প্রতীকী চিত্র।
‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান পাওয়ার জন্য আবেদন করার পোর্টাল খুলে দিল শিক্ষা দফতর। এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্কুলশিক্ষা দফতর জানিয়েছে, ৫ থেকে ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে শিক্ষকেরা অনলাইনে এই আবেদন করতে পারবেন। এই সম্মান পাওয়ার জন্য বেশ কিছু মাপকাঠিতে শিক্ষকদের উত্তীর্ণ হতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের একাংশের মতে, অতিমারির দু’বছর অর্থাৎ ২০২০ এবং ২০২১ সালে ওই সব মাপকাঠির কয়েকটিতে উত্তীর্ণ হওয়া খুবই কঠিন। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে গত দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, কার্যত কোনও ক্লাস হয়নি, সেখানে এই পুরস্কার দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্নও তুলছে কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন।
এই বিজ্ঞপ্তিতে যে সব মাপকাঠির কথা লেখা আছে, তার মধ্যে দু’টি রয়েছে— স্কুলের উন্নতিকল্পে শিক্ষকেরা কতটা অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছেন এবং গত দু’বছরে কোন কোন প্রকল্পে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের মতে, গত বছর পুরো এবং চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ পড়ুয়া স্কুলেই যেতে পারেনি। সুতরাং স্কুলের উন্নতিকল্পে তাঁরা কী ভাবে অনুপ্রেরণা দেবেন? দ্বিতীয়ত, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকদেরও বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণ হয়নি। এক স্কুলশিক্ষকের প্রশ্ন, ধরা যাক, কোনও শিক্ষক ২০১৯ সালে শিক্ষারত্নের জন্য আবেদন করেও তা পাননি। তিনি যদি ফের চলতি বছরে আবেদন করার কথা ভাবেন, তা হলে নতুন কোনও তথ্য তিনি কী দিতে পারবেন?
প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির মতে, “করোনার দু’বছর কার্যত কোনও ক্লাস নিতে পারেননি শিক্ষকেরা। বহু ছাত্র স্কুলে যেতে না পেরে অবসাদে ভুগছে। গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে স্কুলছুট। অনেক শিক্ষক ঠিক মতো পড়াতে না পেরে আত্মগ্লানিতে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষারত্ন দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?’’ ‘মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “গত বছর শিক্ষারত্ন পাওয়ার জন্য যে সব মাপকাঠি রাখা হয়েছিল, তাতে স্পষ্ট বলা ছিল, আমপানের ত্রাণ বিলি-সহ নানা কল্যাণমূলক কাজে শিক্ষকদের অবদান দেখা হবে। কিন্তু এ বার তেমন কোনও উল্লেখ নেই। অথচ এ বারও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস হয়েছে। করোনা-কালে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের ত্রাণ পৌঁছে দিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন অনেক শিক্ষক। এ বারের শিক্ষারত্ন পাওয়ার মাপকাঠিতে সেগুলির কথা বলা থাকবে না কেন?”
উল্লেখ্য, শিক্ষারত্ন পাওয়ার জন্য শিক্ষকদের নিজেদেরই আবেদন করতে হয়। এখানেও আপত্তি জানিয়েছেন বহু শিক্ষক। ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের মতে, বহু শিক্ষক আছেন যাঁরা ভাল কাজ করছেন, বহু ছাত্রকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা নিজে প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে চান। সে কারণে নিজে থেকে আবেদন করেন না। সৌদীপ্তবাবু বলেন, “জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে প্রতিটি জেলার শিক্ষকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকে। কারা শিক্ষারত্ন হবেন, তার প্রাথমিক নির্বাচন জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করতে পারে স্কুলশিক্ষা দফতর।’’ যদিও ‘পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের মতে, “এই পদ্ধতিতে শিক্ষারত্ন নির্বাচন একদম ঠিক। শুধু দেখতে হবে, নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ ভাবে হয় এবং শুধুমাত্র যোগ্যতার মাপকাঠিতেই হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy