Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ভিড়ের তুলনায় ট্রেন নগণ্য, দুর্ভোগ মেট্রোয়

যাত্রী ও ট্রেনের সংখ্যার অনুপাতে এই বিশাল ফারাকই মেট্রোর যাবতীয় বিপদ ডেকে আনছে বলে দাবি করেছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ।

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০৩:২২
Share: Save:

গত সাড়ে তিন দশকে মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা বেড়েছে ১৫০ গুণেরও বেশি। সে তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা কিন্তু সে ভাবে বাড়েনি।

যাত্রী ও ট্রেনের সংখ্যার অনুপাতে এই বিশাল ফারাকই মেট্রোর যাবতীয় বিপদ ডেকে আনছে বলে দাবি করেছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ।

যে দিল্লি মেট্রোকে অনেকেই উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, তার নিরিখেও কলকাতা মেট্রোয় কিলোমিটার প্রতি দৈনন্দিন যাত্রী-সংখ্যা তিন গুণের বেশি। কলকাতার ক্ষেত্রে কবি সুভাষ থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত মাত্র ২৭ কিলোমিটার মেট্রোপথে সপ্তাহের কাজের দিনে যাত্রী-সংখ্যা সাত লক্ষের কাছাকাছি। দিল্লিতে আটটি রুটে ৩৪৩ কিলোমিটার মেট্রোপথে দৈনন্দিন যাত্রী-সংখ্যা ২৫ লক্ষের কিছু বেশি।

সিগন্যালিং এবং রেক-সহ অন্যান্য জরুরি পরিকাঠামোর দ্রুত বদল না ঘটালে কলকাতার পরিস্থিতি অচিরেই আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে বলে মনে করেন মেট্রোর প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তাদের একাংশ। ১৯৮৪ সালে মেট্রো পরিষেবা শুরু হওয়ার সময়ে দৈনন্দিন গড় যাত্রী-সংখ্যা ছিল চার হাজারের কাছাকাছি। সাড়ে তিন দশক পরে মেট্রোয় ওই সংখ্যাই প্রায় সাত লক্ষে গিয়ে ঠেকেছে।

১৯৯৫ সালে দমদম ও টালিগঞ্জের মধ্যে মেট্রো চলাচল শুরু হয়। ওই সময়ে প্রতিদিন ১০৬টি ট্রেন চলত। পরে ২০০০ সাল নাগাদ সেই সংখ্যা বেড়ে ১৫২ হয়। ওই সময়ে মেট্রোয় প্রতিদিন গড়ে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন বলে মেট্রো সূত্রের খবর।

এক দশক পরে ২০১০ সাল নাগাদ মেট্রোয় যাত্রীর সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছয় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজারে। তখন ওই সংখ্যক যাত্রীর জন্য সর্বোচ্চ ২২২টি ট্রেন চলত দিনে। পরে ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে মেট্রোয় উল্লেখযোগ্য হারে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু তত দিনে যাত্রীর সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। ২০১২ সালে মেট্রোয় ট্রেনের সংখ্যা ছিল ২৭০। পরে ২০১৪ সালে সেই সংখ্যা সামান্য বেড়ে হয় ২৭৪। তখনও মেট্রোর সময়ানুবর্তিতা নিয়ে সে ভাবে প্রশ্ন উঠত না। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৭৮। পরে ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ করে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে বেশ কিছু ট্রেন টালিগঞ্জ থেকে দমদমের মধ্যে চালানো শুরু হয়। কিন্তু পুরনো রেকগুলির স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় মেট্রোর সময়ানুবর্তিতা ধাক্কা খেতে শুরু করে। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ব্যস্ত সময়ে পাঁচ মিনিট অন্তর ট্রেন চালানো শুরু হয়। কিন্তু মেট্রোর পরিকাঠামোর অভাব ওই ব্যবধানে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে ক্রমেই অন্তরায় হয়ে উঠতে থাকে।

এ বছরের শুরুতে মেট্রোর পরিকাঠামো এবং সময়ানুবর্তিতার মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দিনে ২৮৪টি করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও যাত্রী-সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এ প্রসঙ্গে মেট্রোর এক প্রাক্তন আধিকারিক বলেন, ‘‘যাত্রীর চাপ সামলাতে মেট্রোর সিগন্যালিং ব্যবস্থা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর দ্রুত বদল প্রয়োজন। না হলে ভবিষ্যতে বরাহনগর, দক্ষিণেশ্বর, বিমানবন্দর রুটে মেট্রো চালু হলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Metro Accident Signaling System DMRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy