মেট্রোর কাজের জেরে বাড়ির মেঝে এবং থামে গভীর ফাটল। নিজস্ব চিত্র।
মাটির ১৪ মিটার নীচে থাকা জলস্তর (অ্যাকুইফার)-এর অস্তিত্বই ধরা পড়েনি মেট্রোর ভূমি পরীক্ষায়। আর তার জেরেই এত বড় বিপর্যয়। আর চণ্ডী (৪৫০ টনের টানেল বোরিং মেশিন)-র গুঁতোয় সেই জলস্তর ভেঙে হু হু করে জল ঢুকে পড়ে সুড়ঙ্গে। ওই পরিস্থিতির জন্য আদৌ তৈরি ছিলেন না মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ররা। তাই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আগেই সুড়ঙ্গে ঢুকে যাওয়া পলি আর জলের স্রোতে নরম হয়ে যায় সুড়ঙ্গের উপরের অংশের মাটিও। বসে যেতে থাকে মাটির স্তর। তার জেরেই ভূপৃষ্ঠে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে থাকে বৌবাজারের একাধিক বাড়ির অংশ।
গোটা এলাকা যাতে ধসে না যায়, তা রুখতে রবিবার রাত থেকেই সুড়ঙ্গ খোঁড়া থামিয়ে রাসায়নিক দেওয়া বিশেষ ধরনের গোলা কংক্রিট টানেলের ভিতর থেকে এবং মাটির উপর থেকে অনেকটা ইঞ্জেকশন দেওয়ার কায়দায় মাটির গভীরে পাঠাচ্ছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য একটাই, রাসায়নিক দেওয়া ওই কংক্রিট যাতে ভুগর্ভে গিয়ে মাটির ধারণ-ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মাটি শক্ত করে রাখে, যাতে ভুগর্ভস্থ জলস্তরের সংস্পর্শে এসে মাটি গলে না যায়। প্রযুক্তির পরিভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় গ্রাউটিং।
সোমবার দফায় দফায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণের দায়িত্বে থাকা কলকাতা মেট্রো কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর ইঞ্জিনিয়র এবং প্রযুক্তিবিদরা নির্মল চন্দ্র স্ট্রিটের পূ্র্ব দিকে দুর্গা পিথুরি লেন, স্যাকরা পাড়া লেন বা চৈতন সেন স্ট্রিটের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন। মেট্রোর প্রযুক্তিবিদদের একটি অংশই এ দিন স্বীকার করে নেন, আগামী দেড় থেকে দু’দিন তাঁদের চ্যালেঞ্জ উপরের মাটি ধসে পড়া বন্ধ করা। এক ইঞ্জিনিয়র বলেন, ‘‘রবিবার রাত ১১টা থেকে পুরোদমে গ্রাউটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা মাটির উপর থেকে ছোট ছোট সুড়ঙ্গ করে রাসায়নিক মেশানো গোলা কংক্রিট ঢালছি। একই ভাবে সুড়ঙ্গের মধ্যে থেকে উপরের দিকে একই কায়দায় কংক্রিট দেওয়া হচ্ছে। এ ভাবে মাটির স্থায়িত্ব আনা হচ্ছে। যাতে ভূমিস্তরের স্বাভাবিক যে বিন্যাস তা অটুট থাকে।”
আরও পড়ুন: দফায় দফায় বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, বিজেপির বন্ধ ঘিরে উত্তেজনা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে
আরও পড়ুন: মেট্রোর ধাক্কা! বৌবাজারে ফাটল-ধস ১৮ বাড়িতে, ঘরছাড়া ২৮৪
এসপ্লানেড থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ২.৬ কিলোমিটার সুড়ঙ্গের অধিকাংশটাই ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোর আধিকারিকরা। দেড় মিটার চওড়া ১২৪০টি রিং ইতিমধ্যেই বসানো হয়ে গিয়েছে সুড়ঙ্গপথে। ওই সুড়ঙ্গ পথের পুরোটাতেই যেহেতু মাটির উপরে অনেক পুরনো এবং হেরিটেজ বাড়ি রয়েছে, সেই সঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, তাই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার আগে থেকেই যথেষ্ট সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের। তবে তাঁরা এ দিন স্বীকার করে নেন, ভূ-সমীক্ষায় কোথাও একটা বড়সড় গলদ থেকে গিয়েছিল। এক ইঞ্জিনিয়র স্বীকার করেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলস্তর ওই সুরঙ্গের আশেপাশে ছিল এমন তথ্য আদৌ আমাদের কাছে ছিল না।” তাই শনিবার দিনভর চণ্ডী সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় একবারও তাঁরা ভুগর্ভস্থ জলস্তর সামাল দেওয়ার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন তা নেননি। হঠাৎ করেই সেই জলস্তরের গায়ে ধাক্কা লেগে প্রবল বেগে জল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ররা এ দিন বলেন, ভূ স্তরের বিন্যাস বা বুনোট শক্ত হওয়ার পর জার্মানি থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে ফের ভূ সমীক্ষা করবেন। তাঁরা গোটা পরিস্থিতি দেখবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন দিল্লি এবং কলকাতার বিশেষজ্ঞরা। কারণ শিয়ালদহ পর্যন্ত যে ৮০০ মিটার সুড়ঙ্গের কাজ বাকি, সেই অংশও মাটির উপরে ঘনবসতিপূর্ণ। একই রকম গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে পুরনো বাড়ি। সেই পরিস্থিতিতে কী ভাবে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হবে, তা তাঁরা মাটির অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু তার আগেও, বৌবাজারের পায়ের তলার মাটি থিতু করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন মেট্রো কর্তৃপক্ষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy