Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
kolkata municipal corporation

Futnani chamber: ভাড়াটেদের দখলে 'গ্রেড ওয়ান' হেরিটেজ, দখল মুক্ত করতে কোমর বেঁধে নামছে কলকাতা পুরসভা

২০১৯-’২০ সালেই ‘সরকারি এলাকা (বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ) আইন, ১৯৭১’ অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণ কালেক্টরের কাছে (অফিস অব দ্য ফার্স্ট ল্যান্ড অ্যাকুইজ়িশন কালেক্টর, কলকাতা) পুরসভা মামলা রুজু করেছে।

n ঐতিহ্য: ফুটনানি চেম্বার থেকে ভাড়াটে সরাতে চায় পুরসভা। নিজস্ব চিত্র

n ঐতিহ্য: ফুটনানি চেম্বার থেকে ভাড়াটে সরাতে চায় পুরসভা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪০
Share: Save:

প্রায় ২০০ জনের মতো ভাড়াটে। তবে তাঁদের প্রত্যেকেই ‘বেআইনি দখলদার’। ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজ মর্যাদাপ্রাপ্ত, অথচ ভগ্নপ্রায় ফুটনানি চেম্বারের সেই ভাড়াটেদের উৎখাত করতে এ বার কোমর বেঁধে নামতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।

২০১৯-’২০ সালেই ‘সরকারি এলাকা (বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ) আইন, ১৯৭১’ অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণ কালেক্টরের কাছে (অফিস অব দ্য ফার্স্ট ল্যান্ড অ্যাকুইজ়িশন কালেক্টর, কলকাতা) পুরসভা মামলা রুজু করেছে। যার ভিত্তিতে ভাড়াটেদের উচ্ছেদ নোটিস পাঠিয়েছে কালেক্টর অফিস। অতিমারি পরিস্থিতির আগে শুনানিও হয়েছে এক বার। ভাড়াটেরা তাতে উপস্থিত হয়ে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছিলেন। অতিমারির কারণে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার পরে ফের বিষয়টি নিয়ে উঠেপড়ে লাগতে চলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট ভাড়াটেরা ‘বেআইনি দখলদার’ কেন?

পুর নথির উল্লেখ করে পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৯১০-’১১ সালে ‘হিন্দুস্থান কোম্পানি ইনশিয়োরেন্স’ নামে একটি সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য ফুটনানি চেম্বার লিজ়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ। লিজ়ের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও অন্য একটি সংস্থা নিজেদের ‘সাব লিজ় হোল্ডার’ হিসেবে দাবি করে সংশ্লিষ্ট ভবনটি তাদের দখলে রেখেছিল। শেষমেশ ২০১৮ সালে আদালতের রায়ে ফুটনানি চেম্বার পুরসভার দখলে আসে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘ওই ভবনে আবাসিক, রেস্তরাঁ, দোকানপাট-সহ ১৮০ জনের মতো ভাড়াটে আছে। সবাই বেআইনি দখলদার। কারণ, তাদের যে সংস্থা ভাড়া দিয়েছিল, তারা পুরসভার সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়েছে। তা ছাড়া সেই ২০০৯ সালেই লিজ় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

তবে এখনও কিছু জটিলতা রয়ে গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। যেমন, ওখানকার একাধিক ভাড়াটে ফের আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবার নগর দায়রা আদালত ওই ভবন থেকে ভাড়া সংগ্রহের জন্য পুরসভার ডেপুটি মুখ্য আইন আধিকারিককে ‘রিসিভার’ হিসেবে নিয়োগের নির্দেশ দেয়। তবে আদালত এ-ও জানায়, আইন দফতরের ওই কর্তা ইচ্ছে করলে অন্য কাউকেও সেই ক্ষমতা প্রত্যর্পণ করতে পারেন। সেই মতো সংশ্লিষ্ট কর্তা হিমাংশুশেখর মণ্ডল (যিনি বর্তমানে পুরসভার অতিরিক্ত মুখ্য আইন আধিকারিক) পুরসভারই আর এক আধিকারিককে ‘রিসিভার’-এর ক্ষমতা প্রত্যর্পণ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে হিমাংশুবাবু বলেন, ‘‘বাজার দফতরের চিফ ম্যানেজারকে রিসিভারের ক্ষমতা প্রত্যপর্ণ করেছি। ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়টি বর্তমানে তিনিই দেখছেন।’’

ভাড়াটেদের দ্রুত সরানোর পিছনে ফুটনানি চেম্বারের আমূল সংস্কারের পরিকল্পনাও একটি কারণ বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। ওই ভবনটি পরিদর্শনও করেছেন পুর ইঞ্জিনিয়ার-সহ সংশ্লিষ্ট সংস্কারের কাজে পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা। তবে ফুটনানি চেম্বারের মূল কাঠামো অক্ষত রাখা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে পুর মহলের একাংশে। কারণ ওই ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল, কোথাও আবার বিপজ্জনক অবস্থায় চাঙড় ঝুলে রয়েছে। ফলে সেই অংশ পুরো ভেঙে নতুন ভাবে নির্মাণের প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। অবশ্য ওই ভবনের বিপজ্জনক দশা অনেক আগেই ধরা পড়েছিল। সাময়িক কিছু মেরামতি হলেও এত দিন আমূল সংস্কার হয়নি বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ।

তবে শুধু ফুটনানি চেম্বারই নয়, ধর্মতলা সংলগ্ন এলাকায় হেরিটেজ মর্যাদাপ্রাপ্ত অনেক ভবনেরই এমন দশা বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এ বিষয়ে হেরিটেজ স্থপতি সুবীর বসু জানান, রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। এমন নীতি তৈরি করতে হবে, যেখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে আয়ের বিকল্প পথও খোলা থাকে। প্রয়োজনে ঐতিহ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সুবীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘ফুটনানি চেম্বারের মতো ভবনগুলির স্থাপত্যের সঙ্গে ইতিহাস মিশে রয়েছে। কলকাতার ঐতিহ্য রক্ষা করতে গেলে এই ভবনগুলি সংরক্ষণের পরিকল্পনা করতেই হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy