ইসরাফেলের খোঁজে লালবাজারে দাদা আসিফ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
দিন পাঁচেক ধরে ‘নিখোঁজ’ পরিবারের ছোট ছেলেটি। ইদের আগে তার জন্য কেনা নতুন জামাটা পড়ে রয়েছে তপসিয়ার নয়াবস্তির ঘরের কোণে। পরিবারের বাকিদের জন্য নমাজের কুর্তা পড়ে রয়েছে দর্জির কাছেই। ইদের আনন্দ, আয়োজন— কোনও কিছুই নেই বাড়িতে। গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়া ইসরাফেলের খোঁজে কখনও থানা, কখনও রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের অফিস, আবার কখনও লালবাজার ছুটে বেড়াচ্ছে তার পরিবার।
গত বুধবার বিকেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষে বন্ধুদের সঙ্গে গঙ্গায় গিয়েছিল বছর আঠারোর শেখ ইসরাফেল আলি। বাবুঘাটে স্নান করতে নেমে জলের স্রোতে তলিয়ে যায় ইসরাফেল ও তার বন্ধু মহম্মদ বিলাল। দিন দুয়েক পরে, শুক্রবার পশ্চিম বন্দর এলাকা থেকে উদ্ধার হয় বিলালের দেহ। কিন্তু সোমবার রাত পর্যন্ত ফেরেনি ইসরাফেল। ঘটনার সাত দিন পরেও ইসরাফেলকে হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন তার পরিজনেরা। আর তাই ইদের উৎসবের মাঝেও নিষ্প্রদীপ গোটা পরিবার।
ভাইয়ের কোনও খোঁজ মিলল?— এই প্রশ্ন নিয়ে সোমবারও স্থানীয় থানা থেকে লালবাজারের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন তার দাদা আসিফ। সঙ্গে এক আত্মীয়। লালবাজারের পাশাপাশি রিভার ট্র্যাফিকের অফিসে গিয়েও এক দফা অনুরোধ করে এসেছেন। অথচ অন্য বছরগুলিতে? ইদের আগের দিন দম ফেলার ফুরসত থাকত না গোটা পরিবারের। আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে গমগম করত গোটা বাড়ি। ইদের দাওয়াত ও উৎসবের প্রস্তুতিতে সবার সঙ্গে হাত লাগাত ইসরাফেলও। তাঁর দাদা আসিফের কথায়, ‘‘ছোট ভাইটাই তো এ বছর নেই। ইদে আয়োজন, খুশি আর থাকবে কী করে! কার জন্য হবে এ সব? শুধু নমাজই পড়তে যাব। আর কিছু হবে না এ বারের ইদে।’’ বলতে বলতে বুজে আসে তাঁর গলা। আসিফ আরও জানালেন, ইদের জন্য পরীক্ষা চলাকালীনই নতুন জামা কিনেছিল ইসরাফেল। বাবার কাছেও আরও কিছু আবদার করে রেখেছিল। ইদের দিন নমাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ও খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তার।
প্রতি বারের মতো এ বারেও রমজানের প্রথম থেকেই একটু একটু করে ইদের কেনাকাটা শুরু হয়েছিল আসিফদের। মাসখানেক আগে দর্জির কাছে মাপ দিয়ে ইদের নমাজের কুর্তা বানাতে দিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। ইদের আগেই সে সব নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু বুধবারের পরে বদলে গিয়েছে সবটা। আসিফের কথায়, ‘‘মা এখনও কেঁদে চলেছেন। বাবাও এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি। জিনিসগুলো নিয়ে আসার ইচ্ছেই হয়নি কারও।’’
ইদের আগে পরিবারে এত বড় আকস্মিক বিপর্যয় এখনও মানতে পারেননি ইসরাফেলের মা। ছেলের ফেরার আশায় আজও তাই প্রার্থনায় বসে মায়ের মন। আসিফ বললেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কী, ভাইকে ফিরে পাওয়ার আশা আমরা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। কিন্তু মা এখনও বুঝতে চাইছেন না। তিনি আজও অলৌকিক কিছুর প্রত্যাশায় আছেন। প্রতিদিন প্রার্থনা করে চলেছেন, যদি ছেলে ঘরে ফেরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy