—ফাইল চিত্র
ব্যাঙ্কের চূড়ান্ত গাফিলতির জেরেই কি প্রতারিত হলেন যাদবপুর এলাকার এত জন গ্রাহক? পুলিশ এবং ব্যাঙ্কগুলির জালিয়াত দমন শাখার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে পরস্পর বিরোধী তথ্য উঠে এলেও, এটা স্পষ্ট, দু’পক্ষই যদি আর একটু ‘গুরুত্ব’ দিয়ে দেখত বিষয়টি, তা হলে এই প্রতারণা রোখা কার্যত সম্ভব ছিল।
তদন্তকারীদের দাবি, গত এপ্রিলে যাদবপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে ‘স্কিমার ডিভাইস’ খুঁজে পান ব্যাঙ্কের জালিয়াতি দমন শাখার আধিকারিকরা। ওই এটিএম থেকে স্কিমার পাওয়ার পরে ব্যাঙ্কের তরফে শুধুমাত্র যাদবপুর থানায় একটি ডায়েরি করে দায় ঝেড়ে ফেলার অভিযোগ তুলছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে গত ৭ এপ্রিল, ২০১৯ ওই ডায়েরির ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা একটি এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ব্যাঙ্কের এটিএমে জালিয়াতি হয়েছে এ রকম সন্দেহ হলে, তার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যে সমস্ত গ্রাহক ওই এটিএমটি ব্যবহার করেছেন, ব্যাঙ্কের তরফে তাঁদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে সতর্ক করার কথা। সেই সতর্কবার্তায় গ্রাহকদের ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর পাল্টে ফেলতে বলা হয়। মঙ্গলবার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘স্কিমার খুঁজে পাওয়ার পর যদি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই সময় একটু উদ্যোগী হয়ে গ্রাহকদের সতর্ক করতেন, তা হলে এ বারের প্রতারণা অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব হত।”
আরও পড়ুন: মাওবাদী নয়, বিজাপুরে ১৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে খুন করেছিল পুলিশ, জানাল তদন্ত রিপোর্ট
যদিও ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জালিয়াতি দমন শাখার এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনার পরই আমরা ওই এটিএমে অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস বসিয়েছি।’’ কিন্তু গ্রাহকদের সতর্ক করা হয়েছিল কি? এ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক মেনে নিয়েছেন এ বিষয়ে তাঁদের গাফিলতির কথা। পাশাপাশি তিনি পুলিশি গাফিলতিকেও পাল্টা তুলে ধরছেন। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘গ্রাহকদের সতর্ক করার ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের খামতি ছিল। কিন্তু, স্কিমার খুঁজে পাওয়ার পর পুলিশই বা কী করল!’’ তাঁর ব্যাখ্যা, কোনও ‘স্কিমার ডিভাইস’ লাগানোর পর সাধারণত প্রতারকরা ওই এটিএমে অন্তত এক বার যে কোনও কার্ড ব্যবহার করে দেখে নেয়, সমস্ত ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। স্কিমার খুঁজে পাওয়ার আগের ৭২ ঘণ্টায় যে সমস্ত গ্রাহক ওই এটিএম ব্যবহার করেছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে যাঁরা টাকা তোলেননি, তাঁদের আলাদা করে চিহ্নিত করা সহজ। সেই স্বল্প সংখ্যক ব্যবহারকারীর থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কে স্কিমার লাগিয়েছে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ওই প্রতারক যে কার্ড ব্যবহার করেছে, সেই তথ্য থেকে তদন্ত অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।’’
আরও পড়ুন: সন্তানদের খুন করে ন’তলা থেকে ঝাঁপ ব্যবসায়ী দম্পতির, রহস্যময় আত্মহত্যা আরও এক মহিলার
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় এই এটিএম প্রতারণার ঘটনা ঘটার পর তাদের তরফে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের জালিয়াতি দমন শাখার আধিকারিক এবং পুলিশের যৌথ দল গঠন করা হয়। তার পর নিয়মিত নজরদারি চালানো হয় এটিএমগুলোতে। গত বছর রোমানীয় গ্যাং পাকড়াও হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আরও অন্তত ১২টি স্কিমার পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে শহরে। পুলিশ জানাচ্ছে, কলকাতা কর্পোরেশনের সদর দফতরের একতলায় থাকা একটি এটিএমেও উদ্ধার হয়েছিল স্কিমার। গোয়েন্দাদের দাবি, এর থেকেই স্পষ্ট যে রোমানীয়রা ধরা পরার পরেও তারা বা অন্য গ্যাং সক্রিয় রয়ে গিয়েছিল শহরে।
এ দিন একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের জালিয়াতি দমন শাখার এক আধিকারিক স্বীকার করেন যে, এটিএমের নিরাপত্তার গোড়াতেই রয়ে গিয়েছে অনেক গলদ। প্লাস্টিক কার্ড (ডেবিট এবং ক্রেডিট)-এর নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া সমস্ত ব্যাঙ্ককে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮-র মধ্যে সমস্ত কার্ড ইএমভি (ইউরো পে, মাস্টারকার্ড এবং ভিসা) সমকক্ষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। অর্থাৎ, কোনও কার্ডের তথ্য তার পিছনে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপে রাখার বদলে ইন্টিগ্রেটেড চিপে রাখার কথা বলা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে চিপওয়ালা কার্ড জালিয়াতি করা শক্ত। কারণ, সেখানে তথ্য এনক্রিপটেড হয়ে থাকে। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থেকে তথ্য চুরি করা অনেক সহজ।
আরও পড়ুন: প্রত্যেক সিরিজেই গোলাপি বলের টেস্ট খেলা উচিত ভারতের, কোহালির উল্টো সুর সৌরভের
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কার্ডে চিপ ব্যবহারের পাশাপাশি এটিএমগুলোকেও ওই কার্ডের সমকক্ষ করে তোলার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৯-এর শেষে ১০০ শতাংশ কার্ড চিপে পরিবর্তিত করা সম্ভব হলেও, এখনও শহরের এটিএমের একটা বড় অংশ পুরনো মডেলের। এখনও অনেক এটিএমকে চিপ প্রযুক্তিওয়ালা করা যায়নি। ফলে, এখনও সমস্ত চিপ কার্ডেও ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ রাখা হয় যাতে আগেকার প্রযুক্তির এটিএম কিয়স্কে এক জন গ্রাহক তা ব্যাবহার করতে পারেন। তদন্তকারীদের দাবি, ফলে ব্যাঙ্কগুলি আরও একটু সতর্ক না হলে এ ধরনের জালিয়াতি ঠেকানো মুশকিল।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত যাদবপুর থানায় ৩৫টি প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে। প্রত্যেকের অ্যাকাউন্ট থেকে রবিবারই টাকা গায়েব হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির শিকার যে তাঁরা আর হবেন না, এমন কথা কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছেন না কোনও পক্ষই— তা সে পুলিশ হোক বা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy