Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

নবমীর সব পথ মিশল উত্তর শহরতলিতে

বিষয়—‘সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের ঠাকুরের গায়ে সোনার গয়না, না কি সোনার শাড়ি?’ ওই দলের এক জন শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠে আকাশে মেঘ দেখে একটু চিন্তাই হয়েছিল। কিন্তু তা বলে তো আর ঠাকুর দেখা বন্ধ রাখা যায় না।’’

জনারণ্য: বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের মণ্ডপে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জনারণ্য: বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের মণ্ডপে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৩
Share: Save:

সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার!

ভাবগতিক সুবিধার নয় দেখে কিছুটা সংশয়ে পড়েছিল পুজোর শহর। কিন্তু, সোমবার নবমীর বেলা গড়ালেও ঠাকুর দেখার রুট ম্যাপে একেবারেই জল ঢালতে পারেনি ‘বর্ষাসুর’। তাতেই স্বস্তি পেয়েছেন দর্শনার্থীরা। আর হবে না-ই বা কেন? নবমী নিশিই যে শারদোৎসবের বিদায়-ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। তাই সেই দিনটা কেউই চাননি ঠাকুর দেখার আনন্দে ফাঁক রাখতে।

সে কারণে আকাশ মেঘে ঢেকে থাকলেও দুপুর থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল পুজো-জনতা। অনেক আগে থেকেই হাওয়া অফিস আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, এ বছর বৃষ্টি ভাসাতে পারে পুজোর ময়দান। আর সেই আশঙ্কাতেই মোটামুটি তৃতীয়া থেকে ঠাকুর দেখার ময়দানে নেমে পড়েছেন লোকজন। তবে অধিকাংশই আগেভাগে দেখে নিয়েছেন দক্ষিণের মণ্ডপগুলি।

তাই এ দিন বিকেল থেকেই ভিড় বেড়েছে উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলিতে। বারাণসীর ঘাটে গঙ্গারতি দেখার আমেজ নিতে বিকেলে জগৎ মুখার্জি পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাওড়ার সনৎ ঘোষ। বললেন, ‘‘সন্ধ্যা নামলেই লাইনে দাঁড়াব। ওই সময়ে আরতিটা দেখা যাবে।’’ একই রকম ভাবে ভিড় এগিয়েছে বাগবাজার, আহিরীটোলা, কুমোরটুলির দিকে।

এ দিন বিকেলে আবার বৌবাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছিল কলেজপড়ুয়াদের একটি দল। বিষয়—‘সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের ঠাকুরের গায়ে সোনার গয়না, না কি সোনার শাড়ি?’ ওই দলের এক জন শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠে আকাশে মেঘ দেখে একটু চিন্তাই হয়েছিল। কিন্তু তা বলে তো আর ঠাকুর দেখা বন্ধ রাখা যায় না।’’ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, কলেজ স্কোয়ারের পুজো মণ্ডপ দেখে দর্শনার্থীরা সেন্ট্রাল বা মহাত্মা গাঁধী মেট্রো স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে চলে গিয়েছেন শোভাবাজার, দমদম, বেলগাছিয়া, নোয়াপাড়ায়। আর একটি দল আবার পৌঁছে গিয়েছে দমদমের গিকে। এ দিন সন্ধ্যায় শ্রীভূমির মণ্ডপে ঢোকার লাইনে দাঁড়িয়ে চন্দননগরের শ্রীতমা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এ বার আগেভাগে দক্ষিণের পুজো দেখে নিয়েছি। কিন্তু শ্রীভূমির পুজোটা না দেখলে ঠাকুর দেখার মনটা ভরে না।’’

বরাহনগরের নেতাজি কলোনি লো-ল্যান্ডের পুজোয়। নিজস্ব চিত্র

কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভিড় টেনেছে উত্তর শহরতলিও। নবমীর সকালে আকাশের মুখ যতই ভার থাকুক না কেন, বিকেল থেকে ভিড়ের চাপে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বি টি রোড। সিঁথির মোড়ে ট্র্যাফিকের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘লোকজনের রাস্তা পারাপার করার জন্য যখন সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে, মনে হচ্ছে জনসমুদ্রের ঢেউ বি টি রোডে আছড়ে পড়ছে।’’ বিকেল থেকেই লোকের ভিড়ে কার্যত মাছি গলার জায়গা ছিল না বরাহনগর থানার পিছনে নেতাজি কলোনি লো-ল্যান্ডের পুজোয় ঢোকার রাস্তায়। আবার নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে নেমে পুরো ভিড়টাই গিয়েছে ন’পাড়া দাদাভাই সঙ্ঘে।

অন্য দিকে, টালা সেতু বন্ধ থাকলেও রাত বাড়তেই বি টি রোড ধরে ভিড় এগিয়েছে বেলঘরিয়া, সোদপুর, পানিহাটির দিকে। দুপুর থেকে বেরিয়ে উত্তর কলকাতা, বাগবাজার ঘুরে সন্ধ্যায় বরাহনগরে এসেছিলেন বারাসতের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর রায়। তাঁর কথায়, ‘‘শহরকে যে টেক্কা দিতে শহরতলিও প্রস্তুত, তা বোধ হয় এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না।’’ যে ছবি দেখা গিয়েছে বন্ধুদল স্পোর্টিং ক্লাবে। ঘড়ির কাঁটা যখন রাত ১১টা ছুঁইছুঁই, তখনও সেখানে কয়েক হাজার লোকের ভিড়।

তবে দক্ষিণ কলকাতার দিকে সকালে ভিড় কম থাকলেও বেলা গড়াতে সেখানেও জনতার ঢল নেমেছিল। সব থেকে বেশি ভিড় ছিল কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে। সন্ধ্যায় সেই ভিড় বাড়ে কয়েক গুণ। অধিকাংশই কালীঘাট মেট্রোয় নেমে পায়ে পায়ে পৌঁছে গিয়েছেন দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা, হিন্দুস্থান পার্ক আর ম্যাডক্স স্কোয়ারে। সেখান থেকে কিছুটা এগিয়ে একডালিয়া এভারগ্রিন, সিংহী পার্কের মণ্ডপেও ভিড় ছিল যথেষ্ট। পুজো-বাহিনীর দাপট থেকে বাদ ছিল না চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সঙ্ঘ কিংবা বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের মণ্ডপও।

সকলের অন্তরে ছিল একটাই প্রার্থনা, ‘যেও না নবমী নিশি...’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2019 Festival North Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy