ঝুঁকির বাতিস্তম্ভ। — শৌভিক দে
শহর সাজাতে সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকেও বসেছিল ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ। কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবং লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে। অথচ বছর তিনেকও হয়নি, এর মধ্যেই সেই ত্রিফলার ‘ফলা’ খসে পড়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বুধবার সল্টলেকের একাধিক ব্লক ঘুরেও দেখা গিয়েছে, একের পর এক ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের বেহাল দশা।
কোনওটার বাতি রয়েছে, ঢাকনা নেই। কোনওটা তার উল্টো। কোনওটার আবার বাতি ও ঢাকনা, দুই-ই উধাও, কেবল তার ঝুলছে। কোনওটায় আবার কিছুই নেই। দু’হাত তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘চৈতন্যে’র মতো। অভিযোগ, মাস কয়েক ধরেই ত্রিফলা স্তম্ভগুলির এই হাল সত্ত্বেও নজর নেই পুর-কর্তাদের।
চলতি মাসেই এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় ভবানীপুরের রমেশ মিত্র রোডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র যশ বেঙ্গানির। পরিবারের অভিযোগ, ত্রিফলার স্তম্ভে ঢাকনা খোলা তারে হাত লেগেই এই ঘটনা। কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে থানায় গাফিলতির অভিযোগও করেন তাঁরা। পুর-প্রশাসন অবশ্য ঘটনার দায় এড়ায়। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, দুর্ঘটনাস্থলের পাশে সিইএসসির কেব্ল বক্সও ছিল। তা ফেটেও দু’ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। তবে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে ঢাকনা খোলা রাখা যে বিপজ্জনক, তা মেনে নিতে দ্বিধা করেননি মেয়র। অবিলম্বে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে কানেকশন বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। মেয়রের নির্দেশের পরে পুরসভার সেই কাজও শেষের পথে।
কিন্তু সল্টলেকে তার কী হাল, সরেজমিন যাচাই করতে নজরে এল সেখানেও অবস্থাটা একই। শ্রাবণী, ফাল্গুনী, লাবণী আবাসন ও অনিন্দিতা আইল্যান্ড এলাকায় স্তম্ভের বেহাল দশা তো বটেই, অনেকগুলোর ঢাকনাও হাঁ হয়ে রয়েছে। সেখান থেকেও যে কোনও সময়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘অনিন্দিতা থেকে সিএ আইল্যান্ডের দিকে এগিয়ে যান। দেখতে পাবেন, টানা ৩০-৩৫টি বাতিস্তম্ভে কোথাও আলো নেই, কোথাও ব্র্যাকেট নেই। কোনওটাতে আবার সবই ভেঙেচুরে গিয়েছে।’’
ওই বাসিন্দার অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তা মালুম হল ওই পথে এগোতেই। দুই রাস্তার মাঝে থাকা বুলেভার্ডের উপর সারি সারি ত্রিফলা ‘নিষ্ফলা’ হয়ে দাঁড়িয়ে। অথচ এক-একটি বাতিস্তম্ভের জন্য কমপক্ষে ১৬-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করেছিল বিধাননগর পুরসভা। বিধাননগর পুরনিগম গড়ার পরে এলাকাসীরা ভেবেছিলেন, শহরের চাকচিক্য বাড়বে। তার পরে এই হালে পড়ে থাকা পথ ধরেই যাতায়াত করেন পুর নিগমের কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের নজরে পড়েনি এই অবস্থা? তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘এই পথ দিয়ে তো আর মুখ্যমন্ত্রী যাতায়াত করেন না। তাই নজর এড়িয়ে যায় বোধহয়।’’
ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলের পাশে থাকা এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘শুধু বেহাল দশাই নয়, যথেষ্ট বিপজ্জনক ভাবেই রয়েছে ত্রিফলাগুলি। বৃষ্টি পড়লেই ভয় করছে, স্তম্ভে কারেন্ট নেই তো!’’ কলকাতার বাতিস্তম্ভগুলি টেপ দিয়ে মোড়া হলেও, সল্টলেকে সে সবের বালাই নেই বলেই অভিযোগ।
জিডি ব্লকের উল্টোদিকে, এফসি ব্লকের কাছে একই চিত্র। এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ভবানীপুরে যশের মৃত্যু। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস বুলেভার্ডের উপরে ত্রিফলা। তাই কিছুটা স্বস্তি।’’
কী বলছেন বিধাননগর পুরনিগমের কর্তারা? স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের নীলাঞ্জনা মান্নাকে বার কয়েক ফোন করার পরে তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে আছি, পরে কথা বলব।’’ বাতিস্তম্ভের দুরবস্থা ঘোচাতে তাঁরা কী করতে চান, তা না জানালেও বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র পারিষদ (আলো) সুধীরকুমার সাহা স্বীকার করেছেন, ঢাকনা খোলা অবস্থায় বাতিস্তম্ভ রাখা বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ‘‘ভবানীপুরে শক লেগে মৃত্যুর ঘটনার পরে বিধাননগরের ইঞ্জিনিয়ারদেরও বলা হয়েছে, বাতিস্তম্ভের খোলা ঢাকনা বন্ধ করতে হবে। সেই মতো কাজ শুরু হচ্ছে।’’ ২০১২-১৩ সালে যখন বাতিস্তম্ভ বসানোর সময়ে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (আলো দফতর) ছিলেন অশেষ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বাতিস্তম্ভ লাগানোর সময় ঠিকাদারদের বলা হয়েছিল রক্ষণাবেক্ষণ করতে। ২০১৫ পর্যন্ত যে ভাবে চলেছিল, সে ভাবে এখনও চললে ভাল হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy