Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
ghost

Ghost: জোড়াবাগানে পুলিশের ট্র্যাফিক গার্ডে ‘ভূতের উপদ্রব’! ডাক পড়ল প্রেতান্বেষীদের

জটিল মামলার রহস্যভেদে পুলিশের প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর বা শখের গোয়েন্দাদের সাহায্য নেওয়ার গল্প বাঙালি অনেক শুনেছে।

‘ভূত’ তাড়াতে গোয়েন্দার খোঁজ।

‘ভূত’ তাড়াতে গোয়েন্দার খোঁজ।

ঋজু বসু, মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

থানায় ভূতের হানা! কিংবা পুলিশ ফাঁড়িতে ভূতের বাড়ি! জটায়ুর লেখা চিত্রনাট্যে এমন নাম জুতসই হতেই পারত।

এটা অবশ্য ঠিক থানা বা ফাঁড়ি নয়, পুলিশের ট্র্যাফিক গার্ডের ঘটনা। ভিতরে পুলিশ ব্যারাকে ডিউটি শেষে ক্লান্ত পুলিশকুলের রীতিমতো ঘুম চুরি গিয়েছে ভূতের উপদ্রবে। শেষ পর্যন্ত পুলিশভায়াদের কার্যত ওঝার শরণ নিতে হয়েছে। ওঝা মানে, ভূতসন্ধানী গোয়েন্দা-বাহিনী। ভূতের বাড়িতে পর পর দু’রাত কাটিয়েও যাঁরা ভৌতিক কিছুই খুঁজে পাননি।

ঘটনাস্থল, জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ড। ১০২, শোভাবাজার স্ট্রিট। আশপাশের সাবেক কলকাতার নানা আটপৌরে চিহ্নের মাঝে মোটা মোটা থাম শোভিত যে বাড়ি নজর কাড়ে তার রাজকীয়তায়। নকশাল আমলে ১৯৭১-’৭২ সাল থেকেই ভাগ্যকুলের রায়বাড়ির শরিকদের থেকে যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। “তবে ভূতের গল্প আগে শোনা যায়নি! এ সব বছর দু’-তিনের ব্যাপার”, বলছিলেন জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডে তরুণ বয়সে সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত, বর্তমানে কলকাতার এক উঁচুতলার ট্র্যাফিক কর্তা। রায়বাড়ির ছেলে, পুলিশের গার্ডের বাড়িওয়ালা কৃষ্ণনাথ রায় থাকেন লি রোডে। বলছেন, “এ বাড়ি তো বাবার ঠাকুরদা, জানকীনাথ রায়ের আমলের। নকশাল আমলে উত্তর কলকাতায় থাকা যাচ্ছিল না বলেই আমরা বাড়িটা ভাড়া দিয়ে পালাই! তখন আমার তিন-চার বছর বয়স। কাকারা এখনও বেঁচে। বাড়িটায় ভূতের উপদ্রব তো আগে শুনিনি!”

 জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের সেই ভবন।

জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের সেই ভবন। নিজস্ব চিত্র।

অধুনা রিজেন্ট পার্ক ট্র্যাফিক গার্ডে বদলি হওয়া এক সার্জেন্টের কিন্তু চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। বলছেন, “এক রাতই আমি জোড়াবাগান গার্ডের ব্যারাকে থেকেছিলাম! মাঝরাতে গালে সপাটে চড় খেয়ে ঘুম ভাঙল! অথচ কেউ কোত্থাও নেই! ঘাড় মটকায়নি এই রক্ষে!” বেহালায় বদলি আর এক পুলিশ আধিকারিকও রাতভর বিটকেল সব আওয়াজে কুঁকড়ে জেগে বসে থাকার কথা শুনিয়েছেন।

জটিল মামলার রহস্যভেদে পুলিশের প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর বা শখের গোয়েন্দাদের সাহায্য নেওয়ার গল্প বাঙালি অনেক শুনেছে। এ যাত্রায় ভূতের চাপে খাস লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা ‘ডিটেক্টিভস অব সুপারন্যাচারাল’ বলে ভূত-শিকারীদের সাহায্য নেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র বলেন, “বিষয়টা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার-৪ তন্ময় রায়চৌধুরী দেখছিলেন।’’ তন্ময়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও অবশ্য সাড়া মেলেনি। ডিসি ট্র্যাফিক অরিজিৎ সিংহেরও মুখে কুলুপ! তবে পুলিশ সূত্রের খবর, গত জুনে ভূত-শিকারীদের নিয়ে তন্ময়বাবুর ঘরে ভূত-বিষয়ক মিটিং বসেছে খাস লালবাজারে!

ভয়, কৌতুক, প্রযুক্তির কৃৎকৌশলে সাড়া ফেলা ১৯৮০-র দশকের অলৌকিক চিত্রকাহিনি ‘গোস্টবাস্টার্স’-এর ভূতশিকারীদের এখনও মনে আছে অনেকের। জোড়াবাগানের ভূতসন্ধানীদের মধ্যে এক দম্পতি দেবরাজ সান্যাল ও ঈশিতা দাস সান্যালের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। তবে শখ ভূতচর্চা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুলিশের কথা মতো নানা কিসিমের কলকব্জা নিয়ে তাঁরা ভূত-বাড়িতে রাত জাগেন। তবে এই ভূতচর্চার জন্য পুলিশের থেকে পারিশ্রমিক নেননি তাঁরা। তবে ভূতসন্ধানী গোয়েন্দাদের চার জনের দলকে নামী রেস্তরাঁর রুটিমাংস খাইয়ে পুলিশি আপ্যায়নে তাঁরা আপ্লুত। দেবরাজ বলছেন, ‘‘ভূত থাকা না-থাকা বিষয়টা আমরা খোলা মনে দেখি। ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড জরিপ করার যন্ত্র দিয়ে অনেক সময়ে অশরীরী উপস্থিতি ধরা পড়তেও পারে। তাই ওটিও সঙ্গে ছিল। যা মনে হল, ওই বাড়ির ছাদে মোবাইলের টাওয়ারের বিকীরণে (রেডিয়েশন) পুলিশের লোকেরা কিছু ভুল বুঝতেও পারেন! ব্যারাকের ঠিক উপরেই টাওয়ার কি না!” ভূত বোতলবন্দি হয়নি। রহস্যজনক কিছু গোয়েন্দারা দেখেনওনি। তবে পুলিশের জনৈক আধিকারিক বলছেন, “রেডিয়েশন, ফেডিয়েশন সব বুঝলাম। ঘুমের ঘোরে ছায়ামূর্তি-টূর্তিও না-হয় মনের ভুল! তা বলে গালে চড়! এ আবার হয় নাকি!”

কলকাতার পুরনো বাড়িতে ভূতের বসবাসের তত্ত্ব বহুচর্চিত। লীলা মজুমদার কবেই বলেছেন, সব ভূতুড়ে! আহিরীটোলা, শোভাবাজার, কালীঘাট, চেতলা সর্বত্র ‘তেনারা’ আছেন। “পুলিশও মানুষ! পুলিশ বলে কি ভূতের ভয় পেতে পারে না”, বলছে ভূতশিকারী গোয়েন্দাবাহিনী। তবে তাঁরা ঘুরে যাওয়ার পরে ব্যারাকে ভূতের উপদ্রব কমেছে বলে শোনা যাচ্ছে। “ভূত আছে কি না, জানি না! তবে বাড়িটি চমৎকার”, বলছেন ঐতিহ্যরক্ষাকর্মী, সাহিত্যিক অমিত চৌধুরী। তাঁর মত, পুরনো বাড়ির অন্দরমহল নিয়ে একটু সতর্ক থেকে একেলে অফিস চলাটা তো ভালই! করিন্থিয়ান থাম, খড়িখড়িওয়ালা জানলা নিয়ে প্রাচ্য, পাশ্চাত্য শৈলীর মিশেলে স্থাপত্যটির পুলিশ দেখভাল করছে তাতেই খুশি তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

ghost Kolkata Police Lal Bazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy