Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
RG Kar Protest

অনশন নিয়ে উদ্বেগ সরিয়ে দাবিপূরণে অগ্রাধিকার দিন! শুক্র-বৈঠকে সিনিয়রদের বলে দিয়েছেন জুনিয়রেরা

আন্দোলন কোন পথে এগোবে, তা ঠিক করতে শুক্রবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জুনিয়রেরা। সর্বাত্মক চিকিৎসক ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই বৈঠকেই।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনিয়রদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনিয়রদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৫৬
Share: Save:

অনশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের দরকার নেই। আপাতত দাবিপূরণেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার সিনিয়রদের সঙ্গে বৈঠকে সেই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁরা।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জেনারেল লেকচার থিয়েটারে শুক্র-সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের পরে মঙ্গলবার ‘সর্বাত্মক’ চিকিৎসক ধর্মঘটের ঘোষণা করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দিয়েছেন, সোমবার পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। ওই সময়ের মধ্যে সাড়া না মিললে মঙ্গলবার হাসপাতালে হাসপাতালে সর্বাত্মক ধর্মঘট হবে। সেই ধর্মঘট পালন করবেন সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে ‘সর্বাত্মক’ ধর্মঘটের দিন ‘জরুরি পরিষেবা’ নিয়ে। তবে সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। নাম না করলেও আলোচনা হয়েছে সম্প্রতি তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে সিনিয়র চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে’ একান্ত বৈঠক করা নিয়েও।

শুক্রবার ডাক্তারদের ঘণ্টা তিনেকের বৈঠকে আগামী দিনে আন্দোলনের ‘অভিমুখ’ স্থির হয়েছে। বৈঠকে সিনিয়র ডাক্তারদের ডেকেছিলেন জুনিয়রেরা। কারণ, কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছিল, আন্দোলনে সঙ্গে সিনিয়র ডাক্তারেরা ‘সম্পৃক্ত’ হতে পারছেন না। তাঁরা আন্দোলনে সমর্থন দিলেও ‘সক্রিয়’ হয়ে এমন কোনও পদক্ষেপ করছেন না, যাতে সরকার নড়েচড়ে বসে। অনেকেরই বক্তব্য ছিল, বিভিন্ন হাসপাতালে সিনিয়র চিকিৎসকেরা ‘গণইস্তফা’ দিয়েছেন বটে। কিন্তু তা নেহাতই ‘প্রতীকী’। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী ‘বিধি’ মেনে কোনও সিনিয়র চিকিৎসক ‘ব্যক্তিগত’ ভাবে সরকারি চাকরি ছেড়েছেন, এমন খবর মেলেনি।

সিনিয়র ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দেন। কোন পথে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বক্তব্য ছিল। জুনিয়র ডাক্তারেরাই মঙ্গলবার সর্বাত্মক চিকিৎসক ধর্মঘটের প্রস্তাব দেন। অন্যরা সেই প্রস্তাবে সায় দেন।

সিনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই বৈঠকে ধর্মতলার মঞ্চে অনশনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জানান, অনশন আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারেরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অনশন আন্দোলনের ভবিষ্যতের চেয়েও তাঁরা বেশি জোর দিতে চান তাঁদের ১০ দফা দাবি পূরণে। তাঁদের অগ্রিধাকির হল, কী ভাবে ওই দাবিগুলি সরকারের থেকে আদায় করা যায়। সিনিয়রেরা যেন সেই প্রশ্নের সুরাহা করেন।

জুনিয়র ডাক্তারদের সর্বাত্মক চিকিৎসক ধর্মঘটের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জরুরি পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিনিয়রদের অনেকে। কেউ কেউ জানতে চান, কোনও মুমূর্ষু রোগী যদি চিকিৎসার জন্য আসেন, জরুরি ভিত্তিতে কারও যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রেও কি সে দিন ডাক্তারেরা মুখ ফিরিয়ে থাকবেন? হাসপাতালে কি কোনও পরিষেবাই পাওয়া যাবে না? অনেকে এই মর্মেও অভিমত প্রকাশ করেন যে, এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসক হিসাবে তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। তবে জরুরি পরিষেবার প্রশ্নে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি শুক্রবারের বৈঠকে। প্রকাশ্যেও কিছু জানানো হয়নি। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি হিসাবে দেবাশিস হালদার বৈঠকের পরে বলেছেন, ‘‘ধর্মঘট চলাকালীন কোনও রোগীর কিছু হলে সেই দায় রাজ্য সরকারের।’’ যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের সূত্রে খবর, সোমবারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হস্তক্ষেপ’ আশা করছেন অনেকেই। সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশও বৈঠকে ওই বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।

আন্দোলনের অভিমুখ নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব এসেছিল বৈঠকে। অনেকে বাংলা বন্‌ধ ডাকার প্রস্তাবও দেন। অনেকে আবার স্বাস্থ্য ভবন-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন ঘেরাওয়ের কথা বলেন। সিনিয়রদের কেউ কেউ ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য আইনি লড়াই চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সেই প্রস্তাবগুলি ‘সর্বসম্মত’ ভাবে স্বীকৃত হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত অনেকের মতে, কোন কর্মসূচিতে কী ধরনের আইনি বাধা আসতে পারে বা আইনি লড়াই কী ভাবে চালানো যেতে পারে, সে সম্পর্কে জুনিয়র ডাক্তারেরা ‘সচেতন’। তাই এখনই তাঁরা সেই পথে হাঁটতে চাইছেন না। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর (স্বাস্থ্য দফতর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতেই) পদত্যাগের দাবি তোলা উচিত কি না, সেই প্রশ্নও বৈঠকে তুলেছিলেন কেউ কেউ। তবে তাতে সকলে সায় দেননি।

আরজি করে নির্যাতিত মহিলা চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গও এসেছে বৈঠকে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, মূল ঘটনার বিচারের দাবি থেকে কি আন্দোলনকারীরা সরে আসছেন? আন্দোলনের কেন্দ্রে কি অন্য বিষয় ঢুকে পড়ছে? আন্দোলনকারীদের তরফে সেই প্রশ্নের জবাব দেন দেবাশিস। তিনি জানান, আরজি করের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এই আন্দোলন চলছে। ১০ দফা দাবির মধ্যে হাসপাতালগুলিতে ‘থ্রেট কালচার’ বা ‘হুমকি সংস্কৃতি’র প্রসঙ্গও রয়েছে। তা মূল ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। দেবাশিসকে সমর্থন করেন সিনিয়রেরা।

সম্প্রতি সিনিয়র চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বৈঠক নিয়ে জুনিয়র ডাকাতারদের মধ্যে ‘অনুযোগ’ তৈরি হয়েছে। বৈঠকে নারায়ণের নাম না নিলেও সেই প্রসঙ্গও উঠেছিল। সকলেই একটি বিষয়ে একমত হন— ডাক্তারদের সমস্যা সমাধানের জন্য ‘ব্যক্তিগত’ ভাবে উদ্যোগী হওয়া উচিত নয়। আপাতত যৌথ ভাবেই আন্দোলন এগোবে।

চিকিৎসক মহলের একাংশের মতে, আন্দোলনে সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে ‘ভেদাভেদ’ করা হচ্ছে। তেমন কোনও ‘ভুল বার্তা’ যাতে সর্বসমক্ষে না যায়, সে বিষয়েই সচেতন ছিল দু’পক্ষ। বৈঠকে ঠিক হয়, বৈঠকের সিদ্ধান্ত জুনিয়র ডাক্তারেরাই ঘোষণা করবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy