Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Guest Houses

নিয়ম ভাঙছে অতিথিশালা, প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কোথায়?

দক্ষিণেশ্বর, আদ্যাপীঠ এলাকায় চক্কর মেরে দেখা গেল, অধিকাংশ অতিথিশালাতেই সহজে ঢুকে যাচ্ছেন যুগলেরা। ঘণ্টায় ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায় মেলে ঘর।

দক্ষিণেশ্বরের আড়িয়াদহের এই জায়গাকেই নিজেদের ‘নিরাপদ’ আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছিল তিন দুষ্কৃতী।

দক্ষিণেশ্বরের আড়িয়াদহের এই জায়গাকেই নিজেদের ‘নিরাপদ’ আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছিল তিন দুষ্কৃতী। নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫০
Share: Save:

থানা থেকে অতিথিশালার দূরত্ব মেরেকেটে ৫০০ মিটার। কিন্তু দক্ষিণেশ্বরের আড়িয়াদহের সেই জায়গাকেই নিজেদের ‘নিরাপদ’ আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছিল তিন দুষ্কৃতী। শুক্রবার সেখানেই পুলিশের উপরে গুলি চালানোর ঘটনার পরে স্থানীয়দের অভিযোগ, “থানার এত কাছে দুষ্কৃতীরা এসে গা-ঢাকা দিচ্ছে! তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, নজরদারিতে ফাঁক কতটা।”

বাসিন্দাদের অধিকাংশের বক্তব্য, পর্যটনস্থলে অতিথিশালা থাকবে ঠিকই। কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অতিথিশালায় প্রশাসনের কড়া নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি থাকবে না কেন? অন্যান্য জায়গায় যেখানে বাড়ি ভেঙে মাথা তোলে বহুতল আবাসন, সেখানে দক্ষিণেশ্বরের টি এন বিশ্বাস রোড, রানি রাসমণি রোড, ডি ডি মণ্ডল ঘাট রোড, কানাইলাল চ্যাটার্জি স্ট্রিট এবং আর এন টেগোর রোডে একের পর এক অতিথিশালা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বেশির ভাগ অতিথিশালাতেই ঘণ্টার হিসাবে ঘুপচি ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, দু’টি আন্তর্জাতিক মানের কালীক্ষেত্রের আশপাশে রয়েছে এই অতিথিশালাগুলি। রয়েছে সেনা ঘাঁটিও। সেখানে ঢিলেঢালা নজরদারির সুযোগে দুষ্কৃতীরা বিস্ফোরক নিয়ে ঢুকে গেলেও কেউ জানতে পারবে না! ঠিক যে ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ডাকাতেরা আশ্রয় নিলেও তা জানা যায়নি। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “প্রতিদিন যে অনিয়মগুলি আমাদের চোখে পড়ছে, সেগুলি প্রশাসন দেখতে পায় না কেন?” যদিও ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, “অসাধু উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ আসছে কি না, তা দেখার জন্য শীঘ্রই অতিথিশালার মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আবার, কামারহাটির পুরপ্রধান গোপাল সাহার কথায়, “যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদেরও দায়িত্ব রয়েছে। অতিথিশালাগুলির প্রবেশপথে সিসি ক্যামেরা ও মেটাল ডিটেক্টর-সহ ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তারক্ষী রাখার জন্য বলা হবে। আচমকা ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা হবে, কতটা নিয়ম মানা হচ্ছে। না-হলে লাইসেন্স বাতিল হবে।”

কিন্তু, স্থানীয়দের প্রশ্ন, “আদৌ কি কিছু হবে?” কারণ, গুলি চলার ঘটনার পরেও শনিবার সকাল থেকে চেনা ছন্দেই চলেছে অধিকাংশ অতিথিশালা। সিভিক ভলান্টিয়ার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর থেকে তালাবন্ধ ডি ডি মণ্ডল ঘাট রোডের ‘ডলফিন গেস্ট হাউস’। এ দিনও সেখানে আসতে দেখা গিয়েছে একাধিক যুগলকে। বন্ধ দেখে তাঁরা পা বাড়িয়েছেন আশপাশের অন্য অতিথিশালায়। কেউ আবার এলাকা ছেড়েছেন। এ দিন দুপুরে ডলফিন গেস্ট হাউসের দরজায় তালা দেখে বেরিয়ে আসা যুগলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাড়ি কোথায়? থতমত খেয়ে উত্তর আসে, “এখানে এক জন থাকেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। এখনই চলে যাচ্ছি।”

এ দিন দক্ষিণেশ্বর, আদ্যাপীঠ এলাকায় চক্কর মেরে দেখা গেল, অধিকাংশ অতিথিশালাতেই সহজে ঢুকে যাচ্ছেন যুগলেরা। যাঁদের বেশির ভাগই আসছেন রিকশা বা টোটো চড়ে। দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের সামনে এক রিকশাচালক জানালেন, যে কোনও যুগলকে কোনও অতিথিশালায় পৌঁছে দিলেই নগদ ৫০ টাকা কমিশন মেলে। কিন্তু অন্য কাউকে নিয়ে গেলে কমিশন মেলে না। ঘণ্টায় ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায় মেলে ঘর। বেশি লাভের আশায় ঘণ্টার হিসাবে ভাড়া দেওয়াই এখন দস্তুর। আদ্যাপীঠ মোড়ে চায়ের দোকানে দাঁড়ানো এক বাসিন্দার আক্ষেপ, “পরিবার নিয়ে এলে ঘর মেলে না। প্রায়ই দেখি, কত পরিবার রাতে একের পর এক হোটেলে গেলেও বলা হচ্ছে, ঘর নেই।”

পুরসভার খাতায় দক্ষিণেশ্বর, আদ্যাপীঠ চত্বর মিলিয়ে অতিথিশালা বা হোটেল রয়েছে ২৪টি। কিন্তু সংখ্যাটা আরও বেশি বলেই দাবি স্থানীয়দের। নিয়ম রয়েছে, প্রতি মাসে রেজিস্টারের প্রতিলিপি পুরসভায় জমা দিতে হবে। তবে, সেই নিয়ম আদৌ কতটা মানা হয়, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “আশ্বাস আদৌ বাস্তবায়িত হবে তো?”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy