‘সেন্ড ফিফটিন গ্রামস ব্রাউন অ্যান্ড হোয়াইট।’
অর্ডার দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যাবে সেই ‘ব্রাউন অ্যান্ড হোয়াইট’। আরও সহজ করে বললে ব্রাউন সুগার বা হোয়াইট সুগার। যা সাধারণের কাছে পরিচিত ‘হেরোইন’ নামে।
মাদক কিনতে হলে চোরাকারবারিদের খোঁজ করার আর প্রয়োজন নেই। সাবান, শ্যাম্পু বা ওষুধের মতো মাদকের অর্ডারও এখন দেওয়া যায় অনলাইনে। একেবারে বাড়ির দরজায় পৌঁছে যাবে পছন্দের মাদক। তা-ও আবার কুরিয়র সার্ভিসের মাধ্যমে।
অনলাইনে মাদক বিক্রির এই গোটা ব্যবসাটাই চলে ‘ডার্ক ওয়েব’-এ। ফলে গোয়েন্দাদের পক্ষেও ধরা সম্ভব হয় না, কে অর্ডার দিচ্ছেন, আর কার কাছে মাদক পৌঁছচ্ছে!
মাদকাসক্ত থেকে মাদকের কারবারি— প্রায় সকলেরই এখন মাদক কেনাবেচায় ভরসা ইন্টারনেট। মাদকাসক্তেরা ব্রাউন সুগারকে ডাকেন ‘ব্রাউন’ নামে। বাংলায় অনেকে বলেন ‘মাল!’ এই মুহূর্তে ব্রাউন সুগারের চাহিদা সব থেকে বেশি হলেও গত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ‘ইয়াবা’ নামে আর এক ধরনের মাদকেরও। রঙিন ট্যাবলেটের আকারে পাওয়া যায় ওই মাদক। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের উপরে সেই ট্যাবলেট রেখে নীচ থেকে আগুন জ্বালাতে হয়। তাপে গলে গিয়ে ওই ট্যাবলেট প্লাস্টিকের চাটনির মতো হয়ে যায়।
শুধু ডার্ক ওয়েব নয়। ফোনেও অর্ডার দেওয়া যায় মাদকের। তবে অচেনা কেউ ফোন করলে সহজে এ জিনিস পৌঁছবে না হাতে। তার জন্য বন্ধুত্ব পাতাতে হবে কোনও ‘অভিজ্ঞ’ মাদকাসক্তের সঙ্গে। এর পরে ওই মাদকাসক্তই বলে দেবেন মোবাইল নম্বর। সেখানে ফোন করে তাঁর নাম করে নির্দিষ্ট জায়গা বলে দিলেই পৌঁছে যাবে যে কোনও ধরনের মাদক। ইন্টারনেট ও ফোনের হাত ধরে এ ভাবেই মাদক কেনাবেচার পদ্ধতি বদলে গিয়েছে শহরে। তবে কলকাতার বুকে এখনও কিছু দোকান রয়েছে, যেখানে সাধারণ জিনিসের আড়ালে বিক্রি হয় ‘ব্রাউন সুগার’। সেখানেও অবশ্য দোকানির পরিচিত কোনও মাদকাসক্তের ‘রেফারেন্স’ ছাড়া মাদক মিলবে না। প্রিন্স
আনোয়ার শাহ রোড, যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী, পার্ক সার্কাস ও খিদিরপুরের মতো বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের দোকান রয়েছে। সবই ছোটখাটো ঠেক। তবে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে সেখানে দীর্ঘদিনের পরিচিত ক্রেতা ছাড়া বা তাঁদের ‘রেফারেন্স’ ছাড়া কিছুই সহজে মিলবে না।
তবে এ শহরের যুবক-যুবতীরা আর শুধুমাত্র ব্রাউন বা হোয়াইট সুগার, কোকেন, এলএসডি কিংবা ইয়াবা-তেই মজে নেই। তাঁদের অনেকের কাছে ওই সব মাদক এতটাই একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে যে, এখন তাঁরা নিজেরাই বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন নতুন ধরনের মাদক। সেই মাদক তৈরির জন্য রীতিমতো পড়াশোনাও করেছেন ওই যুবক-যুবতীরা। যেমন, কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে নেশা করতে করতে ক্লান্ত এক যুবক জানালেন, এত দিন সব ধরনের মাদক নেওয়ার পরে গত কয়েক বছর ধরে তিনি কেমিক্যাল নিতে শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক অ্যামপুল মরফিন কিনে এনে তার সঙ্গে অন্যান্য ওষুধ মিশিয়ে সিরিঞ্জে ভরে নিই। দিনে তিন-চার বার নিলেই এক অদ্ভুত নেশা হয়। হেরোইনের নেশার থেকেও ভাল।’’ কিন্তু মরফিন পান কোথা থেকে?
ওই যুবকের কথায়, ‘‘চাইলে এ শহরে সবই মেলে।’’
পুলিশ জানে না?
মাদকাসক্তদের কথায়, ‘‘স্থানীয় থানা সবই জানে। কিন্তু বিক্রেতার সঙ্গে বোঝাপড়া থাকে। তাই অসুবিধা হয় না।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, প্রায়ই বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলের সামনে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ধরা হয় পাচার-চক্রের লোকজনকে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠীর কথায়, ‘‘ডার্ক ওয়েব বা ফোনের মাধ্যমে কারা মাদক বিক্রি করছে, তা ধরা সহজ নয়। তাই আমাদের কাজটা দিনদিন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে শুধু অভিযান নয়, সচেতনতা না বাড়ালে মাদক বন্ধের সম্ভাবনা কম।’’ (চলবে)
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy