প্রতীকী ছবি।
শৌচাগারে যাওয়ার জন্য গভীর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সত্যনারায়ণ ভট্টাচার্য। অভিযোগ, ফিরে আসার পথে হঠাৎই কানে যে ঠান্ডা জিনিসটি অনুভব করলেন, সেটা ছিল একটা রিভলভার।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর দিকে নির্দেশ এল, ‘‘কাছে যা আছে, খুলে দে।’’ যাদের কাছ থেকে নির্দেশ এল, তাদের প্রত্যেকের মুখ রুমালে ঢাকা। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র আর তাজা বোমা। অভিযোগ, এর পরে রাস্তা থেকে সত্যনারায়ণবাবুকে ঠেলে বাড়িতে ঢুকিয়ে তাঁর আংটি ও সোনার হার ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। সোমবার রাতে এই ঘটনা ঘটে ব্যারাকপুরের পলতার নেতাজিপল্লিতে।
দুষ্কৃতীরা এর পরে একে একে ওই বাড়ির অন্যদের গয়নাও লুট করে। বাড়ির বাসিন্দাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে পড়শিরা জেগে গেলে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। সকালে জানা যায়, আরও দু’টি জায়গায় লুটপাট চলেছে সেই রাতেই। কয়েকটি দোকান ভেঙেও লুটের চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সব ক’টি হামলাই একটি দুষ্কৃতী দলের কাজ। তাদের খোঁজ চালাচ্ছে নোয়াপাড়া থানার পুলিশ।
এই ঘটনাতেও অবশ্য রাজনীতির রং লেগে গিয়েছে। এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত সত্যনারায়ণবাবুর দাবি, দুষ্কৃতীরা তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘‘তোর বিজেপি করা ঘুচিয়ে দেব।’’ কেন তাঁকে বিজেপি সমর্থক হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হল, তা কোনও ভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের।
এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর পারমিতা বসুর অভিযোগ, পুরোটাই বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাজ। তাঁদের বদনাম করার জন্যই এই ধরনের বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতা উজ্জ্বল সেনের অবশ্য পাল্টা দাবি, তৃণমূলই তাঁদের বদনাম করার চেষ্টা করছে।
ঠিক কী ঘটেছিল সোমবার রাতে?
সত্যনারায়ণবাবু জানান, শৌচাগারে যাওয়ার জন্য রাত আড়াইটে নাগাদ তিনি বাড়ির তালা খুলে বাইরে বেরিয়েছিলেন। ফেরার সময়ে হঠাৎ কয়েক জন দুষ্কৃতী ঘিরে ধরে তাঁকে। তাঁর কানে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে লুটপাটের চেষ্টা চালায় তারা। তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করলে মুখ চেপে ধরে তাঁকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আংটি-হার ছিনিয়ে নেয় জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী। তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি চিৎকার করলে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুনের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। তাঁর কানের দুল ও নাকছাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর পরে খাটে ঘুমিয়ে থাকা তাঁর মেয়ের গলা থেকে হার ছিনিয়ে নিতে গেলে অঞ্জলি চিৎকার করে পাশের ঘরের দরজা খুলে দেন। সেই ঘর থেকে সত্যনারায়ণবাবুর দাদা ঘরে ঢুকে দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করতে গেলে দাদাকে সরিয়ে নেন সত্যনারায়ণবাবু। তার মধ্যেই পড়শিরা জেগে যান। দুষ্কৃতীরা সত্যনারায়ণবাবুর মেয়ের গলা থেকে হার ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সময়ে ঘরের বাইরের রাস্তায় একটি বোমা মারে তারা।
পরদিন সকালে জানা যায়, ওই পাড়াতেই এক বৃদ্ধার ঘরে ঢুকে হার-সহ বেশ কিছু গয়না লুট করেছে মুখ ঢাকা কয়েক জন দুষ্কৃতী। তারা লুটপাট চালায় একটি দোকানেও। কয়েকটি দোকানে তালা ভাঙারও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা জেগে যাওয়ায় বোমা মেরে পালায় তারা।
এই ঘটনায় চরম আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। পলতা স্টেশন লাগোয়া ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার বিষয়ে কিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে। দুষ্কৃতীদের অবিলম্বেই গ্রেফতার করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy