এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ। ফাইল চিত্র।
জন্মগত শারীরিক অসুস্থতার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল ২৮ দিন বয়সি শিশুটির। সফল ভাবে অস্ত্রোপচার করে সেই একরত্তির পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন চিকিৎসকেরা। শুধু ওই শিশুটি নয়, গত তিন মাসে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিশুদের জটিল অস্ত্রোপচার চালু রেখে সাফল্যের ‘নিউ নর্মাল’-এ পা দিয়েছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগ।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এক সদ্যোজাতের পায়ুদ্বার ছিল না। ১৮ দিন বয়সে পেট ফোলা অবস্থায় জেলা হাসপাতাল থেকে তাকে নিয়ে এন আর এসের শিশু শল্য বিভাগে পৌঁছন অভিভাবকেরা। অতিমারির মধ্যে অস্ত্রোপচার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু শিশুটির পরিবারকে ভরসা জোগান শিশু শল্য বিভাগের চিকিৎসকেরা। সব বাধা কাটিয়ে ওই সদ্যোজাতকে সুস্থ করে পরিবারের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
গত তিন মাসে অস্ত্রোপচারের তালিকায় যেমন রয়েছে পায়ুদ্বার তৈরি না-হওয়ার সমস্যায় ভোগা শিশুরা, তেমনই রয়েছে এমন শিশু যার জন্মের সময়ে শ্বাসনালি-খাদ্যনালি জুড়ে ছিল। মানবদেহে বুক এবং পেটের মধ্যে একটি পর্দা থাকে। সেই পর্দা তৈরি হয়নি, এমন শিশুরও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এই সময়ের মধ্যে।
এন আর এস সূত্রের খবর, ২২ মার্চ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত শিশু শল্য বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৩৩২টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৫ জন শিশু অস্ত্রোপচারের সময়ে ২৮ দিনেরও কম বয়সি ছিল। সাধারণত, হাসপাতালের ওই বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি শিশুর অস্ত্রোপচার হয়। সেই নিরিখে গত তিন মাসে অন্তত ১৫০০টি অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। তবে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানান, শুধু সংখ্যার মাপকাঠিতে পরিস্থিতির বিচার করলে হবে না। অস্ত্রোপচারের পরে শিশুরা যাতে সংক্রমণের শিকার না-হয়, তার দিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হয়। এখন অবস্থা কিছুটা বদলালেও অতিমারির শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছিল চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও। এন আর এসের শিশু শল্য বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষেই কর্মরত এক জন সংক্রমিত হয়েছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে। এই আবহে তিনশোরও বেশি অস্ত্রোপচার কৃতিত্বের দাবি রাখে বলে মনে করছেন সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকেরা।
স্বাস্থ্য ভবনের শিশুদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ভারপ্রাপ্ত এক আধিকারিক জানান, এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে শিশুদের অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো এন আর এস এবং এস এস কে এম ছাড়া আর কোথাও সে ভাবে নেই। আলাদা করে নেই কোনও এস এন সি ইউ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট)। রাজ্যের প্রথম সরকারি হাসপাতাল হিসেবে এন আর এসে আগামী দিনে তৈরি হতে চলেছে এস এন সি ইউ সার্জারি। করোনার জেরে সেই প্রকল্পের কাজ আপাতত কিছুটা থমকে গিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিশুমৃত্যুর হার আরও কমবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের আর এক আধিকারিক।
এন আর এসের শিশু শল্য বিভাগের প্রধান কৌশিক সাহা জানান, যে সব শিশুদের করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। জটিল শারীরিক সমস্যা থাকা ওই শিশুদের জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করতে হয়, অপেক্ষা করানো যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘এখন অস্ত্রোপচারের আগে হাসপাতালে রোগীদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু সঙ্কটজনক শিশুদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ কোথায়! কাজেই ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, করোনার মধ্যেও একরত্তি ওই শিশুদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy