পূর্ণিমাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।
কিডনির চিকিৎসা করাতে গিয়ে মেডিক্যাল রিপোর্টে ধরা পড়ল বড়সড় গলদ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রাক্তন অফিসার পূর্ণিমা সরকার কিডনির সমস্যায় দীর্ঘ দিন ধরেই ভুগছেন। ডায়ালিসিসের জন্য‘ভেনাস কালার ডপলার’ টেস্ট করাতে গিয়ে রিপোর্টে মারাত্মক ওই ভুল ধরা পড়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, বাঁ হাতের ওই পরীক্ষা করাতে। কিন্তু নর্থ সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার টেস্টের পর যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে পূর্ণিমাদেবীর বাঁ পায়ের ‘কালার ডপলার’ করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে!
চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা ভুল নয়, অপরাধ।ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করার দাবিও উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে পূর্ণিমাদেবীর স্বামী অতনু সরকার ওই ডায়গনস্টিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ প্রথমে রোগীর পরিবারের অভিযোগ শুনতেই চাননি। পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে নড়েচড়ে বসেন। এমনকি যে ভুল রিপোর্টটি অতনুবাবুকে দেওয়া হয়েছিল, সেটি তাঁর বাড়িতে গিয়ে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠান কর্তৃপক্ষ। সেখানে জানানো হয়, ওই ভুল আসলে ‘ক্ল্যারিক্যাল মিসটেক’!
বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস এটাকে ‘মিসটেক’ বলতে নারাজ। তিনি বলেন, “ডায়লিসিস করার জন্যে হাতে চ্যানেল করতে হয়। তবে তার আগে শিরা-ধমনিতে কোনও ক্লট রয়েছে কিনা, তা দেখতে কালার ডপলার টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে। পূর্ণিমাদেবীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এর মধ্যে পায়ের কালার ডপলার টেস্টের কোনও বিষয় থাকার কথা নয়। হাতের বদলে, যদি পায়ের রিপোর্ট আসে তাহলে বড় ভুল তো বটেই, এটাশাস্তিযোগ্য অপরাধও।”
রিপোর্টে বড়সড় গলদ ধরা পড়েছে।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হলেন জেপি নড্ডা
অতনু সরকার জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে দীর্ঘ দিন চাকরি করেছেন। অবসরের পরেও ‘সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হেল্থ স্কিম’ (সিজিএইচএস)-এ চিকিৎসা পরিষেবা পান। দিল্লি থেকে কলকাতায় ফেরার পর সিজিএইচএস-এর নথিবব্ধহাসপাতালে প্রথমে পূর্ণিমাদেবী যোগাযোগ করেন। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ওই সিজিএইচএস প্যানেলে থাকা বাইপাসের ধারের ওই বেসরকারি হাসপাতালে কিডনির চিকিৎসা শুরু করান। সেখানে কালার ডপলার টেস্ট করাতে বলা হয়। এর পর গত ডিসেম্বরে উল্টোডাঙার গৌরীবাড়ি বাসস্টপের কাছের ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারে (সিজিএইচএস প্যানেলে রয়েছে) বাঁ হাতের ‘কালার ডপলার’ টেস্ট করানো হয় তাঁর। তার পর হাতে মেলে ওই রিপোর্ট।অতনুবাবুর অভিযোগ, “সাধারণ মানুষের পক্ষে মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে কি বোঝা সম্ভব? এই ধরনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই তো ডাক্তারবাবুরা চিকিৎসা করেন। রিপোর্টই যদি ভুল থাকে, তাহলে তো ভুল চিকিৎসাও হবে রোগীর। মৃত্যুও হতে পারে।এর আগেও ওই সেন্টার এমন ভুল করেছে কি না কে বলতে পারে!’’
বেগতিক দেখে ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠান ডায়গনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: নির্ভয়া কাণ্ডের সময় নাবালক ছিল না, পবনের আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
কী ভাবে এমনটা হল? এ বিষয়ে জানতে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের ইনচার্জ অশোক ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি ডাক্তার পোদ্দার ভাল বলতে পারবেন। আপনাকে পরে জানাচ্ছি।” মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ফোন করে অশোকবাবু জানান, ডাক্তার পোদ্দারের সঙ্গে যোগযোগ করা যাচ্ছে না। তবে ভুল যে হয়েছে, সে বিষয়টি তিনি স্বীকার করে নেন।
নতুন করে কালার ডপলার টেস্টের পর ইতিমধ্যে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চারবার ডায়ালিসিস হয়েছে পূর্ণিমাদেবীর। এখন তাঁর চিকিৎসা চলছে ওই হাসপাতালেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy