ঠেলাঠেলি: এসি কিনতে দোকানে ভিড়। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কিছু দিন আগেও যে সব দোকানে চাহিদা ছিল সপ্তাহে ২০টির মতো, প্রখর রোদের গুঁতোয় গত কয়েক দিনে সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে দিনে ২০০টি! শহরে প্রবল গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ভাবেই বাতানুকূল যন্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধিতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। কোথাও শেষ এসির ‘মডেল’, কোথাও আবার সদ্য কেনা এসি বাড়ি পৌঁছে দিতেই সাত-দশ দিন সময় চাইছেন দোকানিরা।
‘‘কোনও ভাবেই আট দিনের আগে এসি বাড়ি পৌঁছে দিতে পারব না! ১০ দিনই ধরুন। তার পরে বাড়িতে মিস্ত্রি গিয়ে এসি লাগাতে আরও দু’দিন। এসি কেনার পরে ডেলিভারি নিয়ে এই ক’টা দিন লাগবেই এখন। এ বার যদি মনে করেন, তা হলে এসি পছন্দ করুন, না-হলে কয়েক দিন পরে আসুন।’’— কসবার বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিক্রির দোকানে এসি কিনতে আসা এক ক্রেতাকে এ কথাই সাফ জানাচ্ছেন বিক্রেতা। কার্যত একই ছবি শহরের সর্বত্র। তাপপ্রবাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের ঘরে ঘরে বাতানুকূল যন্ত্র লাগানোর চাহিদা যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে বাড়িতে এসি পৌঁছে দেওয়া নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। ফলে এসি কেনার পরেও ‘ডেলিভারি’ দিতে সময় চাওয়া হচ্ছে কোথাও ৭ দিন, কোথাও ১০ দিনেরও বেশি। এমনকি, একাধিক দোকানে আবার এসির মডেলের উল্লেখ করে ‘স্টক নেই’ স্টিকারও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে এখনই কোনও আশার কথা শোনাতে পারছেন না বিক্রেতারা। উল্টে বলছেন, ‘‘এটা এখন আমাদের হাতে নেই।’’ কেউ আবার মজার ছলে বলছেন, ‘‘বৃষ্টি হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
রবিবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের একাধিক বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিক্রির দোকান ঘুরে জানা গেল, তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত কয়েক দিনে বাতানুকূল যন্ত্র বিক্রি বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। পাল্লা দিয়ে বিকোচ্ছে কুলার মেশিনও। বিক্রেতাদের দাবি, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর এসির চাহিদা কয়েক গুণ বেশি। আগে গরমকালে যে সব বড় দোকানে দিনে ৫০টি করে এসি বিক্রি হত, এ বার সেখানেই দিনে ১৫০-২০০টি এসি বিকিয়ে যাচ্ছে হু হু করে। এ দিন সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে একটি বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিক্রির দোকানে গিয়ে দেখা গেল, টিভি, মোবাইল-সহ অন্য সামগ্রী রাখার অংশ কার্যত শুনশান। অথচ দোকানের বাতানুকূল যন্ত্রের বিভিন্ন মডেল রাখার জায়গায় ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ছে! পরিস্থিতি সামাল দিতে হন্তদন্ত হয়ে তদারকি করতে হচ্ছে দোকানের ম্যানেজারকে। সাত দিনের আগে কোনও ভাবেই এসি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বলেই সাফ জানাচ্ছেন ম্যানেজার বিশ্বজিৎ সাউ। আরও জানালেন, যেখানে আগে সপ্তাহে কমবেশি ২০টি এসি বিক্রি হত, এখন সেই চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দিনে ২০০টি! তাঁর কথায়, ‘‘সবাই এসে এসির খোঁজ করছেন। কত তাড়াতাড়ি ডেলিভারি দেওয়া যাবে, তা নিয়ে জোরাজুরি করছেন। জিনিস পৌঁছে দেওয়ার ছেলেরা রাতদিন এক করে কাজ করছে। কিন্তু তার পরেও সাত দিনের আগে এসি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না।’’ গরম এ ভাবে আরও বাড়তে থাকলে অপেক্ষার দিন আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্বজিৎ।
একই ছবি কসবার রাজডাঙা, মানিকতলা, গিরিশ পার্কের দোকানগুলিতেও। রাজডাঙার একটি দোকানের কর্মীরা এসি বাড়িতে পৌঁছতে সময় চাইছেন ১০ দিন। এমনকি, একাধিক কোম্পানির বিভিন্ন মডেলও শেষ। সেই সব ক্ষেত্রে দোকানে মডেল উল্লেখ করে ‘স্টক নেই’ স্টিকারও লগাানো হয়েছে। ওই দোকানের ম্যানেজার বসন্ত ঝা বললেন, ‘‘গত তিন বছরেকোভিডের কারণে এসি বিক্রির পরিমাণ কমে গিয়েছিল অনেকটাই। তবে তার আগে গরমকালে দিনে ৫০টির মতো এসি বিক্রি হত। কিন্তু এ বারের চাহিদা সব কিছু ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমন কোনও বছর হয়নি। তাই গোলমাল এড়াতে বিল করার আগে সবটা ক্রেতাদের জানিয়ে দিচ্ছি। তার পরেও তাঁরা নিতে চাইলে তবেই বিল করা হচ্ছে।’’
মেয়ের সঙ্গে রাজডাঙার দোকানে এসি কিনতে এসেছিলেন বালিগঞ্জের মনোজ দাশগুপ্ত। বললেন, ‘‘বাড়ির আশপাশের কয়েকটি দোকানেও জানিয়েছে ১০ দিনের আগে ডেলিভারি দিতে পারবে না। তাই এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এখানেও তো দেখছি একই অবস্থা! মনে হচ্ছে ব্যাগ গুছিয়ে দিনকয়েকের জন্য উত্তরে পাড়ি দিতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy