বিদায়বোলায় রেনবো হোমে ফেলিসিটা। নিজস্ব চিত্র।
২২ বছর বয়স অবধি অনেকগুলি বাড়িতে থাকা হয়েছে মেয়েটির। কোনটা তাঁর আসল বাড়ি? জন্মস্থান শ্রীরামপুরের কলেজে পরিচারকদের খুপরি ঘরদোর, রাঁচীর মান্দারে পূর্বজদের গ্রামের ভিটে, ইলিয়ট রোডে লোরেটোর রেনবো হোম, না সাম্প্রতিক ঠিকানা সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের হস্টেল?
ভাবতে সময় নেবেন না ঝকঝকে নবীনা ফেলিসিটা কুজুর। “বাড়ি তো জীবনে একটিই হয় না। তবু কোনও একটিকে একান্তই নিজের বলে ভাবলে, আমাদের রেনবো হোমের হুটোপাটির ঘরটাই মনে পড়ে।” শনিবার বিকেলে মিডলটন রোয়ে লোরেটো হাউসের রেনবো হোমে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ওরাঁও জনজাতির কন্যা। জীবনের বাঁকে ফের নতুন ঠিকানা পেতে চলেছেন ফেলিসিটা। শ্রীরামপুর কলেজের হস্টেলে হবু ধর্মযাজকদের রাঁধুনে বাবা এবং ওই তল্লাটে গৃহপরিচারিকা মায়ের কন্যা স্বপ্নেও ভাবেননি, তাঁর সামনে এত দূর উড়ানের আকাশ ধরা দেবে। চেনা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে আমেরিকার ওহায়ো প্রদেশের ডেটন শহরের সিনক্লেয়ার কমিউনিটি কলেজে যোগ দিতে চলেছেন ফেলিসিটা।
সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজে সমাজতত্ত্বের ছাত্রী আমেরিকার কলেজে মিডিয়া, মার্কেটিং, সাংবাদিকতা, কমিউনিকেশন বিষয়ক এক বছরের পাঠক্রমের স্বাদ নেবেন। আমেরিকার বিদেশ দফতরের কমিউনিটি কলেজ ইনিশিয়েটিভ প্রোগ্রাম (সিসিআইপি)-এর আওতায় দেশ-বিদেশের সুবিধাবঞ্চিত ঘরের লড়াকু প্রতিভাবান ছেলে, মেয়েরা এক বছরের জন্য আমেরিকার কলেজে পড়ার অভিজ্ঞতার স্বাদ পান। এ বছর সিসিআইপি প্রকল্পের খবর পেয়েই ফেলিসিটার কথা মনে পড়েছিল লোরেটো রেনবো হোমগুলির অধিকর্তা সিস্টার প্রিয়াঙ্কা টপনো এবং সহ-অধিকর্তা বিশাখা সেনের। সুযোগ পেতে ফেলিসিটাকে ইংরেজির দক্ষতা জরিপ করার টিওইআইসি পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ইন্টারভিউয়ে ফেলিসিটা গড়গড়িয়ে বলেও এসেছেন, “আমেরিকায় যা শিখব, ফিরে এসে তা রেনবো হোমের মেয়েদের শেখাতে চাই।”
একদা ফেলিসিটার স্কুল ইলিয়ট রোডের লোরেটোর প্রধান শিক্ষিকা, অধুনা লোরেটো কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার এ নির্মলার মনে পড়ছে, ১১ বছর আগে মুখচোরা এই মেয়েই অঙ্ক, ইংরেজিতে কাঁচা ছিল! ফেলিসিটার ব্যক্তিত্ব এখন আমূল পাল্টে গিয়েছে। রেনবো হোমে থেকে লোরেটো স্কুলের এই ছাত্রী বারো ক্লাস পাশ করে সেন্ট জ়েভিয়ার্সে ঢুকেছেন। রেনবো হোমের কোঅর্ডিনেটর পূর্ণিমা দে দারুণ খুশি, “ফেলিসিটা সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের ১০-১২ জন বন্ধুকে বুঝিয়ে রেনবো হোমে নিয়ে এসেছিলেন! ওরা সারা দিন হোমের ছোটদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে।”
প্রথম প্রজন্মের স্কুলমুখী মেয়ে ফেলিসিটার আশা, আমেরিকার অভিজ্ঞতা তাঁকে দ্রুত চাকরি পেতে সাহায্য করবে। ছবি আঁকা, হাতের কাজে তুখোড় মেয়ে অ্যানিমেশনও শিখতে আগ্রহী। সেই সঙ্গে ভারতের রংবেরঙের মানুষের বৈচিত্র এবং তাঁর ভালবাসার শহর কলকাতার গল্প আমেরিকায় সবাইকে শোনাতে মুখিয়ে রেনবো-কন্যা। ফেলি-দিদিকে ‘টাটা’ করতে ব্যস্ত খুদে রেনবো-কন্যারা। মাকে ছেড়ে বিদেশযাত্রায় কিছু দুশ্চিন্তাও সঙ্গী পিতৃহারা কন্যার। “যাওয়ার আগে মা আমার পছন্দের ঝিঙের আচার করে খাওয়াল! মনখারাপের কথা আমরা কেউ কাউকে বলছিই না”, আজ, সোমবার প্রথম বিমানযাত্রার আগে লাজুক হেসে বললেন ফেলিসিটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy