প্রতীকী ছবি।
শহরের বুকে চলা হাওয়ালা কারবারের শিকড় আরও অনেক গভীরে। শহরে মাঝারি মাপের কয়েক জন ব্যবসায়ীকে সামনে রেখে টাকা পাচার করা হলেও, পিছনে রয়েছে বড় মাথা, এমনটাই অনুমান তদন্তকারীদের।
গত বৃহস্পতিবারই, বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে কয়েকশো কোটি টাকার হাওয়ালা কারবারের হদিশ পায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)। ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, সেই কারবারে নাম উঠে এসেছে শহরের কিছু ব্যবসায়ী এবং কয়েক জন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মীর।
ওই দিন ইডি-র ৩০ জনের একটি দল শহরের ন’টি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের কাজ করা সংস্থায় হানা দেয়। প্রথমে তাঁরা মধ্য কলকাতার পার্ক লেন, সদর স্ট্রিট এবং মার্কুইস স্ট্রিটের কয়েকটি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় সংস্থায় হানা দেন। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া নথির ভিত্তিতে বড়বাজারের কলাকার স্ট্রিটেও একটি সংস্থায় হানা দেন গোয়েন্দারা। সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং প্রায় ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা।
আরও পড়ুন: ভল্ট থেকে সাড়ে ৮৪ লক্ষ টাকা গায়েব করে দিলেন এই ব্যাঙ্ককর্মী!
উদ্ধার করা হয়েছিল প্রচুর নথি এবং কয়েকটি ডায়েরি। ইডি সূত্রে খবর, ওই ডায়েরিতে এ রাজ্যের প্রায় ৩৬ জন ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া গিয়েছে। যাঁরা ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে নিয়মিত হাওয়ালা পথে টাকা পাঠাতেন। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হাওয়ালা কারবারের প্রাথমিক তথ্য এসেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে। সেই সূত্র ধরেই সামনে আসে কয়েকশো কোটি টাকার হাওয়ালা কারবার। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন(ফেমা)-তে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছেন ইডি আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: প্রেমিকের স্বপ্নপূরণে বাড়িতেই কোটি টাকার ডাকাতি প্রেমিকার!
ঠিক কী ভাবে চলছে এই কারবার? উদ্ধার হওয়া নথি অনুযায়ী, শহরের কয়েকজন মাঝারি মানের ব্যবসায়ী বেনামে বিদেশি মুদ্রার মাধ্যমে কারবার চালাচ্ছেন। উদাহরণ দিয়ে এক তদম্তকারী বলেন,“ধরা যাক, কোনও এক ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর বা দুবাই থেকে কোনও জিনিস আমদানী করার কাগজ বা ইনভয়েস দেখিয়ে সেই কোম্পানিকে একটা বড় অঙ্ক দাম হিসাবে পাঠাল। আসলে কোনও কিছুই আমদানি করা হয়নি। ভুয়ো কাগজে লেনদেন। সেই টাকা দুবাই বা সিঙ্গাপুরে পৌঁছলে সেখানে কোনও দালাল সেই টাকার একটি অংশ কমিশন হিসাবে কেটে রেখে বাকি টাকা ওই ব্যবসায়ীকে ফের ফেরত পাঠিয়ে দিল। তবে এবার আর সোজা পথে নয়। এবার হাওয়ালা পথে। আর সেই হাওয়ালা লেনদেন চলছে বৈদেশিক মুদ্রায়।”
আরও পড়ুন: কেমন ফাঁস দিলে কেমন দাগ? রজত খুনের আগে ইন্টারনেটে সার্চ করেছিলেন অনিন্দিতা
ইডির তদন্তকারীদের দাবি, এ রকম বিভিন্ন পদ্ধতিতে টাকার লেনদেন চলছে বেআইনি ভাবে। তবে তদন্তকারীরা বাজেয়াপ্ত নথি দেখে তাজ্জব। এক আধিকারিক বলেন,“প্রতি মাসে কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন চলছে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে যে মাঝারি মাপের ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে, তাঁরা এত টাকার লেনদেন করতে পারেন বলে সন্দেহ আছে।” ইডি আধিকারিকদের সন্দেহ পেছনে আরও বড় মাথা রয়েছে যাঁরা ওই ব্যবসায়ীদের সামনে রেখে হাওয়ালায় টাকা পাচার করছে বা হাওয়ালা পথে টাকা নিয়ে আসছে বিদেশ থেকে।
তদন্তকারীরা আরও অবাক হয়েছেন, বাজেয়াপ্ত ডায়েরিতে কয়েক জন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মীর নাম দেখে। ইডি সূত্রে খবর, এর মধ্যে কয়েক জন পুলিশ কর্তাও আছেন। এঁদের নাম কী ভাবে এল ওই ডায়েরিতে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, অধিকাংশ লেনদেন হয়েছে সিঙ্গাপুর এবং দুবাইতে। সেখানে কোথায় টাকা পাঠানো হয়েছে এবং কার টাকা সেই সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy