Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জনবসতির মাঝেই নিয়ম ভেঙে খাটাল

দিনের বেলায় মাছি এবং রাতে মশার জন্য অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি বদলাতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি এ ভাবে পুর এলাকায় গরু রাখা যায় কি না, তা-ও জানতে চেয়েছে ওই আবাসনের ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

অনিয়ম: মেফেয়ার রোডের সেই খাটাল। নিজস্ব চিত্র

অনিয়ম: মেফেয়ার রোডের সেই খাটাল। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

ফ্ল্যাট কেনার সময়ে উত্তরের বারান্দাটা বড্ড পছন্দ হয়েছিল ক্রেতার। সামনের খোলা জায়গা, প্রচুর আলো-হাওয়া দেখে ফ্ল্যাটটি বিক্রিও হয়ে যায় দ্রুত। গত কয়েক বছর ধরে সেই বারান্দাই বাসিন্দাদের কাছে ‘মৃত্যু ভয়’ হয়ে দাঁড়িয়েছে! আবাসনের অন্য বাসিন্দাদেরও তাড়া করছে একই আতঙ্ক। পরিস্থিতি এমনই যে, ভয় কাটাতে এ বার কলকাতা পুরসভা এবং কড়েয়া থানার দ্বারস্থ হলেন আবাসনের বাসিন্দারা।

তাঁদের এলাকায় জনবসতির মধ্যেই খাটাল চালানো হচ্ছে বলে সম্প্রতি পুরসভা এবং পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে মেফেয়ার রোডের এক আবাসন সোসাইটির সদস্যেরা। তাঁদের দাবি, ১৪ নম্বর মে ফেয়ার রোডের একটি বাড়িতে অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে তিনটি গরু রাখা রয়েছে। তাদের মলমূত্র পড়ছে ওই বাড়ির বাগানেই। তা থেকে বেরনো দুর্গন্ধে ফ্ল্যাটে বসবাস করাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। দিনের বেলায় মাছি এবং রাতে মশার জন্য অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি বদলাতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি এ ভাবে পুর এলাকায় গরু রাখা যায় কি না, তা-ও জানতে চেয়েছে ওই আবাসনের ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

আবাসনের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুর-প্রতিনিধিরা এলাকা পরিদর্শন করে যান। তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি। তবে গরুর মালিকেরা এখন গোবর প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সব বাড়িতেই বাচ্চা-বয়স্ক রয়েছেন। এমনিতেই এ সময়ে মশাবাহিত রোগের আতঙ্ক থাকে। এই উটকো ঝঞ্ঝাটে মশামাছির উপদ্রবও বেড়েছে। ওখানে যে ডেঙ্গি মশা জন্মাচ্ছে না, তার কী নিশ্চয়তা!’’ আরেক বাসিন্দার প্রশ্ন, ‘‘পুরসভা যদি এ বিষয়গুলোই না দেখে তাহলে কর দিচ্ছি কেন?’’

যে বাড়ি ঘিরে যাবতীয় অভিযোগ, সেখানে ঢুকে দেখা গেল, বাগান সংলগ্ন জায়গায় গরু রাখার অস্থায়ী খাটাল তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই রয়েছে তিনটি গরু। প্রশ্ন করতেই বাড়িটির বাসিন্দা এক মহিলা ক্ষোভের সুরে বলে ওঠেন, ‘‘আমরা বাড়িতে গরু রাখব কি না, তার জবাব অন্য কাউকে দেব না।’’ তাঁর আইনজীবী কৌশিক চৌধুরীর দাবি, ‘‘যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন ভাবেই ওই বাড়িতে গরু পোষা হয়। খাটাল চালানোর অভিযোগ একে বারে ভুল। ওই গরুর দুধ নিজেরাই ব্যবহার করেন মালিকেরা। তাহলে কী একে খাটাল বলা যায়?’’

কলকাতা পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, পুর এলাকায় খাটাল চালানো বেআইনি। ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও কেউ গরু রাখলে সে ক্ষেত্রে একটিই রাখতে পারেন মালিক। একাধিক গরু রাখা আইনবিরুদ্ধ। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘কেউ যদি ব্যক্তিগত ভাবে গরু পোষেন, তাঁকে পুরসভার থেকে অনুমতি নিতে হয়। তাতেও একটির বেশি গরু রাখা যায় না। শুধু তাই নয়, এলাকা পরিচ্ছন্নও রাখতে হবে।’’

তা হলে জনবসতি এলাকায় একসঙ্গে তিনটি গরু রাখা হচ্ছে কী ভাবে? কড়েয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘বিষয়টি পুরসভার দেখার কথা। তবু অভিযোগ এলে দেখা হবে।’’ স্বপনবাবু বলেন, ‘‘পুরকর্মীদের এটা দেখতে বলছি।’’ এত দিন কেন বিষয়টি দেখা হয়নি? সেই উত্তর অবশ্য পাওয়া যায়নি মেয়র পারিষদের থেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Catle Shed Illegal Residence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE