২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে মহিলাদের সঞ্চয়ী করে তুলতে ‘মহিলা সম্মান বচত পত্র’ নামে নতুন প্রকল্প এনেছেন নির্মলা। ফাইল ছবি।
লোকসভায় বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনের বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর মুখে শোনা গিয়েছিল ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটারি প্যাডের কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সরকারি স্কুলে মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয় নির্মাণ এবং প্যাডকেন্দ্রিক প্রকল্পের কারণে দেশে স্কুলছুটের সংখ্যা কমেছে।’’ গত বুধবারের বাজেটেও মেয়েদের কথা ভেবে আস্ত একটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু ঋতু-পরিচ্ছন্নতা? মেয়েদের হাতে হাতে ন্যাপকিন পৌঁছে দিতে সেটির দাম কমানোর চেষ্টা বা সেটিকে অত্যাবশ্যক পণ্য হিসাবে গণ্য করা?— সে সব রয়ে গিয়েছে আড়ালেই।
২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে মহিলাদের সঞ্চয়ী করে তুলতে ‘মহিলা সম্মান বচত পত্র’ নামে নতুন প্রকল্প এনেছেন নির্মলা। অথচ, মহিলাদের জন্য অত্যাবশ্যক ন্যাপকিনের মূল্য কমানোর বিষয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। সিকল সেল অ্যানিমিয়া দূরীকরণে কর্মসূচির কথা বললেও মেয়েদের ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নীরব থেকেছেন। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে (এনএইচএম) বরাদ্দ করেছেন ৩৬৭৮৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবর্ষের বাজেট-বরাদ্দের তুলনায় ৩৭৫ কোটি টাকা কম! অথচ দেশে পরিবার পরিকল্পনার পাশাপাশি মেয়েদের ঋতু-পরিচ্ছন্নতা নিয়েও কাজ করে এই প্রকল্প।
গত বছর প্রকাশিত জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার (ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে) রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১৫-২৪ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে ৪৯.৬ শতাংশ এখনও ঋতুকালীন সময়ে কাপড়ের উপরে নির্ভরশীল। অর্থাৎ, অর্ধেকের কাছেই ন্যাপকিন পৌঁছয়নি, অথবা তা তাঁদের সামর্থ্যের বাইরে। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, দেশে ১৫-২৪ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে মাত্র ৭৭.৬ শতাংশ ন্যাপকিন, ট্যাম্পনের মতো স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এ দিক থেকে দেশে সব চেয়ে পিছিয়ে বিহার (৫৯ শতাংশ মহিলা), মধ্যপ্রদেশ (৬১ শতাংশ) ও মেঘালয় (৬৫ শতাংশ)। যেখানে এখনও অধিকাংশ মহিলা ঋতুকালীন সময়ে ভরসা রাখেন কাপড়ের মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসেই।
স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এমন অস্বাস্থ্যকর ঋতু-অভ্যাসে মেয়েদের পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ়ের (পিআইডি) মতো রোগ হতে পারে। এর ফলে জরায়ু বা ফ্যালোপিয়ান টিউব পর্যন্ত ব্যাক্টিরিয়া পৌঁছে পরবর্তী কালে মা হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। উন্নত দেশগুলির মতো এ দেশে সর্বত্র ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন নেই। তাই মহিলাদের প্রত্যেকের হাতে ন্যাপকিন না পৌঁছলে বা তার দাম না কমালে ভবিষ্যতে এটিই দেশের অন্যতম স্বাস্থ্য-সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।’’
তবু কেন বাজেটে অনুচ্চারিত রয়ে গেল ঋতু-কথা? কলকাতার ‘প্যাডম্যান’ শোভন মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘প্রশাসনের মাথায় বসে যাঁরা, তাঁদেরই এ নিয়ে লজ্জা কাটেনি মনে হয়। অর্থমন্ত্রী মেয়েদের নামে সঞ্চয়ের কথা বলছেন, কিন্তু গ্রামে মেয়েদের প্যাড কিনতেই তো টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। নোংরা কাপড় ব্যবহারে অসুস্থ হলে তো আরও খরচ! সে ক্ষেত্রে সঞ্চয় আদৌ হবে কী ভাবে?’’ শোভন জানান, কাঁচামালের উপরে জিএসটি থাকায় কয়েক মাসে ন্যাপকিনের দাম বেড়েছে। ফলে তা অনেকেরই নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তাঁদের ফিরতে হচ্ছে পুরনো অভ্যাসে। রাজ্য সরকারের কম দামি ‘সাথী’ ন্যাপকিন কিছু জেলায় পৌঁছেছে। কিন্তু কেন্দ্রের এমন প্রকল্পের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে তার দেখা মেলে না। ‘‘সরকার বিনামূল্যে কন্ডোম বিলি করে, কিন্তু ন্যাপকিন নয়’’— বলছেন শোভন।
ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতাও সমান অবহেলিত বাজেট-বক্তৃতায়। মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে হঠাৎ পিরিয়ড শুরু হওয়ার অসহায়তা নিয়ে সম্প্রতি একটি টুইট ভাইরাল হয়েছে। সেখানে অনেকেই জানিয়েছেন, পাঁচতারা রিসর্ট থেকে কর্পোরেট অফিস, বিমানবন্দর, এমনকি বেসরকারি হাসপাতালেও আচমকা প্রয়োজনে ন্যাপকিন না পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা।রেল স্টেশনের ভয়াবহ শৌচালয়ে যাওয়া বা হঠাৎ পিরিয়ড শুরু হওয়ায় শহরেরঅপরিচ্ছন্ন গণশৌচাগারে যেতে বাধ্য হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন উঠতি কবি সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়। এক মেয়ের মা সবর্ণা বলছেন, ‘‘আমরা পরিচ্ছন্নতা চাই বটে, কিন্তু তাঅন্যকে, বিশেষত পরবর্তী প্রজন্মকে শেখাই না। এখনও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা মিশে আমাদের মজ্জায়, তাই পিরিয়ড আজও ঘেন্নার বিষয়। এ সব নিয়ে কথা বললেও লোকে নির্লজ্জ ভাবে, বাজেটে উল্লেখিত হওয়া তো দূরস্থান!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy