রিঙ্কি সাউ
সাম্প্রতিক একটি হিন্দি ছবিতে বান্ধবীর প্রেমে অন্ধ এক তরুণীকে ক্রমে ভয়ঙ্করী হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছিল। এতটাই ভয়ঙ্কর যে, বান্ধবীর বন্ধু ও ভাবী বরকে মেরে ফেলার ছক কষে সে। সেই তরুণীর মৃত্যুতে শেষ হয়েছিল ছবি। সেলুলয়েডের ছায়া ও মায়া থেকে সেই বৃত্তান্ত ফিরে এল গার্ডেনরিচে। হুবহু নয়। গল্পও নয়। একেবারে রক্তমাংসের বাস্তবে। এখানে অবশ্য প্রণয়িনী তরুণীর মৃত্যু হয়নি। খুন হয়েছে তার বান্ধবী। আর তার পরেই উধাও অভিযুক্ত তরুণী।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিএনআর কলোনির আবাসনে এক কিশোরীকে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। নিহতের নাম রিঙ্কি সাউ। বাড়ি ওই আবাসনেই। প্রেমে প্রত্যাখ্যানের জ্বালায় তার এক বান্ধবীই তাকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত তরুণীর নাগাল পায়নি পুলিশ। এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় একই সঙ্গে বিস্ময় আর উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই কলোনির ১১৬/৮ ব্লকের দোতলায় শুক্র সর্দার নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ করত রিঙ্কি। রেলকর্মী শুক্রবাবু জানান, এ দিন সন্ধ্যায় হঠাৎ তাঁর বাড়ির নীচে কিছু ছেলেকে চিত্কার করে বলতে শোনা যায়, কাকে যেন খুন করা হয়েছে। শোরগোল শুনে বাইরে বেরিয়ে তিনি দেখতে পান, তাঁদের আবাসনের পেঁচানো লোহার সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক কিশোরী। কাছে গিয়ে তিনি দেখেন, মেয়েটি আর কেউ নয়, তাঁরই বাড়ির কিশোরী পরিচারিকা রিঙ্কি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খবর দেন আরপিএফ-কে। তত ক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে। তারই মধ্যে চলে আসে পুলিশ। রিঙ্কিকে তারাই নিয়ে যায় লাগোয়া রেল হাসপাতালে। তবে সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
পুলিশ জানায়, ওই কিশোরীর শরীরে ধারালো অস্ত্রের বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। অভিযুক্ত তরুণী এবং তার পরিবারের অন্য সকলেই পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। রিঙ্কির মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নিছক সমলিঙ্গের প্রেম এবং তাতে ব্যর্থতা, নাকি এই খুনের পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে, পুলিশ সবই খতিয়ে দেখছে।
কী কারণে কিশোরী খুন?
রিঙ্কির এক মাসি এবং কিশোর ভাই আঙুল তুলছেন ওই কলোনিরই এক তরুণীর দিকে। তাঁরা জানান, ওই আবাসনের দোতলায় দুই বোন, দুই ভাই ও মায়ের সঙ্গে থাকত রিঙ্কি। কয়েক বছর আগেই তার বাবা মারা গিয়েছেন। মন্দিরা ওরফে ডাবরি নামে ওই কলোনির এক তরুণীর সঙ্গে রিঙ্কির বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু ডাবরির দিক থেকে সেটা নিছক দুই কিশোরী-তরুণীর বন্ধুত্ব ছিল না। রিঙ্কির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল ডাবরি। কিন্তু ওই কিশোরী এই ধরনের কোনও সম্পর্ক গড়তে চায়নি বলেই জানান তার মাসি ও ভাই। অথচ ডাবরি নাছোড়। এতটাই যে, তাকে বিয়ে করার জন্য রিঙ্কিকে পীড়াপীড়ি করতে থাকে সে। প্রত্যাখ্যান করে রিঙ্কি। সেটা কয়েক মাস আগেকার কথা। রিঙ্কি রাজি নয় জেনেও হাল ছাড়েনি ডাবরি। তাকে বিয়ে করার জন্য মাঝেমধ্যেই ওই কিশোরীকে চাপ দিত সে।
রিঙ্কির পরিবার ইতিমধ্যে বাবুবাজারের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে। মাস দুয়েক পরেই বিয়ের কথা ছিল। ডাবরি সেটা জানতে পেরে রিঙ্কিকে হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ। এ দিন সন্ধ্যায় রাহুল নামে এলাকারই এক যুবকের সঙ্গে ডাবরিকে তাদের বাড়ির নীচে ঘোরাফেরা করতে দেখে রিঙ্কির ভাই। তার কথায়, ‘‘আমি টিউটরের কাছে যাওয়ার সময় দেখলাম, রাহুল আর ডাবরি আমাদের ঘরের নীচে ঘোরাফেরা করছে। ওরা কেমন কেমন চোখে যেন আমাকে দেখছিল! তখন দিদি ঘরে একাই ছিল। ডাবরি-রাহুলের ভাবগতিক দেখে আমি ওকে সাবধান করে দিয়ে পড়তে চলে যাই। তার পরে টিউটরের কাছে পড়তে পড়তেই শুনি, আমার দিদিকে খুন করা হয়েছে। দৌড়ে চলে আসি।’’
পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে রেল আবাসনে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানিয়ে দেন, ওই কিশোরী খুনের সঙ্গে রেলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশই এর তদন্ত করবে। অভিযুক্ত তরুণীর সঙ্গী রাহুলের পুরো নাম বা ঠিকানা জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। তারও খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy