সারা গায়ে গভীর ক্ষত। মাথা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে। ওই অবস্থায় একাধিক হাসপাতালে ঘোরার পরে তবে চিকিৎসা শুরু হল বাগুইআটিতে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম দুই তরুণের। দু’জনেই এখন দু’টি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন। এক জনের সংসার চলে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল বিক্রি করে। অন্য জনের বাবা রিকশাচালক। দু’জনের পরিবারই জানাচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর টাকা তাদের নেই। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে গেলেও তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার রাতে নিমতলা শ্মশান লাগোয়া ভূতনাথ মন্দির থেকে ফেরার পথে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় রাজীব নস্কর নামে এক তরুণের। ওই বাইকেই ছিলেন গৌরব সাহা ও সোমনাথ রায় নামে আরও দু’জন। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে। ভিআইপি রোডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইকটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজীবের। গৌরব ও সোমনাথকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গৌরবের বাবা খোকন সাহা জানান, দুর্ঘটনার পরে তাঁর ছেলেকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শয্যা ফাঁকা নেই জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গৌরবকে এর পরে ভিআইপি রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে তাঁকে আইসিইউ-তে সরানো হয়। সোমনাথকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর জি করে। তাঁর ক্ষেত্রেও শয্যা নেই জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোমনাথের বোন স্বপ্না রায় বলেন, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতাল দাদাকে ভর্তি নিলেও সারা রাত মাটিতে ফেলে রাখে। সকালে শয্যা দেওয়া হবে বললেও তা দেওয়া হয়নি। সকাল পর্যন্ত কোনও চিকিৎসা হয়নি দেখে আমরা ভয়ে দাদাকে ভিআইপি রোডের যে হাসপাতালে গৌরব রয়েছে, সেখানে নিয়ে যাই।’’ কিন্তু শয্যা না থাকায় ওই হাসপাতালেও জায়গা হয়নি সোমনাথের। এর পরে আরও দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে সোমনাথকে পার্ক সার্কাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বপ্নার কথায়, ‘‘ওই হাসপাতালগুলো যে টাকা চেয়েছে, তা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই পার্ক সার্কাসে কম খরচের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সরকারি হাসপাতাল বলে দিয়েছে, বাঁচাতে হলে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।’’
রাজীব, সোমনাথ ও গৌরবের বাড়ি বিধাননগর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার কাউন্সিলর মণীশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেপরোয়া ভাবে বাইক চালিয়ে ওঁরা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা তো সকলের পাওয়ার কথা। কেউ দোষ করেছে কি করেনি, তা দেখে তো চিকিৎসা হবে না।’’ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের সঙ্গে। তবে তিনি ফোন ধরেননি। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি।
প্রসঙ্গত, গত দু’মাসে দুই অগ্নিদগ্ধ রোগীকে বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পরেই নড়েচড়ে বসেছিল স্বাস্থ্য ভবন। প্রাথমিক চিকিৎসা না করে কোনও ভাবেই রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না বলে নতুন করে নির্দেশিকা জারি করে তারা। এমনকি, রেফার করার আগে যেখানে রেফার করা হচ্ছে, সেখানে শয্যা রয়েছে কি না, তা-ও হাসপাতালগুলিকে খতিয়ে দেখে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় নির্দেশিকায়। তার পরেও কি পরিস্থিতি বদলেছে? নতুন করে এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বাগুইআটির ঘটনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy