এই সদ্যোজাতদের জন্যই খোঁজ চলছে মাতৃদুগ্ধের। নিজস্ব চিত্র।
জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মাকে হারায় যমজ দুই ভাই। সেই সদ্যোজাতদের ‘বুকের দুধ’ পান করিয়ে সুস্থ রাখার জন্য আপাতত অন্য মায়েদের খোঁজ শুরু হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন দাতার খোঁজে কাতর আবেদন জানিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন যমজ সদ্যোজাতের বাবা। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই সন্তানকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা অমর্ত্য সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘দুই সদ্যোজাতকে সুস্থ রাখতে সব থেকে জরুরি মায়ের দুধ। চিকিৎসকেরাও বলেছেন, আগামী দিনে যদি সেই দুধের ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে সব থেকে ভাল হবে। তাই সকলের সহযোগিতা চাইছি।’’
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় ৫ ডিসেম্বর রাতে তড়িঘড়ি এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়েছিল ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা অঙ্কিতা মিশ্রকে। ওই রাতেই তাঁর অস্ত্রোপচার করে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। পরিস্থিতি বদলে যায় পরদিন, ৬ ডিসেম্বর বিকেলে। অমর্ত্য বলেন, ‘‘আচমকা অঙ্কিতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব শেষ। জানা যায়, ‘পালমোনারি এম্বোলিজ়ম’ (ফুসফুসের রক্তনালির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধা) হওয়ায় ওর মৃত্যু হয়েছে।’’
আদতে মালদহের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে দীর্ঘ দিন ধরে কলকাতায় থাকেন অমর্ত্য। পাঁচ বছর আগে তাঁর ও অঙ্কিতার বিয়ে হয়। অমর্ত্য বলেন, ‘‘এসএসকেএমের স্ত্রী-রোগ বিভাগের এক শিক্ষক-চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিল অঙ্কিতা। ৫ ডিসেম্বর রবিবার হওয়ায় সরাসরি এসএসকেএমে গিয়েছিলাম। ওঁর চিকিৎসক ছুটিতে ছিলেন।’’ রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে খানিকটা আক্ষেপ রয়েছে পেশায় ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট অমর্ত্যের। তাঁর কথায়, ‘‘সিজ়ারের পরে ঠিক ভাবে দেখাশোনা করা হয়নি। এখন দুই একরত্তির জন্য কী ভাবে বুকের দুধ জোগাড় করব, সেটাই বড় চিন্তা।’’
সেই চিন্তা কাটাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য মায়ের ‘বুকের দুধ’ পেতে খোঁজ শুরু করেছেন অমর্ত্যেরা। ফেসবুকের সেই পোস্টে আবেদনে বলা হয়েছে, যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে মা মারা গিয়েছেন। এসএসকেএমে রয়েছে দুই শিশু। তাদের জন্য ‘বুকের দুধ’ দান করতে ইচ্ছুকেরা যেন সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। দুই সদ্যোজাতের ওজন ১ কেজি ৮০০ এবং ১ কেজি ৯০০ গ্রাম। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাদের সুস্থ রাখতে বুকের দুধ পান করানো প্রয়োজন। কিন্তু জন্মের পরে মা-হারা দুই সদ্যোজাতের তো সেই উপায় নেই।
অগত্যা সন্তানদের সুস্থ রাখতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভরসা রেখেছেন অমর্ত্য। আবেদনের নীচে নিজের ফোন নম্বর দিয়েছেন। যুবক জানাচ্ছেন, ওই পোস্ট দেখে কয়েক জন ‘মা’ ফোন করেছিলেন তাঁকে। কিন্তু তাঁদের কাউকে নির্বাচন করা যায়নি। যমজ সন্তানের বাবা বলেন, ‘‘তাঁদের কেউ অনেকটা দূরে থাকেন। আবার কেউ পাম্প করে সংগ্রহ করা দুধ অনেক দিন রেখে দিয়েছেন। কারও সন্তানের বয়স কিছুটা বেশি।
সর্বোপরি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো দাতা মিলছে না বলে কাউকে নির্বাচন করা যায়নি।’’ উপযুক্ত দাতা পাওয়া গেলে, তাঁকে বাড়ি থেকে আনতে কিংবা পাম্প করে সংগৃহীত দুধ নিয়ে আসতেও তাঁরা রাজি বলে জানাচ্ছেন অমর্ত্য।
শিশুর বয়সের উপরে তার মায়ের বুকের দুধের গুণে সামান্য পার্থক্য হয়। সেটি তেমন উল্লেখযোগ্য নয় বলেই মনে করেন শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বাইরের দুধের থেকে মায়ের দুধ অনেক বেশি উপযোগী। কারণ, তাতে মায়েরই বুকের দুধের গুণ পাবে ওই শিশুরা। সেখানে কোনও মায়ের সন্তানের বয়স চার অথবা ছ’মাস কিংবা একটু বেশি হলেও ক্ষতি নেই। তবে সংগৃহীত দুধ ঠিক মতো সংরক্ষণ হয়েছে কি না, সেটা দেখা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy