ফাইল চিত্র।
হাওড়া শহরে মঙ্গলাহাট বসে সপ্তাহে দু’দিন। কিন্তু হাওড়া স্টেশন লাগোয়া পাতালপথে ‘হাট’ বসে প্রতিদিন।
দিনের পর দিন এ হেন দখলদারিতে জেরবার হাওড়া সাবওয়ে। অভিযোগ, দীর্ঘ বছর ধরে ওই ভূগর্ভস্থ পথের দখলদারি নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী। তাদের মদতেই সাবওয়ের রাস্তা থেকে সিঁড়ি জুড়ে বসছে আনাজ, ফলের বাজার থেকে হরেক কিসিমের জিনিসের ডালা। আর সে সব থেকে রীতিমতো ‘তোলা’ও উঠছে। অন্য দিকে রাস্তা জুড়ে হাট বসায়, ওই পাতালপথে হাঁটাচলা করাই কার্যত দায় হয়ে উঠেছে। পথচারীদের অভিযোগ, প্রকাশ্যে সব কিছু চললেও প্রশাসন নির্বিকার।
হাওড়া স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে সংযোগকারী ওই সাবওয়ের হাল ফেরাতে সম্প্রতি রেলের হাওড়া ডিভিশনের কর্তারা কেএমডিএ-র সঙ্গে যৌথ ভাবে জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, আদৌ কি সাবওয়ে দখলমুক্ত হবে?
স্থানীয়েরা জানান, এর আগেও বেশ কয়েক বার ওই সাবওয়ের সংস্কার করতে গিয়ে পিছিয়ে আসতে হয়েছে সরকারি দফতরকে। তবে হাওড়ার ডিআরএম সঞ্জয়কুমার সাহা বলেন, ‘‘হকার তোলার বিষয়ে কেএমডিএ এবং স্থানীয় প্রশাসন যদি রেলের সহযোগিতা চান, তা হলে অবশ্যই করা হবে।’’
প্রায় চার-পাঁচ দশক আগে তৈরি হয়েছে ওই সাবওয়ে। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কেএমডিএ। স্টেশন থেকে বেরিয়ে কলকাতা-হাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে লঞ্চঘাট, হাওড়া সেতুতে যাওয়ার সুবিধার জন্য রয়েছে সাবওয়ের ১৫টি গেট। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ট্রেন থেকে নেমে বাস ধরতে এবং রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে স্টেশনে ঢুকতে ওই সাবওয়ে ব্যবহার করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘দিনে কোনও ভাবে ঠেলাঠেলি করে বেরোনো গেলেও রাতে বাজারের বিকিকিনির ফলে ভিড় ঠেলে সামনে এগোনোই দায়। অনেক সময়েই ট্রেন ধরা যায় না।’’
শুক্রবার দুপুরে হাওড়া সাবওয়েতে গিয়ে দেখা গেল, ভিড়ে ঠাসা ওই পথে দূরত্ব-বিধি শিকেয় উঠেছে। সাবওয়ের রাস্তা ও সিঁড়ির দু’ধারে পসরা সাজিয়ে যে হকারেরা বসেছেন, তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক নেই।
কেন নেই? ‘‘সাবওয়েতে এমনিতেই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি। তার মধ্যে কি মাস্ক পরে সারা দিন বসে থাকা যায়? তাই পরি না। আর মাস্ক না পরলেও কিছু হবে না।’’— বলছেন আনন্দ দাস নামে এক হকার। অনেক লোককেও দেখা গেল, মাস্ক ছাড়াই সাবওয়েতে হাঁটছেন। তাঁদেরও দাবি, ‘‘এমনিতেই সাবওয়েতে হাঁটতে গেলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সেখানে মাস্ক পরলে আরও কষ্ট হবে।’’
অভিযোগ যে মিথ্যা, তা নয়। গোটা সাবওয়েতে পাঁচটি ব্লোয়ার রয়েছে। তার মাধ্যমেই ঠান্ডা হাওয়া বেরিয়ে পাতালপথে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় থাকে। দু’-একটি জায়গায় ওই যন্ত্র কাজ করছে। বাকিগুলি অকেজো হয়ে রয়েছে। যার জেরে সাবওয়ের ভিতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ট্রেন থেকে নেমে কলকাতা বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন প্রৌঢ় ভগবতীপ্রসাদ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘একসঙ্গে এত মানুষের আসা-যাওয়া। চার দিকে হকারেরা বসে রয়েছেন। গোটা সাবওয়ে জুড়ে ঘিঞ্জি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে যন্ত্র বিকল থাকলে তো হাঁসফাঁস করা অবস্থা হবেই।’’ যদিও করোনা-বিধি মেনে মাস্ক খোলেননি ওই প্রৌঢ়। সাবওয়ের চার দিকেই সংস্কারের অভাবের চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে। কোথাও ছাদের চাঙড় খসে পড়েছে। কোথাও আবর্জনা জমে রয়েছে। আবার সাবওয়ের দেওয়াল, সিঁড়িতে পানের পিকের লাল ছোপ পড়েছে। নেই পর্যাপ্ত আলোও।
তবে যতই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকুক না কেন, দখলদারি চলছে বহাল তবিয়তেই। কয়েক জন হকার জানাচ্ছেন, দৈনিক ২০০ টাকা দিতে হয় তাঁদের বসার জন্য। গোটা সাবওয়েতে প্রায় ৩০০ জন হকার বসেন।
কে নেয় টাকা? ‘‘জোর যার মুলুক তার। যে ক্ষমতায় থাকে, সে-ই নেয়। এর বেশি বললে পেটে টান পড়বে’’—মন্তব্য এক হকারের। কিন্তু প্রশাসন কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আগেও অনেক বার হকার তোলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কিছু হয়নি। তবে সম্প্রতি রেলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কী ভাবে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy