লড়াই: আগুন নেভানোর কাজ চলছে। রবিবার, রাজাবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ
পাঁচতলা ফ্ল্যাটের একতলা থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখেছিলেন স্থানীয়েরা। রবিবার দুপুরে রাজাবাজার মোড়ে ওই ফ্ল্যাটের উপরে তখনও আটকে জনা দশেক পরিবার। ওই ফ্ল্যাট লাগোয়াই রয়েছে বাজার। আগুনের পরোয়া না করেই স্থানীয় কয়েক জন যুবক ফ্ল্যাটে উঠে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধার করে নীচে নামান। তাঁদের তৎপরতায় খুশি দমকলমন্ত্রী থেকে দমকলের ডিজি প্রত্যেকে। এ দিনের আগুন যে আরও ভয়াবহ আকার নেয়নি, তার জন্য ওই যুবকদেরই কৃতিত্ব দিলেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ রাজাবাজার মোড়ে ১, এম এন চ্যাটার্জি সরণির পাঁচতলা ভবনের নীচের তলা থেকে প্রথম আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফ্ল্যাট লাগোয়া গ্যাস স্ট্রিটে একটি বাজার বসে। ওই বহুতল থেকে আগুন ধীরে ধীরে আশপাশে ছড়াতে থাকায় আতঙ্কিত স্থানীয়েরাই পুলিশ এবং দমকলে খবর দেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকলের এগারোটি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় সূত্রের খবর, আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে জড়ো হন। তাঁদের মধ্যে থেকেই কয়েক জন ওই ফ্ল্যাটে উঠে কুড়ি জন বাসিন্দাকে উদ্ধার করে নামান। স্থানীয়েরা জানান, উদ্ধার করার পরে দু’জন বাসিন্দা ধোঁয়ার জেরে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তাঁদের পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শুশ্রূষা করা হয়।
ওই বহুতল-সহ বাজারের চারটি দোকান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। লাগোয়া দোকানের মালপত্রও সরাতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, দমকলের ডিজি জগমোহন, ডিসি (কমব্যাট ব্যাটেলিয়ন ফোর্স) নভেন্দ্র সিংহ পাল-সহ লালবাজার এবং শহরের একাধিক থানার পুলিশ। দমকলের সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। সেই সময়ে রাজাবাজার থেকে ফুলবাগান যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাড়ি অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে সামান্য যানজট হয় ওই সব রাস্তায়।
এ দিনের দুর্ঘটনার পরে ওই বহুতলের বাসিন্দারা মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। বহুতলটির তেতলায় থাকেন মহম্মদ আখতার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এটা বসতবাড়ি। কিন্তু বাড়িটির মালিক গত ছ’মাস ধরে বেআইনি ভাবে কারখানা চালাচ্ছেন। সেখানে প্রচুর দাহ্য পদার্থ মজুত করা থাকে। এ নিয়ে আমরা সকলে আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে কথায় কোনও কান দেওয়া হয়নি। আগেও এক বার এখানে ছোট আগুন লেগেছিল। ওই বেআইনি কারখানার জন্যেই আজ আমাদের ভুগতে হল।’’ দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বসতবাড়িতে কারখানা খোলার অনুমতি ছিল না। বেআইনি ভাবে চলছিল ওই কারখানা। মালিকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে।’’
দমকলমন্ত্রী বলেন, ‘‘ফ্ল্যাটটির একতলায় প্লাস্টিকের কারখানা ছিল। প্রচুর রাসায়নিক মজুত ছিল সেখানে। ওখান থেকেই আগুন ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। কী ভাবে আগুন লাগল সেটা ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে জানা যাবে।’’ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরে দেখা গিয়েছে একতলায় প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ এবং পিভিসি মজুত করা রয়েছে। ওই কারখানার মালিকের খোঁজে তাঁর ফ্ল্যাট এবং আশপাশ এলাকায় সন্ধান চালিয়েও পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগুন লাগার পরপরই তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। মোবাইলে চেষ্টা করা হলেও মালিককে ধরা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy