Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Homosexuality

৩৭৭ থেকে মুক্ত হয়েও সমকামীদের হেনস্থা চলছেই

চার বছর আগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারা অপরাধের তকমামুক্ত (যদি শারীরিক সংসর্গ পারস্পরিক সম্মতিতে ঘটে) বলে ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।

সমকামীদের হেনস্থা চলছেই।

সমকামীদের হেনস্থা চলছেই। প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১৭
Share: Save:

‘নিরাপদতম’ শহরের তকমাটা নিয়ে বড়াই করছে রাজ্যের শাসক দল। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র খতিয়ানে দেশের অন্য বড় শহরগুলির তুলনায় কলকাতার পরিস্থিতি অবশ্যই ভাল। কিন্তু সমকামীদের প্রতি বৈষম্য বা হেনস্থার অভিযোগে কয়েকটি ক্ষেত্রে এ শহরের ছবিটা মোটেও সদর্থক নয়।

চার বছর আগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারা অপরাধের তকমামুক্ত (যদি শারীরিক সংসর্গ পারস্পরিক সম্মতিতে ঘটে) বলে ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সমকামীদের সেই ‘বিজয় দিবসেই’ সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন, পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী এক যুবক। নিউ টাউনে ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে থাকার সময়ে অপদস্থ হয়ে চরম মানসিক যন্ত্রণায় এ রাজ্যের অন্য একটি শহরের বাড়িতে চলে গিয়েছেন তিনি। কুশল রায় নামে ওই যুবক নিজেকে এক জন সমকামী পুরুষ বলেই পরিচয় দেন। তাঁর অফিসেও এই কারণে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু ভাড়ার ফ্ল্যাটে এক সঙ্গী এবং বাড়িওয়ালার ব্যবহারে তিনি সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। প্রথমে ফ্ল্যাটেই তাঁর সঙ্গে থাকা আর এক জন ভাড়াটে ওই সমকামী যুবককে যৌন হেনস্থা করেন। এর পরে তাঁর সমকামী পরিচয় জানতে পেরে বাড়িওয়ালাই উল্টে তাঁকে হুমকি দেন এবং বলেন, তাঁর পরিচয় ফাঁস করে পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করা হবে। তাই তার আগেই তিনি যেন ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান।

সমকামীদের অধিকার নিয়ে সচেতন আইনজীবীদের মতে, কুশলের মতো ছেলেরা নির্যাতিত হলে তাঁদের জন্য কার্যত কোনও আইনই নেই। তাই ৩৭৭-এর গেরোমুক্ত হয়েও সমকামীদের যৌন নির্যাতন বা সম্ভ্রমহানির দিকগুলি নিয়ে এ দেশে প্রতিকারের আশা কম।

কুশলের কথায়, “চার-পাঁচ বছরের চাকরিজীবনে দক্ষিণ ভারতের একটি শহরেও কাজ করেছি। সেখানে এমন সমস্যা হয়নি।” তিনি জানান, ভাড়াটে সঙ্গী তাঁর সমকামী পরিচয় জানার পর থেকেই জবরদস্তি অভব্য ব্যবহার করতে থাকেন। কুশল তাঁর প্রস্তাবে রাজি হননি বলেই নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা শুরু হয়। ওই ব্যক্তি কখনও ফ্ল্যাটে কুশলকে আটকে রেখে চলে যেতেন, কিংবা চাবি নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার দরুণ কুশল ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারতেন না। আইনজীবীদের মতে, বাড়িওয়ালার ব্যবহারেও সমকামী-বিদ্বেষ প্রকট। কুশল বলেন, “ওই ফ্ল্যাটে জোর করে থেকে লড়ার শক্তি ফুরিয়ে আসছিল। তাই সব ছেড়ে বাড়িই ফিরে এলাম।” তবে ইকো পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কুশল। ফ্ল্যাটে তাঁর হেনস্থা এবং কোণঠাসা হওয়ার জেরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩৪২, ৪২৭, ৫০৬ ও ৩৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। অভিযোগ প্রমাণ হলেও যা লঘু অপরাধ বলেই গণ্য হবে। সমকামীদের অধিকার নিয়ে সচেতন আইনজীবী সুমন গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “পুলিশের কিছু করার নেই। পুরুষদের সম্ভ্রমহানি বা যৌন নির্যাতনের স্বীকৃতি নেই আইনে। রূপান্তরকামীদের জন্য তা-ও নতুন আইন হয়েছে। কিন্তু সমকামীদের প্রতি অপরাধের বোধটাই তৈরি হয়নি।” হাই কোর্টের আইনজীবী কৌশিক গুপ্তও বলেন, “দেশে বৈষম্য-বিরোধী নির্দিষ্ট আইনের আওতায় সমকামীদেরও আনা উচিত।” ৩৭৭-উত্তর ভারতে একসঙ্গে ঘর বাঁধা বা সন্তান লালন করার সুযোগের মতো যৌন হেনস্থা বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সমকামীরা কার্যত অসহায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Homosexuality Section 377 harassment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy