রেড রোডের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বাস ফাইল চিত্র
চাকা ঘোরেনি প্রায় দেড়-দু’মাস। রোদে, বৃষ্টিতে এত দিন ধরে রাস্তায় পড়ে ছিল বাসগুলি। যার ফলে অধিকাংশেরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়াটা আশ্চর্যের কিছু নয়। সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরে সেই সমস্ত বাস এ বার পথে নামতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এত দিন পরে সব ক’টি বাস আদৌ পথে নামার মতো অবস্থায় আছে কি?
বৃহস্পতিবার রেড রোডের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে এই প্রশ্নই তুলেছেন যাত্রীদের অনেকে। যদিও মেটিয়াবুরুজ-হাওড়া রুটের ওই মিনিবাস ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে বাসমালিকেরাও মানছেন যে, গত দু’মাস ধরে বসে থাকায় প্রায় সমস্ত বাসেরই মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করানো দরকার। অধিকাংশ বাসের ক্ষেত্রেই ব্রেক প্যাডেল শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ক্লাচ বা গিয়ার বক্সের সমস্যা— নানা রকম বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সেই কারণে রাস্তায় নামার আগে ব্রেক ও ক্লাচের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে নেওয়াটা খুব জরুরি।
মালিকদের অনেকেরই অবশ্য বক্তব্য, এখন রক্ষণাবেক্ষণের পিছনে মোটা টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই তাঁদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে সমস্ত বাস ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমেছে, সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কোনও কাজ হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাসচালকেরা জানিয়েছেন, বাস বসে থাকলে চাকা, ব্যাটারি, ইঞ্জিন সংলগ্ন রাবারের বিভিন্ন টিউব ও পিস্টন-সহ একাধিক যন্ত্রাংশে সমস্যা দেখা দিতে পারে। রেড রোডে যে বাসটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটির চাকার অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বাস বেশি দিন না চললে চাকা শক্ত হয়ে গিয়ে আচমকা টায়ার ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানালেন এক চালক। বর্ষাকালে জলে ভিজে গেলে টায়ারের আরও বেশি ক্ষতি হয় বলে তাঁর দাবি। বৃষ্টির মধ্যে বাস চালানোর সময়ে যে কোনও গাড়িরই ‘ব্রেকিং ডিস্ট্যান্স’ (নির্ভুল ভাবে ব্রেক কষার জন্য ন্যূনতম দূরত্ব) দ্বিগুণ হয়ে যায় বলে জানালেন এক মোটরযান বিশেষজ্ঞ। রাস্তায় ঘর্ষণ কমে যাওয়ার দরুণ ওই সমস্যা হয়। ফলে, যথেষ্ট আগে ব্রেক না কষলে কিংবা বাঁক নেওয়ার সময়ে গতি না কমালে দুর্ঘটনা প্রায় অনিবার্য। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দিন স্টিয়ারিংয়ে না বসলে চালকদের মধ্যেও অনভ্যাসের একটা প্রভাব পড়ে। তাই যাত্রী পরিবহণের কাজে যুক্ত বাস রাস্তায় নামানোর আগে ভাল ভাবে মেরামতির কাজ করিয়ে নেওয়া উচিত।’’
‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা জানালেন, বাস বসে থাকলে ব্যাটারি ডাউন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেলফ স্টার্ট এবং ওয়াইপারের ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। তাই একাধিক যন্ত্রাংশ বদলাতে হয় অথবা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হয়। টিটুবাবু জানান, এখন বাস নামাতে হলে ভাল রকম খরচ করতে হবে মালিকদের। সেই কারণেও অনেকে বাস নামাতে চাইছেন না। বহু বাসের আবার প্রয়োজনীয় শংসাপত্র নেওয়ার কাজও আটকে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
‘বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বললেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের টাকা জোগাড় করাটাই এখন চ্যালেঞ্জ। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে আশ্বাস না পেলে ওই টাকা খরচ করা সম্ভব নয় অধিকাংশ মালিকের পক্ষে।’’ ‘বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বেশির ভাগ বাসেরই ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আরও অনেক যন্ত্রাংশ বিকল। মেরামতিতে অনেক টাকার ধাক্কা। অনেকেই ইতস্তত করছেন। ভাড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সমস্যা বাড়াচ্ছে।’’ ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে অনড় থাকলেও বাসমালিকদের অধিকাংশই অবশ্য মানছেন, নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও রকম আপস করা উচিত নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy