পথ-দেবতা: গয়নার কারখানার অন্য মালপত্রের সঙ্গে সরাতে হচ্ছে লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তিও। শনিবার, বৌবাজারে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
কারও স্থান ছিল কুলুঙ্গিতে, কারও আবার পাথরের সিংহাসনে। কিন্তু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের ধসে সেই বিগ্রহেরাও এখন ঠাঁইহারা। আক্ষরিক অর্থে এ বার পথে বসেছেন তাঁরা।
শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও সেকরাপাড়া লেনের মোড়ে লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তি আগলে বসেছিলেন দাশরথি পান্ডা। তিনি সেকরাপাড়ার ব্যবসায়ী ভিকি সূর্যবংশীর ফাইফরমাস খাটেন। দাশরথি জানালেন, মালিক তাঁকে গয়নার কারখানার মালপত্র সরাতে বলেছেন। সেই কাজ করতে গিয়ে কুলুঙ্গির বিগ্রহও সরাতে হচ্ছে। কিন্তু মালিক তখনও তাঁকে বলে উঠতে পারেননি, বিগ্রহ কোথায় রাখা হবে। তাই রাস্তাতেই রেখেছেন দাশরথি।
গৌর দত্ত লেন, সেকরাপাড়া লেনে বহু ছোট গয়নার কারখানা রয়েছে। ঘুপচি ঘরে ডেস্কের আদলে ছোট ছোট টেবিল পেতে কারিগরেরা ক’দিন আগেও দিনভর কাজ করতেন সেখানে। সেখানে ছোট-মাঝারি লক্ষ্মী-গণেশের নিয়ম করে পুজো হত। সুড়ঙ্গে ধস গয়না কারখানার মালিকদের যেমন পথে বসিয়েছে, তেমনই ঠাঁইহারা করেছে দেবদেবীকেও। সীতারাম গড়াই নামে এক কারিগর জানালেন, তাঁর মালিক শশিভূষণ দে স্ট্রিটে এক বন্ধুর দোকানে লক্ষ্মী ও গণেশের বিগ্রহ
রেখে এসেছেন। আবার অনেক কারখানার মালিক বিগ্রহ রেখে এসেছেন গ্রামের বাড়িতে। তবে কিছু বিগ্রহ এখনও হেলে পড়া বাড়ির ভিতরে রয়ে গিয়েছে।
বিগ্রহকে উপবাসে রাখতে নারাজ ভক্তেরা। কিন্তু সেই উপাসনায় কার্যত কোমর ভাঙার জোগাড় লখাই ঠাকুরের। লখাইয়ের আসল নাম লখিন্দর পতি। বৌবাজারের দোকান, কারখানায় ঘুরে ঘুরে পুজো করা তাঁর পেশা। বাঙালি লব্জে লখিন্দর হয়ে গিয়েছেন লখাই। শনিবার বৌবাজারের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নিজের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন লখাই।
তিনি জানান, দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেনে গয়নার কারখানা ও অন্যান্য দোকান মিলিয়ে খান চল্লিশেক যজমান রয়েছে তাঁর। বাড়িঘর ভেঙে, হেলে বা ধসে
যাওয়ায় যজমানেরা বিগ্রহ অন্যত্র সরিয়েছেন। তবে পঞ্চাননতলা লেন, বিশ্বনাথ মোতিলাল লেন, হিদারাম ব্যানার্জি লেন, মদন দত্ত লেনে কোনও বাড়ির তিনতলায়, কোনও বাড়ির দোতলায় সিঁড়ি ভেঙে সকাল-সন্ধ্যায় পুজো করতে করতে তাঁর
কোমর ভাঙার অবস্থা। লখিন্দর বলেন, ‘‘আগে বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে পুজো করা হয়ে যেত। এখন দুপুর দুটো বেজে যাচ্ছে। অথচ দক্ষিণা একই। কোন মুখে বাড়তি চাইব। যজমানদের ব্যবসাই যেখানে লাটে ওঠার মুখে।’’
এ সবের বাইরে বৌবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এ দিনও দোকান ও বাড়িঘড় থেকে মালপত্র সরাতে
ব্যস্ত ছিলেন লোকজন। পুলিশের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম থেকে দোকান বা বাড়ির নথি দেখিয়ে কুপন নিয়ে আসতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী অথবা বাড়ির মালিকদের।
‘কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর লোকজন সেই কুপন দেখে তবেই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন ভাঙা বাড়ি বা দোকান থেকে জিনিসপত্র সরাতে। ১০ নম্বর সেকরাপাড়া লেনের হেলে যাওয়া তেতলা বাড়ির একতলায় ওই বাড়ির বাসিন্দা
কিশোর গুপ্তের ব্যবসাও। সেখান থেকে মালপত্র সরানোর ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘এত মাল কোথায় সরাব বলুন! আজ ছেলের বন্ধুরা এসেছে সাহায্য করতে। আমার বন্ধুদের বাড়িতে মালপত্র পাঠাচ্ছি। কারও বাড়ি তো গুদাম নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy