বোমায় এ ভাবেই উড়ে গিয়েছিল পায়ের পেশির একাংশ। সোমবার বাড়িতে মিলনবাবু। নিজস্ব চিত্র
উনিশ বছর আগে এই নভেম্বর মাসেই তাঁর উপরে হামলা হয়েছিল। অভিযোগ, সে বার তাঁকে লক্ষ করে গুলি ছোড়া হয়। মারা হয় বোমাও। ছ’মাসেরও বেশি হাসপাতালে থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরেন তিনি।
এত বছর পরে ফের সেই নভেম্বর মাসেই তাঁকে লক্ষ করে ফের গুলি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পর্ণশ্রীর ১১৯ নম্বর কাজিপাড়া রোডের বাসিন্দা মিলন চট্টোপাধ্যায়। এলাকায় তিনি প্রোমোটার বলে পরিচিত।
কিন্তু মিলনবাবু একটি সরকারি চাকরিও করেন। দমকল বিভাগের কর্মচারী তিনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার রাত আটটা নাগাদ মিলনবাবু পর্ণশ্রী থানায় ফোন করে তাঁর উপরে হামলার কথা জানান। মিলনবাবুর দাবি, তাঁর নাম করে কেউ ডাকায় তিনি বাড়ির দোতলার বারান্দায় বেরিয়েছিলেন। সেই সময়েই তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয়। হামলা হয়েছে বুঝতে পেরেই দৌড়ে ঘরে ঢুকে যান মিলনবাবু। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পর্ণশ্রী থানার পুলিশ। যদিও রবিবার রাতে এবং সোমবার সকালেও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কোনও কার্তুজের খোল পায়নি। ডিভিশনাল অফিসার মিরাজ খালিদ বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে দেখছি।’’
সোমবার মিলনবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ বাইরে পাহারায় বসে। ওই প্রোমোটার জানান, রবিবার তিনি ব্যবসা সংক্রান্ত একটি ফাইল নিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ফাইল নিয়ে বেরোনোর মুখে শুনতে পান, কেউ তাঁর নাম ধরে ডাকছে। কে ডাকছে, দেখতে যেতেই গুলি চালায় সেই আততায়ী। মিলনবাবুর দাবি, ‘‘গুলি চলতেই আমি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ি এবং সঙ্গে সঙ্গে নীচে নেমে পাশের রাস্তার দিকে দৌড়ই। কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনি।’’
তাঁর দাবি, আওয়াজ শুনে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁরাও কাউকে দেখতে পাননি। মিলনবাবুর বক্তব্য, তাঁর বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি এবং বড় রাস্তা। সেখানে সিসি ক্যামেরা থাকলে সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখুক পুলিশ।
মিলনবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, আততায়ীর উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো। রাস্তায় আলো না থাকায় তিনি মুখটা ভাল করে দেখতে পাননি। তাঁর দাবি, কে বা কারা তাঁকে মারতে চাইছে, তা তাঁর জানা নেই।
মিলনবাবু জানিয়েছেন, দমকলকর্মী হিসেবে কাজ করলেও তিনি পারিবারিক নির্মাণকাজের ব্যবসাও দেখভাল করেন। আগে ওই ব্যবসা তাঁর বাবা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের নামে ছিল। বাবার মৃত্যুর পরে স্ত্রী ডালিয়ার নামে ব্যবসা চালাচ্ছেন ওই প্রোমোটার। তাঁর দিদি কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাগ্নে বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়ও যৌথ ভাবে ওই ব্যবসার ভাগীদার।
মিলনবাবু জানান, ব্যবসায়িক কারণেই ১৯ বছর আগে তাঁর উপরে হামলা হয়েছিল। সেই সময়ে বেহালা থানার অন্তর্গত ওই জায়গায় খুনখারাপি লেগেই থাকত। যিশু জৈন নামে এক দুষ্কৃতী দলবল নিয়ে ১৯৯৮ সালের ১৮ নভেম্বর সকাল দশটায় তাঁর উপরে হামলা চালায়। অভিযোগ, তাঁকে লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়, ছোড়া হয় বোমাও। ওই ঘটনায় মিলনবাবু মারাত্মক জখম হওয়ায় দুষ্কৃতীরা ভেবে নেয়, তিনি মারা গিয়েছেন। তাই তাঁকে রাস্তায় ফেলে চলে যায় তারা। কিন্তু কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে যান মিলনবাবু। অস্ত্রোপচার করে সুস্থ হতে ছ’মাসের উপর লেগে যায়।
কিন্তু এত বছর পরে ফের কে হামলা করল? কোনও সিন্ডিকেট বা অন্য কোনও শত্রু?
মিলনবাবুর দাবি, তাঁদের ওই নির্মাণ সংস্থা অনেক পুরনো এবং বড় মাপের। তাই তিনি কোনও সিন্ডিকেট দিয়ে কাজ করান না। তাঁর কথায়, ‘‘নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে পর্ণশ্রী এলাকায় কোনও সিন্ডিকেট খুব বেশি সক্রিয় নয়। তবে ইদানীং কোনও কাজ হলে সেখানকার ‘সুপার স্ট্রাকচার’ তৈরির কাজ কিছু সিন্ডিকেট করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও সিন্ডিকেট থেকে কাজ করার দাবি বা অনুরোধ আসেনি। সম্প্রতি কোনও হুমকিও পাইনি। তাই হামলা কারা চালাল, জানি না।’’
মিলনবাবু জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে তাঁর বাড়ির চত্বরে থাকা কুকুরটি চুপ করে ছিল। পরে পুলিশ এলেও সে কোনও শব্দ করেনি। এই বিষয়টি তাঁর কাছে বেশ অস্বাভাবিক ঠেকেছে। কারণ, কুকুরটি অচেনা কাউকে দেখলেই চিৎকার করে।
নিজের নিরাপত্তা-সহ পরিবারের কথা ভেবে মিলনবাবু এখন নিজেই বাড়ির চারপাশে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছেন। তিনি জানান, ১৯৯৮-এর হামলার পর থেকে গত পুজোর আগে পর্যন্ত সব সময়ে তাঁর জন্য পুলিশি নিরাপত্তা থাকত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy