Advertisement
E-Paper

সরকারি কালো তালিকায় থাকা বাজি কারখানার খোঁজ কি নিয়েছে পুলিশ

পরিবেশকর্মী থেকে সচেতন নাগরিকদের অনেকেরই প্রশ্ন, সরকার নিজেই যে সমস্ত কারখানা চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছিল, সেগুলির বিরুদ্ধেও কি কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে?

বেআইনি বাজি কারখানা।

বেআইনি বাজি কারখানা। —প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৩
Share
Save

আঠারো মাস আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করে দেওয়া, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বৈঠকের (৫ অগস্ট, ২০২৩) কার্যবিবরণী বলছে, সেই সময়ে ৫৫৫৬টি বেআইনি বাজি কারখানা চিহ্নিত করেছিল সরকার। বলা হয়েছিল, ১৫ দিনের মধ্যে আরও এমন কারখানা চিহ্নিত করে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে সমস্ত জেলার জেলাশাসক, এসপি-দের। জাতীয় পরিবেশ আদালতে উপস্থিত হয়েও একই কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। তবে, একাধিক বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরে মঙ্গলবার রাজ্য পুলিশের শীর্ষ স্তর থেকে মন্তব্য করা হয়, কোন বাড়িতে কী হচ্ছে, তার সব খবর পুলিশের কাছে আসা সম্ভব নয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মী থেকে সচেতন নাগরিকদের অনেকেরই প্রশ্ন, সরকার নিজেই যে সমস্ত কারখানা চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছিল, সেগুলির বিরুদ্ধেও কি কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে? নাকি এ ক্ষেত্রেও সমস্তটাই ‘সচেতনতার অভাব এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’ বলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে?

পরিবেশকর্মী তথা সবুজ মঞ্চের আহ্বায়ক নব দত্ত বললেন, ‘‘বাড়ির ভিতরে কী মজুত করা হচ্ছে, সেই খবর সব সময়ে পুলিশের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয় বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকার নিজেই যে কারখানা সাম্প্রতিক অতীতে চিহ্নিত করেছে, সেখানে কী হচ্ছে, সেই খবরও কি পুলিশের কাছে আছে?’’ এই মনোভাবের আড়ালে আদতে বেআইনি বাজির মারণ ব্যবসার মুক্ত পরিসর তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। তাঁদের দাবি, এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সবুজ বাজি ছাড়া সব ধরনের বাজি তৈরি এবং বিক্রিই নিষিদ্ধ। সে জন্যও প্রতি বছর ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা নিরি থেকে লাইসেন্স নবীকরণ করাতে হয়। নিরি-র বেঁধে দেওয়া নিয়ম মেনে সবুজ বাজি তৈরি করে প্রতিটি বাজি তাদের কাছে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয়। এর পরে নিরি ছাড়পত্র দিলে তবেই সে বাজি বিক্রি করা যায়। কিন্তু গত এক বছরে রাজ্যে কোনও লাইসেন্স নবীকরণ করা হয়নি বলে সূত্রের খবর। কোনও বাজিই পরীক্ষা করে দেখেনি নিরি। সে দিক থেকে এই মুহূর্তে রাজ্যে যে বাজিই তৈরি হচ্ছে, তার সমস্তটাই বেআইনি এবং নিষিদ্ধ বলে পরিবেশকর্মী থেকে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য।

আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্রের প্রশ্ন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট (১১ ডিসেম্বর, ২০১৮) যেখানে দেশে সারা বছরে মাত্র সাড়ে ছ’ঘণ্টা বাজি ফাটানোর সময় বেঁধে দিয়েছে, সেখানে সারা বছর বাজি তৈরি করে কী হবে? সেই ব্যবসায় প্রচুর মানুষ যুক্ত থাকেনই বা কী করে?’’ তবে কি বাজির আড়ালে এমন কারখানায় অন্য কিছু হয়, প্রশ্ন অনেকেরই। পরিবেশকর্মীদের দাবি, বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মামলায় জাতীয় পরিবেশ আদালত ২০১৫ সালের নভেম্বর এবং ২০১৬-র অগস্টে দু’টি নির্দেশে স্পষ্টই বলেছে, রাজ্যে বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরি হয় এবং কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় প্রচুর বেআইনি বাজি কারখানা চলছে।

বাজি তৈরির ব্যবসার সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, গত বছরের মে মাসে ‘মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস অ্যান্ড টেক্সটাইলস’ (এমএসএমই) দফতরের অধীনে সবুজ বাজি প্রস্তুত, মজুত এবং বিক্রি সংক্রান্ত একটি স্কিম ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। সেটির নাম দেওয়া হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার ম্যানুফ্যাকচারিং, স্টোরেজ অ্যান্ড সেলিং স্কিম’ বা ডব্লিউবিজিএফএমএসএস। ১৫ কেজি পর্যন্ত বাজি এবং বাজির মশলা তৈরির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয় জেলাশাসকের কাছ থেকে। ১৫ থেকে ৫০০ কেজি হলে লাইসেন্স নিতে হয় ‘কন্ট্রোলার অব এক্সপ্লোসিভস’-এর থেকে। তারও বেশি ওজনের বাজির ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্স দেন ‘চিফ কন্ট্রোলার’। পাশাপাশি, নিয়ম অনুযায়ী, একটি কারখানা অন্যটির থেকে ১৫ মিটার দূরে হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাজির মশলা তৈরি, বাজি তৈরি এবং বাজি প্যাকেটবন্দি করার কাজও আলাদা ভাবে করতে হয়। কিন্তু অভিযোগ, এই সব নিয়মের সবটাই থেকে যায় শুধুই খাতায়-কলমে। এক বাজি ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘নিরি থেকে সোয়াস বা ‘সেফ ওয়াটার রিলিজ়ার’, স্টার বা ‘সেফ থার্মাইট ক্র্যাকার’ এবং সাফাল বা ‘সেফ মিনিম্যাল অ্যালুমিনিয়াম’— এই তিন ধরনের বাজি তৈরিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু আদতে চলতে থাকে যেমন খুশি বাজি-বোমা বানানোর কারবার।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal factory Firecrackers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}