এ ভাবেই সল্টলেকের পথ জুড়ে রয়েছেন হকারেরা। —ফাইল চিত্র।
৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে অস্থায়ী সব দোকান। না-হলে প্রশাসনই হকারদের সরিয়ে দেবে। সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় বিধাননগর পুর প্রশাসনের তরফে মাইকে এমনই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই কাজ করতে গিয়ে হকারদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এই ঘটনায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। শাসক দলের পতাকা নিয়ে রাস্তার উপরে শুয়ে পড়েন হকারেরা। পুলিশ ও পুরসভার কর্মীরা ফিরে আসেন। এলাকাবাসী জানান, তৃণমূলের পতাকা দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারী হকারদের হাতে।
হকার উচ্ছেদ নিয়ে এমন কাণ্ড দেখে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, হকার-সমস্যা কী ভাবে মিটবে, তা নিয়ে খোদ শাসক দলই দ্বিধাবিভক্ত। এ দিনের ঘটনায় ফের তার প্রমাণ মিলল।
যদিও খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘অবিলম্বে হকারদের সঙ্গে বিধায়ক এবং মেয়রকে কথা বলতে বলব। এ ভাবে দলকে ব্যবহার করা যাবে না। বিধাননগরকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। বিশ্বকাপের সময়ে যেমন হয়েছিল।’’ সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, বর্তমান সরকার কারও রুজি-রোজগার কেড়ে নেয় না। তাই হকারদের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা চলছে।
বিধাননগর পুরসভার অবশ্য দাবি, অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময়েই বলা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে রাস্তার ধারে এবং ফুটপাথ থেকে ঝুপড়ি বা অস্থায়ী দোকান সরানো হবে।
বিশ্বকাপের আগে এক দিকে করুণাময়ী থেকে বেলেঘাটা-বাইপাস মোড়, অন্য দিকে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল বরাবর ঝুপড়ি ও অস্থায়ী সব দোকান সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে পথে নেমেছিলেন হকারেরা। তাঁদের সমর্থনে একাধিক সংগঠনও পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। যদিও অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের পরে ফের হকারদের একটি অংশ ফুটপাথে বসে পড়ে ব্যবসা শুরু করেছেন।
হকার-সমস্যা নিয়ে শাসক দলের মধ্যেও বিভাজন দেখা গিয়েছে। বস্তুত, পুরসভার পদক্ষেপ নিয়ে বিধায়ক সুজিত বসু এবং বিধায়ক তথা মেয়র সব্যসাচী দত্তের অনুগামীদের মধ্যে কাজিয়া এখন তুঙ্গে। শাসক দলের একাংশের অভিযোগ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। এটা দলেরই সিদ্ধান্ত এবং নীতি।
তবে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরতে নারাজ বিধাননগর পুর প্রশাসন। মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপকে ঘিরে সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছিল। সে জন্য হকারদের সরানো হয়েছে। এ বার গোটা সল্টলেক সাজানোর নির্দেশ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গোটা বিধাননগরেই হকার সরানোর কাজ হবে।’’ কিন্তু তাঁর অভিযোগ, হকারদের সরানো হলেও ফের তাঁরা ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফুটপাথ দখলদারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত থেকে পুরসভা সরছে না।’’
যদিও পুরসভার কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, তাঁরা হকারদের উচ্ছেদ করছেন না। আপাতত তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীকালে যাতে সুশৃঙ্খল ভাবে তাঁরা ব্যবসা করতে পারেন, তার পরিকল্পনা চলছে।
সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ অবশ্য পুরসভার পাশে দাঁড়িয়েছেন। রীতিমতো পথে নেমে মিছিল করে তাঁরা পুর প্রশাসনের এই কাজকে সমর্থন করেছেন।
বাসিন্দাদের কথায়, যে ভাবে রাস্তায় রাস্তায় দোকান গজিয়ে উঠেছে, এখনই পদক্ষেপ না করলে আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। ফুটপাথ ছাড়াও বহু ফাঁকা জমি, এমনকী সরকারি জমিতেও ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে।
তবে হকারদের একাংশের দাবি, সরকারি প্রকল্পের নামে কার্যত স্থায়ী উচ্ছেদই করা হচ্ছে। মেয়র জানিয়েছেন, নতুন করে কোনও হকারকে বসতে দেওয়া হবে না। বিধায়ক সুজিত বসুকে একাধিক বার ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি।
সম্প্রতি পাঁচ নম্বর সেক্টরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ করা হবে না। যাঁরা দীর্ঘ দিন ব্যবসা করছেন, তাঁদের জন্য কোনও ফাঁকা জায়গা পেলে বাজার বা ওই ধরনের বিকল্প কিছু করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে পুনর্বাসনের নামে কোনও তোলাবাজিও বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy