বিতর্কের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত।
খাতায়-কলমে ক্লাসে উপস্থিতির নির্দিষ্ট নিয়মবিধি আছে সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটা প্রয়োগ করতে গেলেই অনেক ক্ষেত্রে রে-রে করে ওঠেন ছাত্রছাত্রীদের কোনও কোনও অংশ। প্রেসিডেন্সির মতো প্রতিষ্ঠানেও হাজিরা নিয়ে গোলমাল হয়েছে সাম্প্রতিক কালে। এ বার কড়াকড়ি করতে গিয়ে বিরোধিতা ও বিতর্কের মুখে পড়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। ক্লাস করতে হবে, নইলে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র মিলবে না বলে নির্দেশ জারি করেছে তারা। আর তাতেই বেধেছে বিতর্ক।
শিক্ষা শিবিরের মতে, ক্লাসে হাজিরার বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মশৃঙ্খলার অন্যতম আবশ্যিক অঙ্গ। এমনিতেই যাদবপুরের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ অনেক। তার উপরে দেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগে পড়ুয়াদের হাজিরার বিষয়টি খুবই ঢিলেঢালা বলে শিক্ষা সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এ বার কড়া অবস্থান নিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম ৭০ শতাংশ হাজিরা না-থাকলে বিভিন্ন ধরনের শংসাপত্র দেওয়া হবে না। পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থার বিষয়ে আপত্তি উঠেছে।
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে হাজিরার ছবিটি ঠিক কেমন?
বিভাগীয় প্রধান কেশব ভট্টাচার্য বুধবার জানান, এমন পড়ুয়াও আছেন, যাঁদের একটি সিমেস্টারে একটি নির্দিষ্ট পত্রে কোনও হাজিরাই নেই! এটা কোনও ভাবেই চলতে পারে না। তাই ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছ থেকেই পড়ুয়াদের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট, মেধাবৃত্তির জন্য শংসাপত্র, নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি, কোর্স শেষের শংসাপত্র নিতে হয়। কেশববাবু জানান, কয়েক দিন আগে এক পড়ুয়া এমনই একটি শংসাপত্র নিতে আসেন। দেখা যায়, যে-পত্রটি কেশববাবু পড়ান, ওই পড়ুয়া গত সিমেস্টারে তার একটিও ক্লাস করেননি! পড়ুয়াটি অন্য পত্রের ক্ষেত্রে কী করেছেন, সেই খোঁজ আর নেননি কেশববাবু। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এমন এক পড়ুয়াকে শংসাপত্র দেব কী করে?’’ এত গরহাজিরার প্রভাব কিছু কিছু পড়ুয়ার পরীক্ষার ফলেও পড়ছে বলে জানান তিনি। তাই সম্প্রতি বিভাগীয় বোর্ড অব স্টাডিজ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ ভাবে চলতে পারে না। সেই জন্য প্রথম বর্ষের ক্লাসের শুরুতেই চলতি সপ্তাহে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
পড়ুয়াদের একটি অংশ এই ধরনের ব্যবস্থার বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অভীক দাস এ দিন বলেন, ‘‘আমরা এই নির্দেশ মানব না। কারণ, ক্লাস ক’টা করলাম, তার উপরে আমাদের পড়াশোনা করা নির্ভর করে না। এই বিভাগ থেকেই ছাত্রছাত্রীরা বড় প্যাকেজের চাকরি পায়। আর হাজিরার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও নির্দেশই নেই। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জোর করে এই রকম নিয়ম পড়ুয়াদের উপরে চাপিয়ে দিতে চাইছে।’’
কেশববাবু অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘ইনাফ ইজ ইনাফ! এটা মোটেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ভাবে চলতে পারে না। ছাত্রেরা তাদের আপত্তির কথা জানালে আমরা বোর্ড অব স্টাডিজ়ে এই নিয়ে আলোচনা করব।’’
সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ক্লাসে ন্যূনতম ৭০ শতাংশ হাজিরার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা মানা হয় না। হাজিরা নিয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নতুন পদক্ষেপের কথা তিনি শুনেছেন। তবে বিস্তারিত ভাবে না-জেনে ওই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি সহ-উপাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy