ফাইল চিত্র।
ষষ্ঠী আর সপ্তমীতে যে নাজেহাল অবস্থা হল, তার পরে অষ্টমীর অঞ্জলিতে কী হবে? দিনভর বেপরোয়া জনসমুদ্রের চেহারা দেখে মঙ্গলবার রাত থেকে এই আলোচনাই ঘুরপাক খেয়েছে শহরের বহু পুজো উদ্যোক্তা এবং পুলিশকর্মীর মধ্যে। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, এ বছর মানুষ এতটাই বেপরোয়া যে, চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভিড় দেখা ছাড়া কোনও উপায় থাকছে না। এক পুলিশকর্তা আবার অকপটে বলে দিলেন, ‘‘ভিড়ের বিপদ জানা সত্ত্বেও প্রশাসন যদি সব বিধিনিষেধ শিথিল করে দেয়, মানুষকে পথে বেরোতে উৎসাহিত করে, তা হলে পুলিশই বা কড়া হবে কী করে? বুঝিয়ে কাজ উদ্ধারই তো তখন একমাত্র পথ!’’
সেই কাজ উদ্ধার যে আদতে শুধু মণ্ডপ পাহারায় দাঁড়িয়ে মানুষ গোনা, তা ফের মালুম হয়েছে সপ্তমীর সন্ধ্যায়। গত কয়েক দিনের তুলনায় আরও বেশি সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন এ দিন। সন্ধ্যা যত গড়িয়েছে, ততই
জন-সমুদ্রের চেহারা নিয়েছে রাজপথ। দড়ি দিয়ে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেও সুবিধা হয়নি শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মতো ভিড়ের নিরিখে শোরগোল ফেলা পুজো মণ্ডপের সামনে। একই অবস্থা ছিল অরবিন্দ সরণি, রবীন্দ্র সরণি বা
রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের। রবীন্দ্র সরণিতে এ দিন থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলেও মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। শ্যামবাজার, হাতিবাগান এবং বাগবাজার চত্বরে আবার দেখা গিয়েছে, ফুটপাত গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দিলেও ভিড়ের পথে নেমে আসা আটকানো যাচ্ছে না।
সব চেয়ে বেশি ভয় ধরিয়েছে একডালিয়া এভারগ্রিন বা দেশপ্রিয় পার্কের সামনের ভিড়। সেখানে অনেকেরই দূরত্ব-বিধি মানার বালাই তো ছিলই না, মাস্ক পরে থাকার ন্যূনতম দায়িত্ববোধটুকুও দেখা যায়নি! ষষ্ঠীর সন্ধ্যার মতো সপ্তমীতেও দেশপ্রিয় পার্কে বেশ কিছু ক্ষণ দর্শকের প্রবেশ বন্ধ রাখতে হয় পুলিশকে। কিন্তু তার জেরে মণ্ডপের বাইরে ভিড় বাড়তে থাকায় ফের তা খুলে দিতে হয়। চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সমীর ঘোষ বললেন, ‘‘কী ভাবে কী সামলাব, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। মণ্ডপের ভিতরে লোক ঢুকতে না দেওয়ায় রাস্তায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না।’’
সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা কিংশুক মৈত্র আবার বললেন, ‘‘অন্যান্য বারের থেকে আড়াই গুণ বেশি স্বেচ্ছাসেবক নামিয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। আমাদের পুজোর মহিলা ঢাকিদেরও আমরা ঢাক বাজাতে বারণ করছি, যাতে তাঁদের দেখতে ভিড় না হয়ে যায়।’’ ৬৬ পল্লির পুজোকর্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় আবার জানালেন, ভিড় এড়িয়ে গাড়িতে বসে প্রতিমা দর্শনের জন্য গত বছর থেকেই তাঁরা ‘ড্রাইভ ইন দর্শন’ শুরু করেছিলেন। গত বার এই উদ্যোগ সফল হলেও এ বার এত বেশি মানুষ রাস্তায় নেমেছেন যে, ‘ড্রাইভ ইন দর্শন’ তো দূর, রাস্তায় গাড়ি চালানোরই উপায় নেই!
এ সবের থেকেও বেশি চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ, অষ্টমীর অঞ্জলি। আদালতের নির্দেশ মেনে করোনার দু’টি ডোজ় হয়ে যাওয়া লোকজনকে কী ভাবে অঞ্জলি দেওয়ানো যায়, তা-ই ভেবে পাচ্ছেন না বহু উদ্যোক্তা। কুমোরটুলি সর্বজনীনের পুজোকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘গঙ্গার ধারের পুজো হওয়ায় প্রতি বছরই বহু মানুষ অষ্টমীর সকালে গঙ্গাস্নান সেরে আমাদের মণ্ডপে অঞ্জলি দিয়ে ফেরেন। এ বার তাঁদের কী বলব?’’ বাগবাজার
সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর পুজোকর্তা গৌতম নিয়োগী বললেন, ‘‘এই জটিলতার জন্যই গত বারের মতো এ বারও আমরা অঞ্জলি আর সিঁদুরখেলা বন্ধ রাখছি। আমাদের পুজোয় ২৫ জন করে প্রবেশ করিয়ে অঞ্জলি দেওয়ানো অসম্ভব।’’
সপ্তমীর সন্ধ্যায় পথের পরিস্থিতি দেখতে বেরোনো কলকাতা পুলিশের এক যুগ্ম কমিশনারের মন্তব্য, ‘‘গত দু’দিন যা হয়েছে, সেই সব কিছুকে মনে হচ্ছে ছাপিয়ে যাবে অঞ্জলির ভিড়। একটাই স্বস্তি, অঞ্জলির বিষয়টা পুলিশের নয়, পুজো কমিটির উপরেই বর্তাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy