অবসরে: চায়ের ভাঁড়ে চুমুক। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ পাড়ার একই অঙ্গে কত রূপ! রবীন্দ্রসদন অঞ্চল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে দিয়ে হরিশ মুখার্জি রোড ভবানীপুরের ধার ঘেঁষে যতই হাজরা রোডের দিকে এগিয়েছে, ততই একটু একটু করে বদলেছে পাড়ার চরিত্রটা।
শুরুর দিকে হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, ধাবা, রেস্তোরাঁ, অভিজাত বহুতল পেরিয়ে পরের দিকটায় বর্ধিষ্ণু পাড়ার ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুরুর দিকে পাড়া পাড়া উষ্ণতা আর আটপৌরে ব্যাপারটা যতটা কম। পাড়ার মাঝামাঝি থেকে শেষ দিকটায় সেটা অনেকটাই বেশি।
রাস্তাটা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড থেকে হরিশ মুখার্জি রোডে গিয়ে মিশেছে। তারই আশপাশে রয়েছে অসংখ্য পাড়া। কাছেই গোখেল রোড, কিছুটা এগিয়ে ডি এল খান রোড। ১৯৬৩ সালে বিয়ের পরে যখন এ পাড়ায় এসেছিলাম, তখন অঞ্চলটা ছিল খুব ফাঁকা। সন্ধ্যার পরে রাস্তায় ক’টা লোক হেঁটে গেল, তা বলে দেওয়া যেত। পরে যখন মেট্রোর কাজ শুরু হল, তখন হরিশ মুখার্জি রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু করল। তখনই একটু একটু করে বদলাতে লাগল এ পাড়ার ছবিটা। আজকের পাড়াটা জমজমাট, তৈরি হয়েছে কত দোকান, রেস্তোরাঁ, সেলুন-স্পা আরও কত কী।
এখন পাড়াটা পরিচ্ছন্ন, ঝাঁচকচকে। রাস্তার দু’ধারে ত্রিফলা আলোকস্তম্ভের আলোয় রাতের পরিবেশটা মনোরম লাগে। তবে ফুটপাথের কিছু জায়গায় রয়েছে দখলদারি। হাসপাতালের সামনে বেশ কিছু খাবার দোকান থাকায় ক্রেতার ভিড়ে এক এক সময়ে তো হাঁটাচলা করতেই অসুবিধা হয়।
এখানে আগে ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে। এখন সকাল হয় গাড়ির হর্নের আওয়াজে। কাছেই রয়েছে একটি গুরুদ্বার। আর রয়েছে একটি বিখ্যাত ধাবা। যার আকর্ষণে আজও বহু মানুষ ভিড় করেন। কাছেই রয়েছে একটি চায়ের দোকান। সেখানে অনেকে আড্ডা দেন। আসেন পথ চলতি
বহু মানুষও। রাতেও পাড়াটা জমজমাট থাকে।
আগে এ পাড়ার ফুটপাথেই ছোটরা খেলত। এখানে আর ছোটদের আর খেলতে দেখি না। হয়তো রাস্তায় গাড়ি বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই পরিবর্তন। শুধু মাঝেমাঝে রাতের দিকে ফুটপাথের মৃদু আলোয় চলে ক্যারম খেলা। আর শীতকালে হয় ব্যাডমিন্টন খেলা। কাছেই হরিশ পার্ক। সেখানে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। ওখানে মেলাও বসে। জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয় সেখানে। পাড়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পুরনো স্মৃতি। অনেক সুযোগ-সুবিধা আর কিছু প্রাপ্তি, কিছু অপ্রাপ্তির মাঝে আমার পাড়াটা কিন্তু আজও মন্দ নয়। সেই আকর্ষণেই আজও রয়ে গেলাম এ পাড়ায়।
লেখক ব্যবসায়ী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy