নবান্নের আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে অবৈধ পার্কিং। — ফাইল চিত্র।
মাস দুয়েকের জন্য গাড়ি রাখতে চাই শুনে রে রে করে তেড়ে এলেন নীল-লাল ডোরা কাটা টি-শার্ট আর বারমুডা পরা এক যুবক। উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘‘এখানে আর পার্কিংয়ের জায়গা নেই। ৩০টা প্রাইভেট ঢুকে গিয়েছে। বেশি টাকা দিলেও পারব না। মিনিবাস স্ট্যান্ডে রুটি-ঘুগনির দোকানে গিয়ে কথা বলুন। ওদের জায়গা আছে।’’
এই কথাবার্তা হচ্ছিল বিদ্যাসাগর সেতু ধরে কাজিপাড়ার দিকে নামার র্যাম্পের নীচের রাস্তায়। বাঁ দিকে ক্ষেত্র ব্যানার্জি লেন। তিন মাথার মোড় পেরিয়ে ডান দিকে গেলে মন্দিরতলা মিনিবাস স্ট্যান্ড। আর সেখান থেকে কয়েকশো গজ গেলেই রাজ্যের প্রধান সচিবালয় ‘নবান্ন’। সেই নবান্নের আশপাশ দিয়ে অক্টোপাসের মতো ছড়িয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠা বা নামার একাধিক র্যাম্প। সেই সমস্ত র্যাম্পের নীচে ফাঁকা জমি দখল করে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক পার্কিং লট ও খাবারের দোকান।
চা-রুটি-ঘুগনির একটি দোকানে গিয়ে কথা বলে জানা গেল, তারাও জায়গা দিতে পারবে না। অগত্যা দোকান-মালিকের পরামর্শে একটি র্যাম্পের নীচ দিয়ে পৌঁছনো গেল নতুন তৈরি হওয়া একটি সরকারি দফতরের উল্টো দিকের কাঠের দোকানে। গাড়ি রাখতে চাই শুনেই দেখিয়ে দেওয়া হল, রাস্তার উল্টো দিকে, দুটো চেয়ারে পা তুলে বসা আর এক যুবককে। তিনি আপাদমস্তক জরিপ করলেন আগন্তুককে। পা অবশ্য নামালেন না। ঝাঁঝের সঙ্গে বললেন, ‘‘জায়গা কম। মাসে সাড়ে তিন হাজার লাগবে। রাজি থাকলে বলুন।’’
শুধু নবান্নের সামনে নয়, অবৈধ পার্কিং নিয়ে এই জুলুমবাজি চলছে টিকিয়াপাড়া স্টেশন সংলগ্ন পার্কিং লটে, বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রথম গেটের সামনে, হরদত্ত চামারিয়া রোডে, সালকিয়া স্কুল রোডে, কিংস রোডে, হাওড়া ময়দানের কাছে ফাঁসিতলায় এবং টিকিয়াপাড়া ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসের ধারে। গোটা হাওড়া শহরের প্রায় ৫০টি জায়গায় চলছে বেআইনি পার্কিংয়ের এমন রমরমা কারবার। মুদিখানা, চায়ের দোকান বা সেলুনের মাধ্যমে মাসে দেড় থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে গাড়ি-প্রতি ‘পার্কিং ফি’ আদায় করা হচ্ছে প্রতি মাসে। সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে, কী হচ্ছে, কেউ জানেন না। সর্বত্রই এক ছবি। গাড়ি রাখতে চাই শুনলেই শাসকদলের ছোট-বড়-মেজো নেতা-দাদার নাম করে কলার তুলে এগিয়ে আসছেন ‘ভাইয়েরা’। বলছেন, ‘‘দাদারা যা রেট বেঁধে দিয়েছেন, তা-ই নিচ্ছি।’’
যদিও দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন কোনও অভিযোগ আসেনি বলেই দাবি জেলা তৃণমূল সভাপতি কল্যাণ ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘যদি দলের কেউ এ ভাবে পার্কিং থেকে টাকা তুলছেন বলে প্রমাণ মেলে, তা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পার্কিং নিয়ে জুলুমের ছবি হাওড়া শহরের সর্বত্র। এই ব্যবস্থায় গাড়ি রাখলে মালিকদের গাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থাকে না। পুলিশেরও পরোয়া করতে হয় না। কারণ, এক শ্রেণির পুলিশকর্মী ও শাসকদলের নেতার প্রত্যক্ষ মদতেই হাওড়া জুড়ে এ ভাবে পার্কিং নিয়ে ‘হরির লুট’ চলছে বলে অভিযোগ। নবান্নের নিরাপত্তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়েই মন্দিরতলা থেকে কাজিপাড়া, ব্যাতাইতলা থেকে বটানিক্যাল গার্ডেন, হরদত্ত চামারিয়া রোড থেকে সালকিয়া স্কুল রোড— সর্বত্রই বেআইনি পার্কিং চলছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) অর্ণব বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘পার্কিংয়ের বিষয়টি দেখে পুরসভা। তবে, রাস্তায় অবৈধ ভাবে গাড়ি রেখে টাকা তোলার অভিযোগ পুরসভা থেকে করা হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, কেনই বা পুরসভা আরও বেশি বৈধ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব খোয়াচ্ছে? কেনই বা বন্ধ হচ্ছে না বাস, ট্যাক্সি বা গাড়ির অবৈধ পার্কিং? কেনই বা পুরসভা নিজে পার্কিং ফি না নিয়ে এজেন্সিকে দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছে? (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy