মর্মান্তিক: অগ্নি-নির্বাপণ সুড়ঙ্গের এই ফাঁঁক গলেই নীচে পড়ে যায় অন্বেষা। শুক্রবার, মহেশতলায়। নিজস্ব চিত্র
লুকোচুরি খেলার সময়ে বহুতল আবাসনের ন’তলার অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার সুড়ঙ্গ দিয়ে নীচে পড়ে গুরুতর জখম হয়েছে ১০ বছরের এক বালিকা। বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ এই ঘটনাটি ঘটেছে মহেশতলা থানার সারেঙ্গাবাদ এলাকায়। অন্বেষা ঘোষ নামে ওই মেয়েটি একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেশনে।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশাল ওই আবাসনে সম্প্রতি নতুন একটি পনেরোতলা বহুতল তৈরি হয়েছে। সেখানে আবাসিকদের ফ্ল্যাট হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সেখানেই মাসখানেক আগে ফ্ল্যাট কিনেছেন গৌতম ঘোষ নামে এক ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার ছিল তাঁদের গৃহপ্রবেশের পুজো। গৌতমের মেয়ে অন্বেষা সন্ধ্যার পরে সেখানে এক বান্ধবীর সঙ্গে লুকোচুরি খেলছিল। সিঁড়ির পাশেই রয়েছে অগ্নি-নির্বাপণের সুড়ঙ্গ। কিন্তু সেটির মুখ প্লাইউড ও ফাইবারের দরজা দিয়ে এমন ভাবে আটকানো ছিল যে, নীচটা যে ফাঁকা, তা বোঝার উপায় ছিল না। ছিল না কোনও তালাও। লুকোচুরি খেলার সময়ে অন্বেষা ওই ফাইবারের দরজা খুলে লুকোনোর চেষ্টা করেছিল। তখনই পা ফসকে গর্তে পড়ে যায় সে। সোজা প্রায় একতলার কাছে এসে পড়ে। তার চিৎকারে আশপাশের সকলে ছুটে আসেন। নিরাপত্তারক্ষীরা কোনও মতে গুরুতর জখম অন্বেষাকে নীচ থেকে টেনে বার করে আনেন। এর পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই ঘটনার পরে আবাসিকেরা আবাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আবাসন কর্তৃপক্ষের দু’টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে মহেশতলা থানার পুলিশ। আসেন মহেশতলা পুরসভার কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান পারিষদ সুকান্ত বেরা। সুকান্ত বলেন, ‘‘আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কোথায়, কাদের গাফিলতি ছিল, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই মেয়েটির চিকিৎসার যাবতীয় খরচ আবাসন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে বলা হয়েছে। তাতে ওঁরা রাজি হয়েছেন।’’ এই ঘটনায় অবশ্য শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত জখম শিশুটির পরিবারের তরফে মহেশতলা থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
এ দিন দুপুরে অন্বেষার বাবা গৌতম ফোনে বলেন, ‘‘আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। চিকিৎসকেরা মেয়ের অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন।’’ জখম বালিকার মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে বলে খবর।
এ দিন সকালে মহেশতলা থানায় আবাসন কর্তৃপক্ষ ও আবাসিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল পুলিশ। পুলিশি সূত্রের খবর, আবাসিকদের অভিযোগ শোনার পরে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা-সহ পরিষেবার বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আবাসন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবনির্মিত বহুতলটির আবাসিকদের অভিযোগ, নির্মাণকাজ শেষ না করেই অধিকাংশ ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। অগ্নি নির্বাপণের সুড়ঙ্গের দরজায় কোনও তালাও দেওয়া ছিল না। শুধুমাত্র একটি প্লাইউডের দরজা লাগানো হয়েছিল।
আবাসন কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশ ও আবাসিকদের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy