা-সরঞ্জামের দাম কেন শুধু রোগীর থেকেই আদায় করা হবে?

এত দিন হাসপাতালে এক বার ব্যবহৃত সামগ্রীর (যেমন তুলো, ব্যান্ডেজ, গজ, ন্যাপকিন ইত্যাদি) খরচ দিত না বিমা সংস্থাগুলি। সমস্যা হল, কোভিড পরিস্থিতিতে এই সব ‘নন-মেডিক্যাল’ সামগ্রীর তালিকায় ঢুকেছে করোনা-সুরক্ষার জিনিসও। বিমা সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (আইআরডিএআই) ইতিমধ্যেই সংস্থাগুলিকে কোভিড চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের নির্দেশ দিয়েছে। তবু করোনা-সামগ্রীর কারণে ক্রমেই বাড়ছে ‘নন-মেডিক্যাল’ জিনিস বা ‘কনজিউমেব্‌লস’-এর খরচ, যা দিতে রাজি হচ্ছে না বিমা সংস্থাগুলি। করোনা রোগীর ক্ষেত্রেও ‘নন-মেডিক্যাল’ সামগ্রী এবং দূরত্ব-বিধি মানার চক্করে হু হু করে বিল বাড়ছে।

পিপিই-সহ সুরক্ষা-সামগ্রীর খরচ কেন দিচ্ছে না বিমা সংস্থাগুলি? একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার কলকাতা জ়োনের জেনারেল ম্যানেজার প্রবীর মুখোপাধ্যায় অভিযোগের আঙুল তুলেছেন হাসপাতালগুলির দিকেই। দেশে কিছু দিন আগে পর্যন্ত হাসপাতালগুলি পিপিই-র যথেচ্ছ দাম হাঁকলেও এখন একাধিক রাজ্য দাম বেঁধে দিয়েছে (পশ্চিমবঙ্গে দাম সর্বাধিক ১০০০ টাকা)। প্রবীরবাবুর দাবি, তাই এখন হাসপাতালগুলি রোগীপিছু পিপিই-র সংখ্যা ইচ্ছে মতো দেখাচ্ছে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘১০ জন কোভিড রোগীর ওয়ার্ডে পিপিই পরে চিকিৎসক এলে সকলের কাছেই যাবেন। বার বার নিশ্চয়ই পিপিই বদল করবেন না! ফলে একটি পিপিই-র দাম ১০ জনের মধ্যে ভাগ হওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালগুলি তা না-করে বিল বাড়াচ্ছে।’’ নন-কোভিড রোগীদেরও পিপিই-স্যানিটাইজ়েশনের নামে বিল বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

যদিও পূর্বাঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বলছেন, ‘‘হাসপাতালের সব স্বাস্থ্যকর্মীকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যত পিপিই এবং অন্য করোনা-সামগ্রী প্রয়োজন, তার দামই নেওয়া হচ্ছে। পিপিই-র অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ করে রোগীর খরচ কমাতে চেষ্টা করছি। তবে কম দামে পিপিই কিনতে গিয়ে গুণগত মানের সঙ্গে আপস করতে চাই না। এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠিও দিয়েছে আমাদের সংগঠন।’’

তবু স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত খরচ নিয়ে কেউ প্রতারিত হচ্ছেন মনে হলে আইনি পথ খোলা রয়েছে বলে জানালেন আইনজীবী অরিন্দম দাস। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে রোগীকে বিমা সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতেই হবে। তার পরে তিনি ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে যেতে পারেন। রাজ্য সরকারের ‘ফেয়ার বিজ়নেস প্র্যাক্টিস’ দফতরে অভিযোগ জানানো যায়। সরাসরি যাওয়া যেতে পারে হাইকোর্টেও।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE