Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

বান ও ঘূর্ণিঝড়ের জোড়া ফলায় উত্তাল আদিগঙ্গা, জলবন্দি মানুষ

তখন দুপুর প্রায় ১টা। আকাশে মেঘ কেটে মাঝেমধ্যে এক চিলতে রোদও দেখা যাচ্ছে। আবার ঝিরঝিরে বৃষ্টি।

দুর্ভোগ: গঙ্গায় বানের জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বুধবার, কালীঘাটে।

দুর্ভোগ: গঙ্গায় বানের জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বুধবার, কালীঘাটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ০৬:৪১
Share: Save:

ঘরের দরজায় যেন উত্তাল নদী। যার স্রোত ভাসিয়ে দিচ্ছে কালীঘাট রোড সংলগ্ন বাড়িঘর। ফলে ঘরে ঢুকে গিয়েছে এক কোমর জল। গঙ্গায় বান এলে আদিগঙ্গার জল উপচে কালীঘাট ও সংলগ্ন রাস্তা জলে ডুবে যাওয়ার দৃশ্য নতুন নয়। কিন্তু সেই পরিচিত ছবি অনেকটাই অপরিচিত ছিল বুধবার। যেখানে আদিগঙ্গা খাল যে কোনও উত্তাল নদীকেও হার মানাচ্ছিল। এ দিন গঙ্গায় ছিল ভরা কটাল। তার সঙ্গে ইয়াসের প্রভাবে যে ভাবে এ দিন ওই জল কালী টেম্পল রোড ও সংলগ্ন এলাকাকে ভাসিয়েছে, তা সাম্প্রতিক কালে হয়নি বলেই দাবি বাসিন্দাদের।

তখন দুপুর প্রায় ১টা। আকাশে মেঘ কেটে মাঝেমধ্যে এক চিলতে রোদও দেখা যাচ্ছে। আবার ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ওই রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই কালী টেম্পল রোডে হু হু করে জল বাড়ছিল। কালীঘাট মন্দিরের কাছে জল তখন এক কোমরের বেশি হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, রাস্তায় জল বাড়তে শুরু করে বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে। জলমগ্ন হয়ে পড়ে সদানন্দ রোড ও সংলগ্ন এলাকাও। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, রাস্তার মাঝখানের ম্যানহোল থেকে আদিগঙ্গার জল বেরোচ্ছিল হু হু করে। ওই জল বন্ধের চেষ্টা করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও বৃথাই গিয়েছে সেই চেষ্টা।

সেই জল রাস্তা ছাপিয়ে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে পড়ে। গাঙ্গুলিপাড়ার অনেক বাড়ির ভিতরে জমে যায় এক কোমর জল। পুষ্পা পাণ্ডের ঘরে জলের মধ্যে জেগে ছিল শুধু বিছানা। তার উপরেই বালতি থেকে রান্নার জিনিসপত্র সব। এর মধ্যেই কোনওক্রমে বসে রয়েছেন দুই বাসিন্দা। পুষ্পাদেবী বলেন, “গঙ্গায় বান এলে আদিগঙ্গার জল উপচে ভাসিয়ে দেয় রাস্তা। কিন্তু এ ভাবে জল ঘরে ঢুকে পড়ত না। জল আরও বাড়লে খাটটাও ডুবে যাবে।’’ অন্য বাসিন্দা কিশোর দাসের গ্যাসের সিলিন্ডারও জলের নীচে চলে গিয়েছে। রান্নার বাসন একটু উঁচু জায়গায় সরিয়ে রাখায়, রক্ষা পেয়েছে সে সব। তিনি বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তো পড়লই না এখানে। তাতেই গঙ্গার জল বেড়ে এত ক্ষতি হয়ে গেল। যদি সঙ্গে ভারী বৃষ্টি নামত, তা হলে তো বাড়ি ছেড়ে পালাতে হত। কিছু বাঁচাতে পারতাম না।’’ অন্য এক বাসিন্দার আক্ষেপ, ‘‘ছেলের বইগুলো জলে ভিজে গিয়েছে।’’ ওঁদের সকলের অভিযোগ একই, “গঙ্গায় বান এলেই রাস্তা জলমগ্ন হয়। এই দুর্ভোগের কি সমাধান নেই?” স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজু পাল বলেন, ‘‘এখানে তো

জোয়ার এলেও রাস্তা এমন ভাবে ভেসে যায় যে, দোকান বন্ধ করে রাখতে হয়। লোকাল লকডাউন তাই আমাদের চেনা।’’

টালিগঞ্জ, চারু মার্কেট, কালীঘাট-সহ আদিগঙ্গা তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে আগে থেকেই সচেতনতার প্রচার চালিয়েছে কলকাতা পুলিশ। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। মূলত সেটা জানাতেই এই প্রচার চলেছিল।

এ দিকে খবর পেয়ে কালীঘাট ও সংলগ্ন এলাকার পরিদর্শনে আসেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার। তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য গঙ্গার জলের উচ্চতা বেড়েছে, সঙ্গে ভরা কটাল। এই দুইয়ের প্রভাবেই আদিগঙ্গার জলস্তর অনেকটা বেড়ে আশপাশ প্লাবিত করেছে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy