শর্বরী দত্ত
ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের মৃত্যুর ঘটনায় ফের তদন্ত চেয়ে লালবাজারের দ্বারস্থ হলেন তাঁর আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা। শুক্রবার বিকালে এই ঘটনার তদন্ত চেয়ে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) সন্তোষ পাণ্ডের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। তিনি বর্তমানে গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। এ দিন লালবাজারে যান শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের অধ্যক্ষ অনন্যা চক্রবর্তী, পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। শর্বরীর পরিবারের পক্ষ থেকে ছিলেন তাঁর ভাসুর জ্যোতির্ময় দত্ত, জা মীনাক্ষী দত্ত, বন্ধু সংযুক্তা এবং ভাগ্নী রাজলক্ষ্মী।
শর্বরীর আত্মীয়দের অভিযোগ, শর্বরী দত্তের যদি শৌচাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তবে তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালিতে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে কেন? প্রশ্ন উঠেছে, হৃদরোগে মৃত্যু হলে, এই ক্ষতচিহ্ন এল কোথা থেকে? আর শৌচাগারে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হলে, তাঁর দেহ শোওয়ার ঘরে সরানো হল কেন?
জ্যোতির্ময়বাবু আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, “মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই ঝুমা (শর্বরী) আমাদের বাড়িতে এসেছিল। বলল, ‘আমাকে কি ওরা মেরে ফেলবে? তা করবে না। আমিই তো ওদের ‘মিল্ক কাউ’। যত দিন কাজ করব ওরা আমায় বাঁচিয়ে রাখবে।’ কিন্তু শেষমেশ এই নির্মম ছেদ? এ তো মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ। আমি এই মৃত্যুর তদন্ত চাই।” যদিও গোটা অভিযোগই অস্বীকার করেছেন শর্বরীর ছেলে অমলিন।
আরও পড়ুন: ‘পথ হারাচ্ছে তদন্ত’, ‘হত্যা’ বলতে এত সময় নিচ্ছে কেন সিবিআই, প্রশ্ন সুশান্তের পরিবারের
প্রায় ২১ থেকে ২২ ঘণ্টা পর শর্বরীর দেহ উদ্ধার করেন তাঁর ছেলে অমলিন ও পুত্রবধূ কনকলতা। এত ক্ষণ তাঁরা কেন মায়ের খোঁজ নেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মা ও ছেলের সম্পর্ক বিশেষ ভাল ছিল না বলে অভিযোগ করেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যে তিনি গোয়েন্দা প্রধানকে চিঠিও লেখেন। এ বার সরাসরি শর্বরী দত্তের প্রতিবেশী, নাতি-নাতনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি পুলিশকে অনুরোধ করেছেন। শর্বরী দত্তের বন্ধু সংযুক্তা পুলিশকে জানান, কিছু দিন আগে শর্বরী, তাঁর ছেলে আর ছেলের বউ আমোদপুরে যান। সেখানে শর্বরীর পরিবারের সম্পত্তিও আছে বলে সংযুক্তা জানান। তাঁর অভিযোগ, এর পর ফিরে এসেই খারাপ ব্যবহার আরম্ভ করে ছেলে অমলিন। আর তার কিছু দিনের মধ্যেই শর্বরীর মৃত্যু হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আর মৃত্যুর মধ্যে কি কোনও যোগসূত্র আছে? পুলিশের সামনে এই প্রশ্ন তোলেন সংযুক্তা।
অন্য দিকে শর্বরীর ভাগ্নী রাজলক্ষ্মী পুলিশকে জানান, একেবারেই ভাল ছিলেন না তাঁর মামিমা। তিনি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, “আমার মামার বাড়িতে আমিই ঢুকতে পারতাম না। শর্বরী দত্তের ছেলে রাজা (অমলিন) আমায় ঢুকতে দিত না। মামিমাকে ওরা গাড়ি পর্যন্ত দিত না। ঠিকমতো খেতেও পেত না। মানসিক ভাবে অনেক অত্যাচার করেছে ওরা। এর বিচার চাই।”
আরও পড়ুন: ‘কৃষ্ণকলি’কে ছাপিয়ে প্রথম ‘মোহর’, একই স্থানে ‘রাণী রাসমণি’
পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের অধ্যক্ষ লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক বার শর্বরীদির পূত্রবধূ এসেছিলেন কিছু অভিযোগ নিয়ে। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, শাশুড়ির সঙ্গে পুত্রবধূর সম্পর্ক ভাল ছিল না। শর্বরীদির মৃত্যুর তদন্তের রিপোর্ট যাতে কমিশনের কাছে পৌঁছয় সেই কারণে আমরা সুয়োমোটো করেছি। এ রকম এক জন মানুষ যেন ন্যায্য বিচার পান।”
যুগ্ম পুলিশ কমিশনার জানান, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। মৃত্যুর তদন্ত যাতে যথাযথ হয় সে দিকে নজর রাখবেন।
যদিও এই মৃত্যুতে প্রাথমিক ভাবে কোনও অসঙ্গতি খুঁজে পাননি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। মৃত্যুর পরে কড়েয়া থানা এলাকার ব্রড স্ট্রিটে শর্বরী দত্তের বাড়ি যায় ফরেন্সিক দল। শর্বরী দত্তের ঘরের মেঝেয় পড়ে থাকা ফোঁটা ফোঁটা রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। তবে তদন্ত ও পরীক্ষার পর প্রাথমিক ভাবে পুলিশকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও ‘ফাউল প্লে’ বা অসঙ্গতি খুঁজে পাননি।
আরও পড়ুন: পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ, দুশ্চিন্তায় লোপা-রূপঙ্কর-অনুপম-ইমনরা
গোটা বিষয়টি সম্পর্কে অমলিন বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে আমার স্ত্রী কনকলতার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক ভাল হয়ে গিয়েছিল। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে টাকা ভরানো থেকে মায়ের রান্না করে দেওয়া, সব ও-ই করত। আমোদপুরে গিয়েও আমরা খুব আনন্দ করেছি। প্রয়োজন হলে লাভপুর থানার ওসি-কে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’’ অমলিনের দাবি, ‘‘আমার যুক্তির সপক্ষে বহু প্রমাণ আছে। মায়ের শ্রাদ্ধ হয়ে গেলে প্রেস কনফারেন্স করে সবাইকে এ বার জানাবো। ‘শূন্য’ নিয়ে আর্থিক অনিয়মের কথাও জানাবো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy