Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Metro

অচেনা পাতাল প্রবেশ, ‘মিস’ করলাম কটাক্ষ

দূরত্ববিধি মেনে সাত জনের বদলে এখন সিটে বসার অনুমতি রয়েছে চার জনের।

যাত্রা: সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রথম দিনে ফাঁকা ছিল মেট্রো। তবে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ছবিও চোখে পড়েছে। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

যাত্রা: সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রথম দিনে ফাঁকা ছিল মেট্রো। তবে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ছবিও চোখে পড়েছে। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১৬
Share: Save:

১১টার মেট্রো ধরতে না পারলেই বিপদ! ডানলপ-নোয়াপাড়া রুটের অটোর লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বার বার এটাই মনে হত। অটোতে উঠেই চালককে বলতাম, ‘দাদা, মেট্রোটা পাব তো?’ কোনও দিন চোখের সামনে হুশ করে বেরিয়ে যেত মেট্রো। কোনও দিন হুড়মুড়িয়ে উঠতাম।

করোনা থামিয়ে দিয়েছিল এই রোজনামচা। ২৩ মার্চ থেকে তালা ঝুলেছিল শহরের পাতাল পথেও। বিস্তর জল্পনার পরে সোমবার আবার আমার ‘পাতাল প্রবেশ’। চিন্তা হচ্ছিল। সিট নিয়ে কি সেই ধাক্কাধাক্কি হবে, শুনতে হবে সহযাত্রীর কটাক্ষ, ‘সোজা হয়ে দাঁড়ান’?

জানাই ছিল, একগুচ্ছ সুরক্ষা বলয় মেনে ছুটবে মেট্রো। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ‘পথদিশা অ্যাপ’ থেকে সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১১টার স্লট বুক করলাম। আর সোমবার খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেলাম নোয়াপাড়া স্টেশনে। কিন্তু পরিবেশটাই অচেনা! ঘিঞ্জি রাস্তা জুড়ে বাইকের গ্যারাজ ফাঁকা। অটোর লাইন, চায়ের দোকানের জটলা নেই। বরং স্টেশনে ঢোকার সিঁড়িতে ভিড় করে রয়েছেন কয়েক জন। কান পাততেই বোঝা গেল, ওঁরা অ্যাপের বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি। তাই কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ারের শরণাপন্ন। আর এক পাশে আমার মতো অন্য যাত্রীরা লাইন দিয়েছেন, যাঁরা ‘বারকোড’ পেয়ে গিয়েছেন। মোবাইলের গ্যালারিতে থাকা সেই ‘বারকোড’ দূর থেকে দেখাতেই অনুমতি মিলল স্টেশনে ঢোকার।

তবে পুরনো অভ্যাস তো! আবার তাড়াহুড়ো করে এগোতে গেলাম। নাহ্! আগে হাত স্যানিটাইজ় করা, তার পর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করানো, তবে তো এগোনো স্মার্টগেটের দিকে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো মেট্রো রেকে তখন জীবাণুনাশের কাজ চলছে। আর মেট্রোতে সওয়ারের মুহূর্ত মোবাইল বন্দি করতে ব্যস্ত যাত্রীরা। তার পর? ১০টা তিন মিনিট। বহু, বহু দিন মনে থাকবে সময়টা। ছাড়ল মেট্রো—ডিকে-২২।

দূরত্ববিধি মেনে সাত জনের বদলে এখন সিটে বসার অনুমতি রয়েছে চার জনের। দূরত্ববিধির দুশ্চিন্তা কাটিয়ে তত ক্ষণে ‘মিস’ করতে শুরু করেছি ওই শব্দগুলো—‘একটু চেপে বসুন না’! তবে দমদম আসতেই আবার ভয় ভয় করছিল। দমদম মানেই তো আছড়ে পড়া যাত্রীর ভিড়, দরজা খুলতে না খুলতে জনস্রোত, রাগারাগি। এ দিন কোথায় কী? যে যাত্রীরা ছিলেন, ধীরেসুস্থেই উঠলেন কামরায়। এসি কামরার কনকনে ঠান্ডা কিংবা নন এসি কামরার ভ্যাপসা গরমে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ আর নয়, এ দিন স্বচ্ছন্দে পছন্দের সিট খুঁজে নিলেন অনেকেই।

বেলগাছিয়া-শ্যামবাজার পেরিয়ে যাত্রী সংখ্যা বাড়ল আরও। তত ক্ষণে অবশ্য সব আসনই প্রায় ভর্তি। তাই ইতিউতি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল যাত্রীদের। তবে আগে যেখানে দাঁড়ানোর জন্যও কসরত করতে হত, এ দিন সেখানে পছন্দ মতো দাঁড়ানোর সুযোগ। করোনা নিয়ে ঘোষণা ছাপিয়েই যাত্রীদের কেউ আলোচনা করছিলেন, ‘অ্যাপটা আর একটু সরল করলে ভাল হত’। আবার কারও আশঙ্কা, ‘লোকাল ট্রেন চালু হলে কি এত ফাঁকা থাকবে কলকাতা মেট্রো!’

পার্ক স্ট্রিট ছাড়তেই দেখা গেল, আর কেউ দাঁড়িয়ে নেই। বরং অনেক আসনই ফাঁকা। মহানায়ক উত্তমকুমার ছাড়তেই আরও ফাঁকা কামরা। কবি সুভাষ স্টেশনে ঢোকার আগে তো গোটা ট্রেনে বড়জোর জনা পাঁচেক।

কাজ মিটিয়ে ফিরতি ট্রেনে আবার উঠলাম। প্রথম থেকে শেষ কামরার মাঝে থাকা স্টিলের হাতলগুলি দেখা যাচ্ছিল সরলরেখায়। আর দু’পাশে ইতিউতি বসা মাস্ক পরা যাত্রীদের নিস্তব্ধতায় হারিয়ে যাচ্ছিল অফিস-সময়ের চেনা হইচই।

স্বাগত অচেনা মেট্রো! করোনা-আবহে শহরের ফিরে পাওয়া ‘লাইফলাইন’।

তবে ওই যে, ‘মিস’ করছিলাম—‘একটু চেপে বসুন না!’ বা ‘ভিড়ে যদি এত অসুবিধা হয়, ক্যাবে যান।’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Metro Lockdown Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy