Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Doctor Rape and Murder

টালা থানার প্রাক্তন ওসি গ্রেফতারে উদ্বেগে কলকাতা পুলিশ, নিচুতলার কর্মীদের ১৪ দফা ‘দাবি এবং প্রস্তাব’

আরজি কর-কাণ্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন কলকাতা পুলিশের নিচুতলার কর্মীরা। টালা থানার প্রাক্তন ওসি গ্রেফতার হওয়ার পরে সেই ভাবমূর্তি উদ্ধারের পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।

Inspector of Kolkata Police are worried after the arrest of Tala Police Station OC in RG Kar case

টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:০৬
Share: Save:

গত শনিবার সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। এর পরে পুলিশের মধ্যেই এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, উপরতলার কর্তাদের নির্দেশে ‘দায়িত্ব’ পালনের জন্যই কি অভিজিৎকে গ্রেফতার হতে হল? বস্তুত, নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা পুলিশের নিচুতলার অফিসারেরাও। এই পরিস্থিতিতে কী কী করণীয়, তা নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। সেই বৈঠকে মোট ১৪টি ‘প্রস্তাব’ নেওয়া হয়েছে এবং ‘দাবি’ জানানো হয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রের খবর।

কলকাতা পুলিশের ওই সূত্রের আরও খবর, ওই বৈঠকে তৎকালীন নগরপাল বিনীত গোয়েলকে শ’খানেক নিচুতলার অফিসার ঘিরে ধরে বলেন, তাঁরা আর এর পর থেকে ‘হোয়াট্সঅ্যাপ কল’-এ কোনও নির্দেশ নেবেন না! পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবারেই অভিজিতের বাড়িতে পাঠানো হয় তিন পদস্থ অফিসারকে।

যে প্রস্তাবগুলি নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে যেমন আছে অভিজিতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো বা আইনি লড়াইয়ে আর্থিক সহায়তার কথা, তেমনই প্রস্তাব এসেছে সংবাদমাধ্যমে ‘পুলিশের হয়ে’ কথা বলার জন্য প্রাক্তন কর্তাদের ব্যবহার করার প্রসঙ্গও। অভিজিৎ গ্রেফতার হওয়ার পরে শীর্ষ পুলিশকর্তারা কেন মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। পরিস্থিতি সাপেক্ষে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে রবিবার লালবাজারে পুলিশকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে বসতে হয়। বৈঠকে কলকাতার বিভিন্ন থানার ওসিরাও উপস্থিত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ওই বৈঠকের পরেই সোমবার অভিজিতের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান লালবাজারের শীর্ষ পুলিশকর্তারা। দুপুরে সার্ভে পার্কে তাঁর ফ্ল্যাটে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের তিন কর্তা। অতিরিক্ত কমিশনার ভি সলোমন নেসা কুমারের সঙ্গে যান দুই অতিরিক্ত কমিশনার বিদিশা কলিতা এবং আরিশ বিলাল। অভিজিতের স্ত্রী-সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন। পরে নেসা কুমার বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ একটা পরিবার। সেই পরিবারের সদস্য অভিজিৎ। আমরা সব রকম ভাবে পাশে থাকা এবং সাহায্যের বার্তা দিতেই তাঁর পরিবারের সঙ্গে এসে কথা বললাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, উনি (অভিজিৎ) তাঁর কর্তব্য ঠিকমতোই পালন করেছেন।’’

যদিও পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের বক্তব্য, ‘চাপে’ পড়েই অভিজিতের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিতে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন তিন কর্তা। চিকিৎসক-ছাত্রীর খুন এবং ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অভিজিৎ। আপাতত তিন দিনের সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি। তথ্যপ্রমাণ লোপাট-সহ বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশীদার বলে ওই পুলিশ অফিসারের বিষয়ে আদালতে দাবি করেছে সিবিআই। কলকাতা পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, সিবিআই এমন দাবি করার আগেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে কলকাতা পুলিশের নিচুতলার পুলিশকর্মীদের মধ্যে।

বৈঠকের প্রথম দাবি বা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অভিজিৎকে ‘আইনি সহায়তা’ দিতে হবে পুলিশকেই। তার ব্যয়ও বহন করতে হবে পুলিশকে। তিনি জামিন না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি শুনানিতে আদালতে যেতে হবে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার আফিসারদের। অভিজিতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি তাঁর সার্ভে পার্কের বাড়ির নিরাপত্তাও পুলিশের তরফে ‘সুনিশ্চিত’ করতে হবে। সংবাদমাধ্যম ব্যবহার নিয়েও কিছু দাবি তোলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে যে সব চ্যানেল ‘একতরফা’ অভিযোগ তুলছে, সেখানে পাল্টা বক্তব্য জানানোর জন্য আনুষ্ঠানিক বা ঘোষিত ভাবে না হলেও প্রাক্তন কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশের অফিসারদের নিয়ে একটি ‘প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করতে হবে। ‘বাছাই’ কিছু চ্যানেলে তাঁদের পাঠাতে হবে। যাতে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে না, এমন বিষয়ে তাঁরা পুলিশের হয়ে কথা বলবেন। পাশাপাশি কিছু চ্যানেলকে ‘বয়কট’ করারও দাবি তোলা হয়েছে। যে সব প্রাক্তন পুলিশকর্তা বিভিন্ন চ্যানেলের আলোচনায় পুলিশমহলের ‘নিন্দা’ করছেন, তাঁদেরও বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

নিচুতলার পুলিশেরা এমনও মনে করছেন যে, সমাজমাধ্যমের প্রচারে তাঁদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। সে জন্য সমাজমাধ্যমে পাল্টা প্রচারের দাবিও তোলা হয়েছে। এই কাজে দক্ষদের নিয়োগ করার দাবি তুলে তার জন্য অর্থবরাদ্দের কথাও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাতে বেশি মানুষের কাছে পুলিশের পক্ষে প্রচার পৌঁছয়, তার জন্য ‘বুস্ট’ করার অর্থও বরাদ্দ করতে হবে। প্রতিটি থানার তরফে স্থানীয় এলাকায় কী ভাবে পুলিশের পক্ষে প্রচার করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার দাবিও তোলা হয়েছে।

রবিবার যে ভাবে সকলকে নিয়ে কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা বৈঠক করেছেন, তেমন বৈঠক অভিজিৎ জামিন না পাওয়া পর্যন্ত নিয়মিত চালাতে হবে বলেও দাবি করা হয়েছে। রবিবারের বৈঠকে এমনও আলোচনা হয় যে, অভিজিতের গ্রেফতারের ‘প্রতিবাদে’ এক ঘণ্টার জন্য পুলিশকর্মীরা কাজ বন্ধ রাখবেন কি না। তবে শীর্ষকর্তারা সমস্ত দাবি ও প্রস্তাব ‘বিবেচনা’ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আপাতত পুলিশকর্মীরা দায়িত্ব পালনে অটল থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE